১২০০ টাকা মণ দরে ২৫ মণ ধান বিক্রি করেছেন মহাজনের কাছে। ঢলনের নামে ২৫ মণ ধানে তাকে ৫০ কেজি ধান বেশি দিতে হয়েছে মহাজনকে। আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন তাড়াশ উপজেলার লালুয়া মাঝিড়া গ্রামের কৃষক আশিকুল ইসলাম।
একই অভিযোগ করেছেন মাঝিড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ব্যবসায়ী মহাজন, ফড়িয়া সিন্ডিকেটের কাছে আমরা জিম্মি। ঢলন প্রথায় ধান বিক্রি করতে না চাইলে মহাজন-ব্যবসায়ীরা একযোগে ধান কেনা থেকে বিরত থাকেন। কৃষক শোষণের এ প্রথা থেকে পরিত্রাণের উপায়ও খুঁজে পাচ্ছি না।
শুধু মাঝিড়া গ্রামে নয়, চলবিল অধ্যুষিত এলাকায় কৃষকের কাছ থেকে ৪২ কেজিতে ১ মণ হিসাবে ধান কিনে তুলনামলূক বেশি দাম ও কম পরিমাণে (৪০ কেজিতে ১ মণ ধরে) বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মহাজনদের বিরুদ্ধে। কৃষকদের অভিযোগ, ৪২ কেজি ধান তাদের কাছ থেকে মহাজন ১২০০ টাকায় কিনে নেয়। সেই ধান খুচরা বাজারে ৪০ কেজি হিসাবে ১ মণ ধান ১২৫০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
গত চার-পাঁচ বছর ধরে চলনবিলে এভাবেই সিন্ডিকেট করে ঢলন প্রথায় ধান কেনাবেচা হচ্ছে। এতে উৎপাদিত ফসলের উল্লেখযোগ্য অংশ চলে যাচ্ছে ঢলনে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। এতে রাজি না হলে একযোগে মহাজন ব্যবসায়ীরা ধান কেনা বন্ধ করে দেন। এসব কারণে ধান ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য প্রশাসনের নজরদারির দাবি করেছেন কৃষকরা।
তাড়াশের নওগাঁ হাটে ধান কিনতে আসা পাবনার দাশুড়িয়া এলাকার মহাজন ফিরোজ হোসেন বলেন, রসুন, পেঁয়াজ, আম, মাছসহ বেশকিছু কৃষি পণ্য এখন ঢলন প্রথায় কেনাবেচা হয়। ধান এর বাইরে নয়। মণপ্রতি কৃষকের ২ কেজি বেশি নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ধান কেনার পর রোদে শুকাতে হয়। তখন প্রতি মণে আধা থেকে এক কেজি কমে যায়। তাই পুঁজি রক্ষায় মণে “ঢলন” নেওয়া হচ্ছে। ঢলন ছাড়া ধান কিনলে লোকসান গুনতে হয় বলে জানান ফিরোজ হোসেনসহ কয়েকজন মহাজন।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খাদ্যশস্য ভান্ডার-খ্যাত চলনবিলের ১০ উপজেলায় প্রতি বছর ১ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ফসল ছাড়াও আউশ, বোনা ও রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়। উৎপাদিত ধানের কিছু অংশ নিজেদের খাবারের জন্য রেখে অবশিষ্ট ধান বছরের বিভিন্ন সময়ে হাট-বাজারে বা বাড়ি থেকে বিক্রি করে সংসার চলে বেশির ভাগ কৃষকের। কিন্তু ঢলনের নামে ব্যবসায়ী মহাজন, ফড়িয়াদের লোভের শিকার হচ্ছেন তারা।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ঢলন প্রথার নামে প্রতি মণে ১ বা ২ কেজি বেশি নেওয়া অপরাধ। এটা বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ ন স গ রহ ব যবস য়
এছাড়াও পড়ুন:
আমের ক্রেতা নেই অর্ধেক দামে বিক্রি
নাটোরের লালপুরে আমের দামে ধস নেমেছে। ক্রেতা না থাকায় গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। আমচাষি ও বাগান ব্যাপারীরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন অনেকেই।
নাটোরের সবচেয়ে বড় আমের বাজার আহমেদপুর ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমণ লক্ষ্মণভোগ ৪৫০-৫০০ টাকা, হিমসাগর ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা, আম্রপালি ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, ল্যাংড়া ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা, হাঁড়িভাঙা ১৫০০-১৬০০ টাকা, গুটি আম ৫০০-৫৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এসব আম দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
রোববার আহমেদপুর বাজারে মেসার্স রউফ ট্রেডার্সের মালিক হাজী আব্দুর রউফ সমকালকে বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে আমের দাম ভালো থাকলেও ১০ দিনের ব্যবধানে অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে আমের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
আহমেদপুর বাজার ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি হিমসাগর ৩০-৩৫ টাকা, লক্ষ্মণভোগ ১০-১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি দাম আরও কম। এত কম দামে আম বিক্রি করলে লাভ দূরের কথা বাগান কেনার টাকাও উঠবে না বলছেন ব্যাপারীরা।
চলতি বছর ওয়ালিয়া গ্রামের আম ব্যবসায়ী শুভ আলী ৮০ হাজার টাকা ঋণ ও জমানো টাকাসহ মোট ৫ লাখ টাকায় ১০টি বিভিন্ন জাতের আমের বাগান কিনেছেন। শুরুতে মোটামুটি ভালো দামে আম বিক্রি করেছেন। ১০ দিনের ব্যবধানে দাম ও চাহিদা কমে যাওয়ায় বিক্রি প্রায় বন্ধ।
শুভ আলী আক্ষেপ করে বলেন, আম পেকে পড়ে যাচ্ছে। প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে গাছ থেকে পাড়তে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে লাভতো হবেই না, উল্টো ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে।
ব্যবসায়ী ইনছার আলী বলেন, গত বছর এক কেজি পাকা হিমসাগর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে। এবার সেই আম ৩০-৩৫
টাকা দরেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। বাজারে আমের চাহিদা নেই।
আম বাগানী সোহেল রানা ও শফিকুল ইসলাম বলেন, ১৫ দিন আগে যে বাগান ৫০ হাজার টাকা দাম ছিল, এখন সেই বাগানের দাম বলছে ২০-২৫ হাজার টাকা। তারপরেও বাগান কেনার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। অব্যাহত লোকসানের কারণে অনেক চাষি আবাদ বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে ক্ষোভে বাগান কেটে ফেলছেন। বিদেশে আম রপ্তানির উদ্যোগ না নিলে আম চাষে সুদিন ফিরবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, ঈদ ও গরমের কারণে সব জায়গায় আমের চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে। কয়েক দিনের মধ্যে দাম বাড়বে।