দেশের ব্যাংকিং খাত দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্বল তদারকি ও নানা আইনি জটিলতার কারণে সংকটে আছে। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকিং খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একীভূত করা হবে পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে আগের সংকটের রেশ ধরেই ঋণ খেলাপি হওয়ার পাশাপাশি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে মন্দ ঋণ। শুধু মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, তা নয়; এসব মন্দ ঋণ আদায়ের সম্ভাবনাও খুবই কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণ খেলাপির ৮১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ সময়ে ঋণ খেলাপির পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। উল্লিখিত সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মার্চ মাস শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা, যা সরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ খেলাপির ৯০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এ সময়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা।

মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা, যা এসব ব্যাংকের ঋণ খেলাপির ৭৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ খেলাপি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১৩ লাখ ১০ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্দ ঋণ ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি নষ্ট করে দেয়। শুধু তা-ই নয়, মন্দ ঋণ সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। ব্যাংকগুলো রাজনৈতিক প্রভাবে যোগ্যতা, সক্ষমতা যাচাই না করেই ঋণ দিয়েছে, যা আদায়ের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এসব মন্দ ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলো পদক্ষেপ নিলেও আদায় হয় খুবই কম। বেশিরভাগ মন্দ ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা নেই।

তারা বলছেন, ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও কঠোর যাচাই-বাছাই নিশ্চিত করতে হবে। যারা ঋণ খেলাপি, তাদের তালিকা প্রকাশ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে আইন সংস্কার করে মন্দ ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি ও তদারকি জোরদার করাও জরুরি। অন্যথায়, ব্যাংকিং খাতের আর্থিক ভিত্তি আরো দুর্বল হয়ে পড়বে, দেশের অর্থনীতি চাপে পড়বে।

ঢাকা/এনএফ/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঋণ খ ল প র র পর ম ণ ব তরণ সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

লাকসামে অস্ত্রের মুখে এতিমখানার ৫ গরু লুট, আহত ৮

কুমিল্লার লাকসামে একটি এতিমখানার খামার থেকে গত শুক্রবার পাঁচটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাত দল। এ সময় তাদের হামলায় মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আটজন আহত হন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করেছে।

গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ভোরে উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসা ও এর সংলগ্ন এতিমখানার খামারে ঘটনাটি ঘটে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু লুট করেছিল ডাকাতরা।

আরো পড়ুন:

খুলনায় বিএনপি নেতার অফিসে বোমা-গুলি, শিক্ষক নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের হামলা: গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু

সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

এলাকাবাসী জানান, মাদরাসার আয় এই খামারের মাধ্যমে হয়। তিন মাসের ব্যবধানে দুই দফা ডাকাতি হওয়ায় শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। খামারের বড় গরুগুলো লুট হয়ে যাওয়ায় এক পাশ ফাঁকা পড়ে আছে। বর্তমানে খামারে ১১টি গরু অবশিষ্ট রয়েছে।

খামারের সামনে পড়ে আছে ডাকাত দলের ব্যবহৃত তুষের বস্তা, যা দিয়ে গরুগুলো পিকআপ ভ্যানে তোলে তারা। গরু উদ্ধার এবং ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

মামলার বাদী এবং মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন জানান, গত শুক্রবার ভোরে একদল ডাকাত দুটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে। শিক্ষকদের মারধর করে তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ডাকাতরা। তারা খামারে ঢুকে কেয়ারটেকার উৎসব হোসেনকে বেঁধে একে একে পাঁচটি গরু পিকআপ ভ্যানে তুলে নেয়। শিক্ষক ও ছাত্রদের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।

মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শরীফুল আলম খন্দকার জানান, খামারের আয়ের ওপর ভিত্তি করে মাদরাসার কার্যক্রম চলে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু নিয়ে যায় ডাকাতরা।

লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, “লুট হওয়া গরু উদ্ধার এবং ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।”

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ