আষাঢ়ে–শ্রাবণে
অগ্নি কি নিবেছে?
একনাগাড়ে কত দিন ধরে
বৃষ্টি চলেছে তো চলেছেই।
জ্যৈষ্ঠে শুরু। তারপর এই
সারাটা আষাঢ় মাস ধরে
বৃষ্টি হচ্ছে। সারা দিন–রাত।
আকাশে পিঙ্গল পর্দা টানা।
সূর্য নেই। মেঘেলা। ধূসর।
রাস্তায় রাস্তায় জলস্রোত।
দিনরাত্রি অঝোর ঝরন।
মনে হয়, কখনো দেখিনি
সূর্য কিংবা রৌদ্রের ঝলক।
জলধারা ভুবন ভাসায়, —
শুধু এক কণা অগ্নি জ্বলে
সব দৃষ্টি–শ্রুতির বাইরে।
(মুস্তফা আনোয়ার–কে)
বৃষ্টির শাবলে আর গাঁইতির চাড়ে
রাত্রির কালো খনি ধসে পড়তে থাকে।
দেখি আর মনে মনে বলি: শেখো–শেখো–
কী করে মেলাতে হয় স্বপ্ন–ও–সত্তাকে।
কিন্তু ভোরবেলাতেই ভুল হয়ে যায়;
বুঝতে পারি না, বৃষ্টি নাকি জ্যোৎস্না ঝরছে?
পুষ্পিতা যুবতী, নাকি জুঁইফুলগাছ?
বেঁচে আছি, নাকি ঢুকে পড়েছি স্বর্গে?
বাস্তবতা নিয়ে আজো খাই হিমশিম,
ঊনষাটেও দেখছি আজো কিছুই মেলে না:
নিসর্গ রহস্যময়: নারী অপ্রবেশ্য;
পৃথিবী আকাশে ঢাকা; মানুষ অচেনা।
রাত্রি একটার ঢাকা। বৃষ্টি হয়ে গেছে এই একটু আগে।
ভিজে কালো রাস্তায় লাল–নীল–হলুদ–পাটকিলে আলোর বাহার।
ফিরছিলাম আমরা দুজন–আমি আর আতাহার।
আকাশ কি মেঘে ঢাকা? কালো মেঘ–ছেঁড়া দু–চারটি তারা
সিল্কের মতন আকাশে জ্বলছে পুঁতির মতন।
এখনো বাতাসে ঠান্ডা, বৃষ্টি থামলো এই কিছুক্ষণ।
পৃথিবীতে এরকম রাত্রি আর আসেনি কখনো।
ময়ূরের মতো এতো বর্ণময়, এমন নীরব–কলস্বরা,
এতো শান্ত-গতিশীল, এতো সশরীরী অথচ অধরা।
আরে। বৃষ্টি ফের: শাদা পর্দা পড়ে গেল রাত্রির নাটকে।
ভিজে কালো রাস্তায় চমকাচ্ছে আকাশের যত তারা।
কোথাও উৎসব নেই, তবু বাজছে ধ্বনি–প্রতিধ্বনিময় সারা–রারা–রারা।
দিনগুলি মিথ্যা হল এরকম বৃষ্টি–বেঁধা রাত্রির ঝংকারে
কতো গ্রীষ্ম ধুয়ে গেল এবারের আষাঢ়ে–শ্রাবণে,
হে রাত্রি, বৃষ্টির রাত্রি, তুমি আজ ঝরছো গহনে।
রাত্রি আজ জেগে উঠলো প্রজ্জ্বলন্ত বৃষ্টির বিভায়,
মেঘে লুপ্ত হয়ে চাঁদ মিশে রইল আমাদের নগরে–বন্দরে,
চলো যাই উড়ে যাই কালো–নীল রাত্রির ভিতরে।
বহুক্ষণ বৃষ্টি থেমে গেছে।
এখন গাছের ডাল থেকে,
পাতা থেকে চুঁইয়ে পড়ছে
জলবিন্দু। হিরের। রুপোর।
কে ডাকছে ডাক নাম ধরে?
এতো রাতে কে ডাকছে? কে? কে?
ভুল। কেউ নেই। কিছু নেই।
পথে পথে সোনার মোহর।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এরকম ঘটনা আমি জীবনেও দেখিনি: ইসরায়েলি বাসিন্দা
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলি শহরের একটি এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপ। শনিবার দিবাগত রাতে চালানো ইরানের হামলায় ইসরায়েলের বাত ইয়াম শহরের আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে আবাসিক ব্লক ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সেখানে শিশুসহ অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় দুইশত মানুষ এবং নিখোঁজ রয়েছেন চারজন।
দেশটির উদ্ধারকারী সংস্থা জানিয়েছে, বাত ইয়ামে ৮ বছর বয়সী এক মেয়ে, ১০ বছর বয়সী এক ছেলে এবং ১৮ বছরের তরুণসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া কমপক্ষে ২০০ জন আহত হয়েছেন। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের
আইডিএফ জানিয়েছে, চারজন নিখোঁজ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে আটকা রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার ভোরে একগুচ্ছ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের স্থানীয় সময় রাত আড়াইটার দিকে এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাত ইয়াম শহর। মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এখানকার একটি আবাসিক ব্লক। বড় বড় দালান ভেঙে এখন সেখানে দেখা যাচ্ছে সব ইটের টুকরো। এক জায়গায় পড়ে আছে বাচ্চাদের খেলনা।
রিবাত ভাকনিন নামের বাসিন্দা জানান, তার বাবা নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি সময়মতো আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেননি।
তিনি বলেন, আমার ভাই বাবাকে নিতে ঘরের ভেতরে ঢুকেছিল। তারপরই হঠাৎ বিস্ফোরণ হলো। বড় একটা ধাক্কায় আমার ভাই ছিটকে পড়লো। কিন্তু আমার বাবাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
৫০ বছর বয়সী নারী গিমেল বলেন, তিনি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জয়া নামের পোষা কুকুরকে খুঁজছেন।
‘আমি বাড়িতে একা ছিলাম। সাইরেনের শব্দ শুনে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার কথা ভাবলাম। কিন্তু আমি প্রথমে দৌড়ে বাথরুমে গেলাম। তখনই আমি দুইটি বোমার শব্দ শুনতে পেলাম। আমার কাছে মনে হলো সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। বাইরে বেরিয়ে জানতে পারলাম চারজন নারী নিহত হয়েছেন। আর তখনই আমার মাথার ওপর পুরো সিলিং ভেঙে পড়ল’, বলেন ওয়াইনেটকে।
তিনি বলেন, আমার মনে হলো- আমি মারা যাচ্ছি।
‘যখন বুঝতে পারলাম আমি জীবিত তখন আমার বাবা-মার কথা চিন্তা করলাম। তারাও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেননি। মনে হলো-আমরা সবাই জীবন্ত কবরের মধ্যে আছি’, বলেন ওয়াইনেটকে।
বারুচ বলেন, ‘আমি আমার জীবনেও এমন ঘটনা দেখিনি।’
‘আমি যুদ্ধে ছিলাম। ছয় দিনের যুদ্ধের সময় আমি গোলান হাইটসে ছিলাম। তখন বিমানগুলো আমার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। আমি তখনকার বিমানের ক্ষমতা দেখেছি। কিন্তু এখনকার মতো পরিস্থিতি আমি কখনও দেখিনি। আমি বোমার ক্ষমতায় পুরোপুরি ভীত’, বলেন তিনি।