ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: বিশ্ব অর্থনীতিতে অশনিসংকেত
Published: 17th, June 2025 GMT
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। এই যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী এলাকা। সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় বিশ্ব অর্থনীতিতে তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা। গত শুক্রবার ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর বিশ্বের বড় পুঁজিবাজারগুলোতে ধস নামে। তবে পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্থিতিশীল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান সংঘাত পুরোদস্তুর যুদ্ধে রূপ নিলে ভয়াবহ হতে পারে পরিস্থিতি।
সংঘাতের খবরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত সোমবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৪ দশমিক ৬০ ডলারে পৌঁছায়, যা ইসরায়েলি হামলার আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। বিশ্বের বেশির ভাগ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসে মধ্যপ্রাচ্যের হরমুজ প্রণালির মতো ব্যস্ত সমুদ্রপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। জাহাজ দিয়ে বিশ্বের যত তেল পরিবহন হয়, এর এক-তৃতীয়াংশ বা ২১ মিলিয়ন ব্যারেল যায় এই প্রণালি দিয়ে। প্রণালিটির সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশের প্রস্থ মাত্র ৩৩ কিলোমিটার, যা একে হামলার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। তেহরান এই গুরুত্বপূর্ণ জলপথ বন্ধ করে দিতে পারে কিনা– সেই পুরোনো প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে।
ইরানের সংবাদ সংস্থা ইরনা দেশটির এক প্রভাবশালী আইনপ্রণেতা ইসমাইল কোসারির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তেহরান প্রণালিটি বন্ধের কথা ভাবছে।
বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের মতে, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে আশার কথা, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়ও হরমুজ প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া, প্রণালিটি বন্ধ করলে চীনের মতো দেশে ইরানের নিজস্ব রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হবে, যা তাদের আয়ের পথ বন্ধ করে দেবে।
টিএস লম্বার্ড নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক বিশ্লেষক হামজেহ আল গাওদ বলেন, প্রণালিটি বন্ধ করার পরিণতি তেহরানের জন্যও মারাত্মক হবে।
তেলের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। এর প্রভাব শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর পড়ে। বিশেষ করে খাদ্য, পোশাক ও রাসায়নিকের মতো পণ্যের দাম বেড়ে যায়। সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্বজুড়ে তেল আমদানিকারক দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হস্তক্ষেপের সুযোগ কমে আসবে।
আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামজেহ আল গাওদ বলেন, জি৭ দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা বর্তমানে সুদের হার কমানোর পথে হাঁটছেন। তাই জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা উদ্বিগ্ন থাকবেন।
ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের প্রভাব বিশ্বের পুঁজিবাজারগুলোতে পড়েছে। শুক্রবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ এবং নাসডাক কম্পোজিট সূচক যথাক্রমে ১ দশমিক ১ ও ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। এর আঁচ লেগেছে মধ্যপ্রাচ্যেও।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার পর সতর্ক বিমান বাংলাদেশ, ড্রিমলাইনারের রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার
সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং-৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার পর বাংলাদেশে বিমানের প্রকৌশল বিভাগ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বহরে থাকা সব ড্রিমলাইনারের গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমসমূহের মান যাচাই ও পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করেছে।
বিমান বাংলাদেশ জানায়, বিমানের প্রকৌশল বিভাগ বিমানের সব বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম-ইঞ্জিন ফুয়েল সিস্টেম, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন কন্ট্রোল, ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার, হাইড্রোলিক, এয়ার কন্ডিশনিং ও ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেমসহ সব গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় টেস্ট এবং ইঞ্জিন পাওয়ার অ্যাসিউরেন্স চেক পরিচালনা করছে।
ভারতের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার তদন্ত শেষে নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং কর্তৃক রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত যেসব নির্দেশনা দেওয়া হবে, তা সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়নের জন্য বিমানের প্রকৌশল বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে বর্তমানে মোট ৬টি বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি বোয়িং-৭৮৭-৮ এবং ২টি বোয়িং-৭৮৭-৯ মডেলের উড়োজাহাজ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে চলাচল করে। এই উড়োজাহাজগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে বিমানের প্রকৌশল বিভাগ এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স প্রোগ্রাম অনুসরণ করে। এই প্রোগ্রামে প্রতিটি মেইনটেন্যান্স টাস্ক, নির্ধারিত সময়সীমা এবং পদ্ধতি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। এটি বোয়িং কোম্পানির মেইনটেন্যান্স প্ল্যানিং ডকুমেন্ট, টাইপ সার্টিফিকেট হোল্ডার এবং রেগুলেটরি রিকোয়্যারমেন্টের নির্দেশনা অনুসারে তৈরি এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদিত।
বিমান জানায়, রক্ষণাবেক্ষণের প্রতিটি ধাপ বোয়িং মেইনটেন্যান্স ম্যানুয়াল অনুসরণ করে সম্পন্ন করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী কর্তৃক যাচাই শেষে কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ইউনিট কর্তৃক পরীক্ষা করা হয়।
এ ছাড়া বিমানের মেইন্টেন্যান্স কন্ট্রোল সেন্টার এবং কেন্দ্রীয় প্রকৌশল শাখা এয়ারক্রাফট ও ইঞ্জিন হেলথ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিটি উড়োজাহাজের অবস্থা সার্বক্ষণিক রিয়েল টাইমে পর্যবেক্ষণ করে, যাতে যেকোনো সম্ভাব্য ত্রুটির আগেই সতর্কবার্তা পাওয়া যায় এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস জানিয়েছে, যাত্রী নিরাপত্তা ও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের প্রতিটি ধাপ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সম্পন্ন করে থাকে।