জীবনের বেশির ভাগ সময় এখন স্মার্টফোনের নিয়ন্ত্রণে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সচল থাকে এ যন্ত্র। তাই খুঁটিনাটি সমস্যা তৈরি হয়। অযাচিত ফোনকল, ব্যাটারি, চার্জ, গরমে অতিরিক্ত তাপে যন্ত্রটি যন্ত্রণার মুখোমুখি করে। সমস্যার ধরন বুঝে রয়েছে সমাধান। এমন কিছু সমস্যায় রয়েছে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
স্মার্টফোন গ্রাহক প্রায়ই বিশেষ যে সমস্যায় পড়েন, তা হলো হঠাৎ করেই ডিভাইস গরম হয়ে যাওয়া। কয়েকটি কারণে এমনটি হতে পারে। টানা কয়েক ঘণ্টা ভিডিও গেম খেললে বা অনেক সময় নিয়ে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুললে ফোন তাৎক্ষণিক গরম হতে পারে।
অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়া সার্ফিং করার সময়ে ফোন গরম হওয়ার ঘটনা ঘটে। ডিভাইস গরম হওয়া নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিভাইস গরম হলে প্রথমেই এতে সচল সব ধরনের অ্যাপ্লিকেশন একসঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, বিশেষ কোনো অ্যাপ্লিকেশন চলতে অধিক মাত্রায় শক্তির প্রয়োজন হয়। তখন সে শক্তির প্রয়োজন পূরণে ব্যাটারি থেকে বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি নেওয়া হয়। ফলে ডিভাইস দ্রুত গরম হয়ে যায়।
ঠিক কোন অ্যাপ্লিকেশনের কারণে এমনটি ঘটছে, তাৎক্ষণিক গ্রাহকের পক্ষে তা খুঁজে বের করা বেশ দুরূহ কাজ। এমন কারণে সব অ্যাপ্লিকেশন একসঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, ফোন গরম হলে ব্যাককাভার দ্রুত খুলে ফেলতে হবে। ডিভাইসকে ‘ডার্ক মোডে’ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। সবচেয়ে ভালো হয় কিছুক্ষণের জন্য ডিসপ্লে বন্ধ করে ডিভাইসকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া। কারণ, যখন ডিসপ্লে সচল থাকে, ওই সময়ে সবচেয়ে বেশি শক্তি ক্ষয় হয়।
স্মার্টফোন গ্রাহককে সব সময়ের জন্য ‘ব্যাটারি সেভার’ মোড অন রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ এমন মোডে ফোনের প্রসেসর অনেকাংশে আন্ডার পাওয়ার হয়ে পড়ে। কারণ, সব কাজে প্রসেসরের পুরো শক্তির প্রয়োজন হয় না। সামান্য ব্যাটারি শক্তিতেই ঠিকঠাক কাজ চালিয়ে নিতে পারে ফোনের প্রসেসর। বলতে গেলে, বাড়তি শক্তি সরবরাহ না বাড়িয়ে, শক্তি সঞ্চয় করে ব্যাটারি গরম হওয়া থেকে বিরত রাখে ব্যাটারি সেভার মোড।
যদি গ্রাহকের ফোনের ব্যাটারি পুরোনো হয়, তাহলে তার কর্মক্ষমতা অনেকাংশে কমে গিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। উল্লিখিত পদ্ধতি তখন কোনো কাজেই আসবে না।
ব্যাটারি সব সময় গরম থাকলে তা হালকাভাবে না নিয়ে পরামর্শ মেনে চলা শ্রেয়। তাতে ডিভাইস ঠান্ডা না হলে অবশ্যই পরিষেবা কেন্দ্রের সহায়তা নিতে হবে। গরম চলছে চারদিকে। কমবেশি সবার ডিভাইস উত্তপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই সতর্কতার বিকল্প নেই।
সারাদিনে কিছু সময়ে, এমনকি মাঝরাতে নানা ধরনের অচেনা নম্বর থেকে কল আসার উৎপাত বেড়েই চলেছে। অনেক সময় ভুলে বা হুট করে এমন ফোনকল রিসিভ হয়ে যায়। ইদানীং প্রায় প্রতিদিনই অনেকে এমন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, যা ক্রমে বিরক্তির কারণ আর শঙ্কা তৈরি করছে। এমন কল রিসিভ হয়ে গেলে কী করবেন, তা জানা প্রয়োজন। অপ্রত্যাশিত এমন কল এড়াতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ মেনে চলা জরুরি। প্রথম কথাই হচ্ছে, অচেনা নম্বর থেকে কল এলে তা এড়িয়ে যাওয়া শ্রেয়। যে নম্বর থেকে বারবার কল আসছে, তা ব্লক করা যেতে পারে। নিরাপদ হতে ফোন অ্যাপের সেটিংসে গিয়ে ‘ব্লক কলস ফ্রম আনআইডেন্টিফাইড কলারস’ অপশনটি সক্রিয় করে নিতে হবে।
অন্যদিকে স্প্যাম-ব্লকিং অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। নিরাপত্তা সংস্থা অ্যাভাস্ট সূত্রে জানা গেছে, স্প্যাম-ব্লকিং সব অ্যাপ্লিকেশন স্ক্যাম কল, রোবোকল ও অবাঞ্ছিত কল আসা বন্ধ করতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে।
ভয়েস মেইলে বার্তা প্রেরণ করা, অর্থাৎ পরিচিত নম্বর থেকে যদি সন্দেহজনক কেউ ফোন করে, তবে ভয়েস মেইলে তাকে বার্তা প্রেরণ করা যেতে পারে। যার নম্বর থেকে ফোন করা হচ্ছে, তিনি বুঝতে পারবেন ওই নম্বরটি প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আবার সংশ্লিষ্ট টেলিকম সংস্থায় যোগাযোগ করা যেতে পারে। যদি কোনো সন্দেহজনক বা অজানা ফোনকল আসে, তবে টেলিকম সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে দৃশ্যমান নম্বরটি ব্লক করার অনুরোধ করা যেতে পারে। ঝুঁকি এড়াতে পুলিশে রিপোর্ট করে রাখা ভালো। কোনো অজানা ব্যক্তি বারবার ফোনকলে বিরক্ত করে, তবে পুলিশে রিপোর্ট করা যেতে পারে।
যদি এমন ঘটনার সূত্রপাত হয়, তাহলে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। নিজের ব্যবহৃত সব অ্যাপের নিরাপত্তা যাচাই করে নিতে হবে। কোনো অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে তার সঙ্গে কথা বলার আগে ঠিকঠাক পরিচয় যাচাই-বাছাই করে নেওয়া ভালো।
বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন, বিশেষ কৌশলে স্ক্যামার তার ফোনকল বহির্বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে করবে। টার্গেটকে বিভ্রান্ত করাই এখানে মূল লক্ষ্য। রিসিভ হলেই না বুঝে পড়ে যেতে পারেন স্ক্যাম ফাঁদে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতন চেয়ে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে ৪১ বছর বয়সী এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রোববার লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে গ্লাসগোগামী একটি ফ্লাইটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি লন্ডনের কাছে বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরের বাসিন্দা।
অভয় নায়েক ইজিজেট ফ্লাইটে হামলা ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার মতো আচরণ করেছেন। তিনি উড়োজাহাজে বোমা ফাটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি মাঝ আকাশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে চিৎকার করেছিলেন, যা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
ওই ঘটনার একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, অভয় নায়েক স্লোগান দিচ্ছেন, ‘আমেরিকার পতন হোক’, ‘ট্রাম্পের পতন হোক’। এরপরই তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ (যার অর্থ ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’) বলে স্লোগান দেন। পরে দুজন ব্যক্তি তাঁকে কাবু করে উড়োজাহাজের মেঝেতে ফেলে দেন।
ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি কোন ধর্মের অনুসারী, সে ব্যাপারে তাৎক্ষিণক কিছু জানা যায়নি।
ওই ব্যক্তির এমন আচরণের পর পাইলটরা বাধ্য হয়ে গ্লাসগোতে জরুরি অবতরণ করেন। সেখানেই স্কটিশ পুলিশ এসে অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করে।
স্কটল্যান্ডের পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘গত রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে গ্লাসগোতে পৌঁছানো ইজিজেটের একটি ফ্লাইটে এক ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, ঘটনাটি এককভাবে ওই ব্যক্তির, অন্য কেউ জড়িত নন। যেসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে, সেগুলো সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।’
উড়োজাহাজ অবতরণের পরই অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
ইজিজেট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বেপরোয়া আচরণের কারণে একজন যাত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে তদন্তে সহযোগিতা করছি।’
পাইসলি শেরিফ আদালতে হাজিরার সময় অভয় নায়েক কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁকে বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে তাঁকে আবার আদালতে হাজির করা হবে।