যেখানে ঐকমত্য যতটুকু হবে, ততটুকুই সংস্কার হবে: আমীর খসরু
Published: 16th, June 2025 GMT
বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। যেখানে ঐকমত্য যতটুকু হবে, ততটুকুই সংস্কার হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।
আজ সোমবার দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে ঢাকার হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির এই নেতা। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
১৩ জুন যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক হয়। সেই বৈঠক ছিলেন আমীর খসরুও।
বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘সংস্কারের ব্যাপারটা তো আমি আগেই বলেছি। ড.
সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, এটা নির্বাচনের পরেও অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সময় নির্ধারণের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল দ্রুততম সময়ে, বিশেষ করে রোজার আগে নির্বাচনের যে প্রত্যাশা ছিল, (লন্ডন বৈঠকে) সেটা পূরণ হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ বিশেষ সন্ধিক্ষণে আমাদের যে ঐকমত্য হয়, সেটা হয়েছে। এখন আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে এগিয়ে যাব।’
এখন সরকারের নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার কি না, জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন ছাড়া জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর তো কোনো পথ নেই। এখানে ঐকমত্য পোষণ করেছে সারা জাতি। বাংলাদেশের মানুষ গত ২০ বছর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। নতুন প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। তারা সবাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের উত্তরণ চায়।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরও প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে। আগামী সরকারকেও অনেককে বিচারের আওতায় আনতে হতে পারে। বিচার তো চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার করবে বিচার বিভাগ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ঐকমত য বল ছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
লন্ডনে শুক্রবার যে বৈঠক হয়ে গেল, তা দেশের রাজনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য আশাজাগানিয়া। এর জন্য আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান– উভয় নেতাকে অভিনন্দন জানাতে পারি। তারা দেশবাসীর জন্য স্বস্তিদায়ক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন।
বৈঠকটির অন্যতম একটি দিক হলো, বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি করতে একটি মহল যে ক্রমাগত প্ররোচনা ও উস্কানি দিয়েছে, তা দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাই দেশের জন্য লন্ডন বৈঠক মঙ্গলজনক হয়েছে।
আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন প্রস্তুতি সাপেক্ষে। তবু সামনে আরও সাত মাস সময় রয়েছে। সরকার যেহেতু এরই মধ্যে ১০ মাস কাজ করেছে, বহু কিছু এগিয়ে গেছে। বাকি সাত মাসে নির্বাচনের অন্য প্রস্তুতিগুলোও শেষ করা সম্ভব।
সাত মাস কম সময় নয়। জনপ্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজানো, পুলিশ বাহিনীকে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে সাজিয়ে তোলা, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজগুলো এখন জোরেশোরে করা দরকার। এবারের নির্বাচনে আরও একটি বিষয় আলোচনায় এসেছে তা হলো, প্রবাসীদের ভোটাধিকার। তাদেরও ভোটার তালিকা করতে হবে। এসব কাজের পর্যাপ্ত সময় এখনও হাতে আছে।
আমার মনে হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে অপসারিত হবে। যারা নানা রকম উস্কানি দিচ্ছিল, যারা দেশের ভালো চায় না, তারা হতাশ হবে।
আরেকটি বিষয় খুব জরুরি তা হলো, সংস্কার ও জুলাই গণহত্যার বিচার। বাকি যে সাত মাস আছে, সে সময় এ দুটি কাজ গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মামলার বিচার অন্তত সম্ভব। সরকার, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাপ্রধান জুলাই গণহত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি জনগণকে দিয়েছেন। তাই বিচার সম্পন্ন করা গেলে দেশের মানুষের মনোবেদনা দূর হবে।
সংস্কারের কাজ চলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিছু কিছু বিষয়ে হয়নি। জনগণের প্রত্যাশা, সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে। জুলাই গণহত্যার বিচার করা হবে। সরকার, প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই বিচারের প্রশ্নে অনড় ও অটল থাকবেন। জনগণের এসব প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করায় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অসন্তুষ্ট হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও। যদিও বৈঠককে ইতিবাচক উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ এলডিপি, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, যখন কোনো ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনও বিরোধিতা আসে। লন্ডন বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত বা দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলা হয়নি। একটা সম্ভাব্য সময় ঠিক করা হয়েছে। যেসব দল এর সমালোচনা করছে, তারা বলুন, এই সময়টা তাদের অপছন্দনীয় কিনা? তারা তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করুন। সমালোচনা না করে মূল কথাটা বললেই তো হয় যে, তারা কবে নির্বাচন চান।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ