নাজমুল হোসেন শান্ত সমর্থকদের ভালোবাসা পেয়েছেন কবে মনে করতে না পারলেও ট্রলের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। ট্রল হতে হতেই তো শান্তর বড় হওয়া। আট বছর আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট অভিষেকের পর জাতীয় দলে নিয়মিত হতে সময় লেগেছে তাঁর। অধারাবাহিকতার কারণে দুই হাজার রানের ল্যান্ডমার্ক ছুঁতে লেগে গেল ৩৬টি টেস্ট ম্যাচ। তাই তো ট্রলের ‘লর্ড’ শান্ত ব্যাটিংয়ের লর্ড হয়ে সমালোচনার জবাব দিতে পারেননি।
এর পরও কিন্তু দলের ধারাবাহিক ব্যাটারদের একজন তিনি। এ কারণেই সাকিব আল হাসানের উত্তরসূরি হিসেবে জাতীয় দলের তিন সংস্করণের নেতৃত্বের ভার তুলে দেওয়া হয়েছিল তাঁর হাতে। নেতৃত্বে ভালোও করছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগাররা টেস্ট জিতেছিল দেশের মাটিতে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জিতেছিল ওয়ানডে ও টি২০ ম্যাচ। সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলো আড়াল করে দেয় মাঝের কিছু ব্যর্থতা। তাই তো বলা-কওয়া ছাড়াই ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়া হয় শ্রীলঙ্কা সফরের বিমান ধরার দুই দিন আগে। বুকে সেই কষ্টের পাথর চাপা দিয়ে গলে টেস্টের ব্যাট করতে নামেন শান্ত। পুরো একটি দিন উইকেটে থেকে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গী করে খেলেন সেঞ্চুরি ইনিংস। ১৯ মাস পর ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তিনি। ২০ ইনিংস পর ‘ক্যাপ্টেন্স নক’ স্বস্তি দিল শান্তকে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২৩ সালে সিলেটে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরের অভিষেকে শান্তর দীর্ঘ মেয়াদে অধিনায়কের অভিষেক হয়েছিল। প্রথম টেস্টেই বাজিমাত করেছিলেন ১০৫ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে। নেতৃত্বে প্রশংসা পেয়েছিলেন কোচের কাছ থেকে। সে বছর ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফর শেষে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে মত দিয়েছিলেন শান্তকে অধিনায়ক হিসেবে রেখে দেওয়ার। যদিও নেতৃত্বের চাপে ব্যাটিংয়ে তেমন ভালো করতে পারছিলেন না। নিজের ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেন টি২০ দলের নেতৃত্ব। বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ চেয়েছিলেন শান্তকে বাকি দুই সংস্করণের নেতৃত্বে রেখে দিতে। এক বছরের জন্য টেস্টের অধিনায়ক রেখে অজানা কারণে ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিসিবির নতুন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ইচ্ছায় এ পরিবর্তনকে অন্যায্য বলা হচ্ছে।
বিশেষ করে শান্তর সঙ্গে আগে কথা না বলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনকে বাজে দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। বিসিবির কাছ থেকে ‘অবজ্ঞা’র শিকার হওয়া শান্তকে ভালো করতে হতো টেস্টে। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে রান করতে হতো। ৪৫ রানে শীর্ষ তিন ব্যাটারকে হারানোর পর সেই কাজটিই করলেন তিনি।
টেস্টের শেষ ২০ ইনিংসে শান্তর ফিফটি মাত্র দুটি– ভারতের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে ৮২ আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটে ৬০ রান। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের তাঁর ব্যাটিংয়ের ভূমিকা ছিল সামান্যই। ইনজুরির কারণে ২০২৪ সালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে পারেননি। এ বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্ট হারের পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। তাই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন সাইকেল সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে ২৬ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারের জন্য। এই পরীক্ষায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসে পাস করে গেছেন তিনি। গতকাল ২৬০ বল মোকাবিলা করে ১৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন। আজও মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে পারলে গল টেস্টে হতে পারে ইতিহাস।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ন তর
এছাড়াও পড়ুন:
গোল ঠেকান, শিরোপা জেতান—তবু দোন্নারুম্মা, এদেরসনদের কদর কম কেন
আপনি গোলরক্ষক। তাহলে আপনার মতো দুর্ভাগা আর কে আছে!
কেন এমন বলা, সেটি বোঝার জন্য এবারের দলবদল মৌসুমে একটু চোখ বোলালেই হবে। এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদল আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে—বিশ্বসেরা গোলরক্ষক হলেও দলবদলের বাজারে খুব একটা কদর মেলে না। মাঠের অন্য পজিশনের খেলোয়াড়দের তুলনায় তাঁদের গুরুত্ব নেই বললেই চলে।
সবচেয়ে বড় উদাহরণ পিএসজির জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। পাশাপাশি ম্যানচেস্টার সিটির এদেরসন ও এসি মিলানের মাইক মাইনিয়ঁর কথাও বলা যায়। এ তিনজনই নিঃসন্দেহে বিশ্বের সেরা ১০ গোলরক্ষকের মধ্যে পড়েন। অনেকের চোখে আবার সেরা পাঁচেই জায়গা তাঁদের। কিন্তু তাঁরা যদি ফরোয়ার্ড, মিডফিল্ডার বা ডিফেন্ডার হতেন, তাহলে তাঁদের এজেন্টদের ফোন বেজেই চলত। আর তাঁদের ক্লাব চুক্তি নবায়নের জন্য পাগল হয়ে উঠত।
কিন্তু গোলকিপার হওয়ায় তাঁদের বাস্তবতা ভিন্ন। পিএসজি ইতিমধ্যেই লিলের তরুণ গোলরক্ষক লুকাস শেভালিয়েকে নিতে যাচ্ছে (যদিও এখনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি)। ম্যানচেস্টার সিটিও বার্নলির জেমস ট্রাফোর্ডকে এনেছে গোলরক্ষকদের জন্য ব্রিটিশ ট্রান্সফার ফি রেকর্ড গড়ে। দোন্নারুম্মার জন্য ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের, এদেরসনের জন্য গালাতাসারাইয়ের, আর মাইনিয়ঁর জন্য চেলসির আগ্রহের কথা শোনা গেলেও কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা