লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণের আসল চিত্র প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে করে মন্দ ঋণ যেন লাফিয়ে বাড়ছে। গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ১৩ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে দশ ব্যাংকেই রয়েছে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। 
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত সরকারের সময়ে অনিয়ম-জালিয়াতির শীর্ষে থাকা ব্যাংকগুলোই রয়েছে এ তালিকায়। সরকার ঘনিষ্ঠরা বিভিন্ন ব্যাংকে একক আধিপত্য বিস্তর করে নামে-বেনামে বিভিন্ন উপায়ে আমানতকারীর টাকা আত্মসাৎ করেন; যার একটি বড় অংশ পাচার করা হয়। ফলে এসব ঋণ আর ফেরত আসছে না। গত ৫ আগস্টের আগে টাকা ফেরত না দিয়েও ঋণ নিয়মিত দেখানোর যে ব্যবস্থা ছিল তাও বন্ধ হয়েছে। এসব কারণে লাফিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। 

পরিমাণ বিবেচনায় খেলাপি ঋণে এখন শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির ৯৪ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৭০ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা এখন খেলাপি। মোট ঋণের যা ৭৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ব্যাংকটিতে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা এবং এস আলমের ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এছাড়া ক্রিসেন্ট লেদার, অ্যানটেক্স, বিসমিল্লাহসহ বিভিন্ন জালিয়াতি ঘটেছে এই ব্যাংকে। ঋণের ৭৫ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়ায় ভীষণ দুরবস্থায় পড়েছে জনতা ব্যাংক। 

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবর রহমান সমকালকে বলেন, এসব ঋণের সবই আগে বিতরণ করা। ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর জোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আদায় কার্যক্রম জোরদার করেছে। ছোট ছোট ঋণ আদায়ে বেশ কিছু বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে। বড়দের ক্ষেত্রে একই গ্রাহকের একাধিক ব্যাংকে ঋণ রয়েছে। সব ব্যাংক মিলে তাদের থেকে যৌথভাবে আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আদায় অনেক ভালো। আবার গত ডিসেম্বরের তুলনায় আমানত ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। 

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ এখন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির দখল নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ নিয়ে গেছে। গত মার্চ শেষে ইসলামী ব্যাংকের ৪৭ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ খেলাপি দেখানো হয়। তৃতীয় অবস্থানে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের ২৯ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বা ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ খেলাপি। দীর্ঘদিন সিকদার গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের ২৭ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা বা ৬৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ খেলাপি। সালমান এফ রহমান নিয়ন্ত্রণ করে আসা আইএফআইসি ব্যাংকের ২৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা বা ৫৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ এখন খেলাপি। 

পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ২৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা বা ৮৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ২২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা বা ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ব্যাংক দুটি পরিচালিত হচ্ছিল এস আলমের নিয়ন্ত্রণে। খেলাপি ঋণে এর পরের অবস্থানে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। হলমার্কসহ বিভিন্ন জালিয়াতিতে আলোচিত ব্যাংকটির খেলাপি ১৯ হাজার ৯১ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ১১ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকের ১৭ হাজার ১২৩ কোটি টাকা বা ৩৫ দশমিক ৬২ শতাংশ এখন খেলাপি। দশম অবস্থানে থাকা সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা বা ৩৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ খেলাপি। 
খেলাপি ঋণের পরিমাণের দিক দিয়ে এসব ব্যাংক শীর্ষে থাকলেও আনুপাতিক হারে সব ক্ষেত্রে এসব ব্যাংক শীর্ষে নয়। বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ১ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৯৮ দশমিক ৯৬ শতাংশই খেলাপি। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৬৬৫ কোটি টাকা বা ৯১ শতাংশ ঋণ খেলাপি। মূলত এসব ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ কম থাকায় পরিমাণের শীর্ষ ব্যাংকের তালিকায় নেই। 
খেলাপি ঋণের পরিমাণে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের মধ্যে কেবল ইউনিয়ন, জনতা, ন্যাশনাল ও আইএফআইসি ব্যাংক শতাংশেও শীর্ষ ১০-এ রয়েছে। এসবের বাইরে মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও চৌধুরী নাফিজ সরাফতের জালিয়াতির শিকার পদ্মা ব্যাংকের ৮৭ দশমিক ১৮, আব্দুল হাই বাচ্চুর বেসিকে ৬৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, এস আলমের বাংলাদেশ কমার্সে ৬৭ এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৫৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ খেলাপি ঋণ। 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার 
গঠনের সময় খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে এ পর্যায়ে এসেছে। মূলত খেলাপি ঋণ আদায় জোরদারের চেয়ে এতোদিন নীতি সহায়তা দিয়ে তথ্য আড়ালের কারণেই এ অবস্থা তৈরি হয়। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগ 
থেকে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতপশিল ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর কখনও বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতপশিল, কখনো পুনর্গঠন বা ঋণ ফেরত না দিয়েও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। এভাবে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ এখন বেরিয়ে আসছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঋণ এস আলম দশম ক অবস থ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নারীরা কেন পুরুষদের তুলনায় বেশিবার প্রস্রাব করেন?

একজন পুরুষ মূত্রথলিতে অনায়াসে ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিলিটার প্রস্রাব ধারন করতে পারে। একজন নারীরও এই সক্ষমতা রয়েছে। তারপরেও নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশিবার প্রস্রাব করে। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। 

চিকিৎসকদের মতে,  ‘‘মূত্রথলির ধারণ ক্ষমতা এক হলে এর চারপাশে যেসব অঙ্গ থাকে, তা প্রস্রাব লাগার অনুভূতিতে পার্থক্য তৈরি করে। আর এখান থেকেই নারী ও পুরুষের মূত্রথলির পার্থক্যের শুরু।পুরুষদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মূত্রথলি প্রোস্টেটের ওপরে এবং রেকটামের (মলদ্বারের) সামনে থাকে। আর নারীদের ক্ষেত্রে এটি একটি অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ পেলভিক অঞ্চলে থাকে।’’

নারীরা গর্ভাবস্থায় বার বার প্রস্রাব করেন। এই সময়ে জরায়ু মূত্রথলিকে চেপে ধরে। আর সেকারণেই শেষ তিন মাসে নারীদের প্রায় প্রতি ২০ মিনিট পরপর বাথরুমে যেতে হয়।

আরো পড়ুন:

প্রতিদিন এন্টাসিড খাচ্ছেন? কোন কোন রোগ হতে পারে জেনে নিন

যেসব রোগ থাকলে ডাবের পানি পান করা উচিত নয়

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা তুলনামূলকভাবে কম প্রস্রাব জমলেই মূত্রথলি ভর্তি হওয়ার অনুভব পেতে পারেন। এর কারণ হরমোনের প্রভাব। তাছাড়া সংবেদনশীলতার কারণেও এমন হয়। 
নারীদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসব, হরমোন পরিবর্তন এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তখন নারীদের মূত্রথলির ‘ধরে রাখা’ ও ‘ছাড়ার’ মধ্যে নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য নষ্ট হয়।মূত্রনালীর শেষপ্রান্তে থাকা স্পিঙ্কটার নামের পেশিটি তার শক্তি হারাতে পারে বলে বার বার প্রস্রাব হতে পারে।

নারীরা ঘর থেকে বের হওয়ার আগে ইচছাকৃতভাবে প্রস্রাব করেন। যাতে বাইরে গেলে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে না নয়। এটা এক রকম সংস্কৃতি। এমনকি ছোট শিশু মেয়েকেও এই শিক্ষাই দেওয়া হয়। যার ফলে এক ধরণের সংবেদনশীলতা তৈরি হয়ে যায়। এই সংবেদনশীলতাও বার বার প্রস্রাব হওয়ার একটি কারণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘পুরুষের চেয়ে নারীর বার বার প্রস্রাব হওয়ার পেছনে ইচ্ছাশক্তির দুর্বলতা বা ছোট মূত্রথলির ব্যাপার নেই। বরং এটি শরীরের গঠন, অভ্যাস আর হরমোনের প্রভাবে হয়ে থাকে।’’

তথ্যসূত্র: বিবিসি

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ