নওগাঁয় চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১ থেকে ৩ টাকা, প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে
Published: 17th, June 2025 GMT
দেশে ধান-চাল উৎপাদনের অন্যতম প্রধান জেলা নওগাঁয় কেজিতে ১ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। মিলগেটে জিরাশাইল ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৩ থেকে ৭৫ টাকা দরে। কাটারিভোগ চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। পাইকারিতে চালের দাম বাড়ায় স্থানীয় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি মণে ধানের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ কারণে চালের দামও বাড়ছে। তাঁদের ভাষ্য, নওগাঁয় চালের দাম বাড়লে বা কমলে এর প্রভাব পড়ে দেশের অন্যান্য বাজারেও।
জেলার সবচেয়ে বড় চালের মোকাম শহরের আলুপট্টি এলাকার কয়েকটি আড়তে গিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন মিলগেটে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি চালের দাম ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে এক থেকে তিন টাকা।
এক সপ্তাহ আগে মানভেদে প্রতি বস্তা জিরাশাইল চালের দাম ছিল ৩ হাজার ৪৫০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। কাটারিভোগ চালের দাম এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩ হাজার ১০০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা দরে।
এ ছাড়া মোটা চাল হিসেবে পরিচিত বিআর-২৮, শুভলতা, পারিজা ও মোয়াজ্জেম চালের দামও বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি বিআর-২৮, পারিজা, শুভলতা ও মোয়াজ্জেম চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭২ থেকে ৭৪ টাকা এবং মিনিকেট ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকা কেজিতে।
নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড় এলাকার পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজারের লক্ষ্মী চাল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী উত্তম সরকার বলেন, ‘পাইকারিতে বস্তাপ্রতি সব ধরনের চালের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাতে পাইকারিতে ৭০ টাকা কেজি দরে জিরাশাইল চাল কিনে খুচরায় আমাদের ৭২-৭৩ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। ঈদের আগে খুচরায় এই চালের দাম ছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। কাটারিভোগ চালের দাম আগে ছিল ৬৪ টাকা কেজি। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে। পাশাপাশি অন্যান্য চালের দামও কেজিতে ১ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে।’
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, নওগাঁয় বোরো মৌসুমে প্রায় ৯০ শতাংশ জমিতে জিরাশাইল (জিরা) ও কাটারিভোগ ধান চাষ হয়ে থাকে। গত এক সপ্তাহে এই ধরনের ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতি মণ (৪০ কেজি) জিরা ধানের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা। সেই ধান এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ থেকে ১ হাজার ৬৭৫ টাকা মণ দরে। অন্যদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাটারি ধানের দাম প্রতি মণে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে এখন ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ
আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।
নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।
আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরিমিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।
এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।
বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?
মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবনমহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।
এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।
দানের সংস্কৃতিআজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।
ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।
যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।
আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।
ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।
আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।
আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫