দশ ব্যাংকেই তিন লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ
Published: 17th, June 2025 GMT
লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণের আসল চিত্র প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে করে মন্দ ঋণ যেন লাফিয়ে বাড়ছে। গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ১৩ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে দশ ব্যাংকেই রয়েছে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত সরকারের সময়ে অনিয়ম-জালিয়াতির শীর্ষে থাকা ব্যাংকগুলোই রয়েছে এ তালিকায়। সরকার ঘনিষ্ঠরা বিভিন্ন ব্যাংকে একক আধিপত্য বিস্তর করে নামে-বেনামে বিভিন্ন উপায়ে আমানতকারীর টাকা আত্মসাৎ করেন; যার একটি বড় অংশ পাচার করা হয়। ফলে এসব ঋণ আর ফেরত আসছে না। গত ৫ আগস্টের আগে টাকা ফেরত না দিয়েও ঋণ নিয়মিত দেখানোর যে ব্যবস্থা ছিল তাও বন্ধ হয়েছে। এসব কারণে লাফিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।
পরিমাণ বিবেচনায় খেলাপি ঋণে এখন শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির ৯৪ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৭০ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা এখন খেলাপি। মোট ঋণের যা ৭৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ব্যাংকটিতে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা এবং এস আলমের ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এছাড়া ক্রিসেন্ট লেদার, অ্যানটেক্স, বিসমিল্লাহসহ বিভিন্ন জালিয়াতি ঘটেছে এই ব্যাংকে। ঋণের ৭৫ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়ায় ভীষণ দুরবস্থায় পড়েছে জনতা ব্যাংক।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবর রহমান সমকালকে বলেন, এসব ঋণের সবই আগে বিতরণ করা। ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর জোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আদায় কার্যক্রম জোরদার করেছে। ছোট ছোট ঋণ আদায়ে বেশ কিছু বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে। বড়দের ক্ষেত্রে একই গ্রাহকের একাধিক ব্যাংকে ঋণ রয়েছে। সব ব্যাংক মিলে তাদের থেকে যৌথভাবে আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আদায় অনেক ভালো। আবার গত ডিসেম্বরের তুলনায় আমানত ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ এখন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির দখল নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ নিয়ে গেছে। গত মার্চ শেষে ইসলামী ব্যাংকের ৪৭ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ খেলাপি দেখানো হয়। তৃতীয় অবস্থানে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের ২৯ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বা ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ খেলাপি। দীর্ঘদিন সিকদার গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের ২৭ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা বা ৬৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ খেলাপি। সালমান এফ রহমান নিয়ন্ত্রণ করে আসা আইএফআইসি ব্যাংকের ২৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা বা ৫৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ এখন খেলাপি।
পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ২৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা বা ৮৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ২২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা বা ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ব্যাংক দুটি পরিচালিত হচ্ছিল এস আলমের নিয়ন্ত্রণে। খেলাপি ঋণে এর পরের অবস্থানে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। হলমার্কসহ বিভিন্ন জালিয়াতিতে আলোচিত ব্যাংকটির খেলাপি ১৯ হাজার ৯১ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ১১ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকের ১৭ হাজার ১২৩ কোটি টাকা বা ৩৫ দশমিক ৬২ শতাংশ এখন খেলাপি। দশম অবস্থানে থাকা সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা বা ৩৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ খেলাপি।
খেলাপি ঋণের পরিমাণের দিক দিয়ে এসব ব্যাংক শীর্ষে থাকলেও আনুপাতিক হারে সব ক্ষেত্রে এসব ব্যাংক শীর্ষে নয়। বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ১ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৯৮ দশমিক ৯৬ শতাংশই খেলাপি। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৬৬৫ কোটি টাকা বা ৯১ শতাংশ ঋণ খেলাপি। মূলত এসব ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ কম থাকায় পরিমাণের শীর্ষ ব্যাংকের তালিকায় নেই।
খেলাপি ঋণের পরিমাণে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের মধ্যে কেবল ইউনিয়ন, জনতা, ন্যাশনাল ও আইএফআইসি ব্যাংক শতাংশেও শীর্ষ ১০-এ রয়েছে। এসবের বাইরে মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও চৌধুরী নাফিজ সরাফতের জালিয়াতির শিকার পদ্মা ব্যাংকের ৮৭ দশমিক ১৮, আব্দুল হাই বাচ্চুর বেসিকে ৬৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, এস আলমের বাংলাদেশ কমার্সে ৬৭ এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৫৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ খেলাপি ঋণ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার
গঠনের সময় খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে এ পর্যায়ে এসেছে। মূলত খেলাপি ঋণ আদায় জোরদারের চেয়ে এতোদিন নীতি সহায়তা দিয়ে তথ্য আড়ালের কারণেই এ অবস্থা তৈরি হয়। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগ
থেকে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতপশিল ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর কখনও বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতপশিল, কখনো পুনর্গঠন বা ঋণ ফেরত না দিয়েও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। এভাবে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ এখন বেরিয়ে আসছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঋণ এস আলম দশম ক অবস থ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি