তেহরানে রয়েছেন ৪০০ বাংলাদেশি, স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু
Published: 17th, June 2025 GMT
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির নিরাপত্তা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। এঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এসব তথ্য জানান। ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা বিষয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইরানে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। তাঁদের মধ্যে বড় সংখ্যক বাংলাদেশি ইরানিদের বিয়ে করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। আরেক দল বাংলাদেশি ওখানকার সমুদ্র অঞ্চলে মাছ ধরাসহ ছোটখাটো কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের বৈধ কাগজপত্র নেই। কিছু বাংলাদেশি ইরানের ডিটেনশন সেন্টারে (আটককেন্দ্র) আছেন। এর বাইরে কিছু বাংলাদেশি আছেন পেশাজীবী, যাঁরা গণমাধ্যম ও চিকিৎসাসেবা খাতে কাজ করছেন। কিছু বাংলাদেশি ইরানে ভ্রমণে গেছেন। কিছু গেছেন পড়তে।
রুহুল আলম সিদ্দিকী জানান, তেহরানে থাকা বাংলাদেশিরা নিরাপদ স্থানে যেতে চান। তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন। ইতিমধ্যে ১০০ জন যোগাযোগ করেছেন। সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হবে। এরই মধ্যে ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনীতিকসহ দূতাবাসের ৪০ জনকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, গতকাল সোমবার রাতে ইরানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রদূতের নির্ধারিত বাসভবন ছেড়ে গেছেন। তিনি এখন নিরাপদে অন্য একটি স্থানে অবস্থান করছেন। কারণ, ইসরায়েলি আক্রমণে তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের চ্যান্সারি ভবন এবং রাষ্ট্রদূতের ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এতটুকু বলতে পারি এ দুটোতে (বাংলাদেশের চ্যান্সারি ভবন, যেটা অফিস এবং রাষ্ট্রদূতের ভবন) নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি।’
পররাষ্ট্রসচিব জানান, সবাইকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তেহরান ছাড়াও আশপাশের দেশের শহরগুলোতে খোঁজখবর রাখছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানকার বাংলাদেশিদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এখনকার সিদ্ধান্ত হলো, তেহরান থেকে যতটুকু দূরত্বে গেলে নিরাপদে থাকতে পারা যায়, তাঁরা যেন ততটা নিরাপদ স্থানে সরে যান। এই মুহূর্তে ইরান ত্যাগ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিমান যোগাযোগ বন্ধ এবং স্থলপথে যাওয়া হয়তো সম্ভব, কিন্তু তা নিরাপদ হবে না। এ জন্য তাঁদের তেহরান থেকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাঁদের জন্য ভাড়ায় বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরে তাঁরা যদি পাকিস্তানে যেতে চান বা তুরস্কে যেতে চান, তখন তাঁদের পৌঁছে দেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে দূতাবাসের কর্মকাণ্ড কীভাবে চলছে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দূতাবাস যুদ্ধাবস্থায়ও সেবামূলক কাজ করছে। বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। দূতাবাস প্রতিনিয়ত যুদ্ধের আপডেট (হালনাগাদ তথ্য) জানাচ্ছে। পাশাপাশি অন্য দেশ কীভাবে তাদের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে, সেসব তথ্য নিয়মিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাচ্ছে দূতাবাস।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া দূতাবাসে থাকা অর্থ দিয়ে করা হচ্ছে। তবে ব্যাংকিং চ্যানেল কাজ না করায় পরে টাকা পাঠানো বেশ কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব জানান, অর্থ প্রেরণ কষ্টসাধ্য। স্থানান্তরের জন্য যে অর্থ লাগবে আমরা পাঠানোর চেষ্টা করছি। ওখানে ব্যাংকিং চ্যানেল কাজ করে না। সে জন্য একটু বিলম্ব হচ্ছে। অর্থ পাঠানোর চ্যালেঞ্জের সমাধান নিয়ে রুহুল আলম বলেন, ‘আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অতিরিক্ত টাকা পাঠাব। আমাদের কিছু টাকা মিশনের কাছে আছে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমরা যতটা সম্ভব বন্ধুরাষ্ট্রগুলো থেকে সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করছি। ইরানের কাছ থেকেও আমরা সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের যতগুলো চ্যানেল খোলা আছে, সবগুলোতে চেষ্টা করছি। তবে মনে রাখতে হবে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কোনো কিছু এত স্মুথলি (মসৃণভাবে) হয় না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র পদ স থ ন স থ ন ন তর র পর স থ ত ক জ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
হত্যা মামলায় দেবিদ্বারের সাবেক পৌর মেয়র কারাগারে
কুমিল্লার দেবিদ্বারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আমিনুল ইসলাম সাব্বির (১৭) হত্যা মামলায় দেবিদ্বার পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইফুল ইসলাম শামীমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে শামীম কুমিল্লা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহাবুবুর রহমান জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শামীম একই উপজেলার জাফরগঞ্জ মীর আব্দুল ডিগ্রি কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক পদে কর্মরত।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সাবেক পৌর মেয়র শামীম এ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সম্প্রতি তিনি উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে তাকে দায়রা জজ আদালতে হাজির হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শহিদুল্লাহ ও মো. জসিম উদ্দিন আবাদ বলেন, ‘ঘটনার সময় সাবেক মেয়র শামীম পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ছিলেন। কক্সবাজার থেকে কোনো আসামি সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না। আমরা তার কক্সবাজারে অবস্থানের সংশ্লিষ্ট প্রমাণও আদালতে উপস্থাপন করেছিলাম। এখন জামিনের জন্য আবারও উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর উল্লসিত জনতা দেবিদ্বার থানা ঘেরাওকালে সাব্বির মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকার একটি হাসপাতালে এক মাসেরও বেশি চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি। এ ঘটনায় তার মামা নাজমুল হাসান বাদী হয়ে দেবিদ্বারের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও পৌর মেয়র শামীমসহ ৯৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামস উদ্দিন মুহাম্মদ ইলিয়াস জানান, এ হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ৩১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।