বিশ শতকের সত্তরের দশক থেকে শুরু করে কয়েক দশক ছিল বিশ্বায়নের স্বর্ণযুগ। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই এই প্রক্রিয়ায় আঘাত লাগতে থাকে। সে আঘাত এসেছে মূলত উন্নত দেশগুলো থেকে, যারা একসময় ছিল মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রধান প্রবক্তা।

২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট এবং কোভিড মহামারির মতো ধাক্কা ছাড়াও বিভিন্ন কারণে বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। প্রথমে অসন্তোষ ছিল বিশ্বায়নের সুফলের অসম বণ্টন আর তার কারণে অসাম্য বৃদ্ধি নিয়ে। বিভিন্ন সময় ডব্লিউটিওর (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পেছনে এটিই ছিল মূল কারণ। এই অসন্তোষের তীব্র বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১১ সালের ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলনে।

২.

সাম্প্রতিককালে বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে রক্ষণশীল শিবিরেও। তারা বিষয়টিকে দেখে মূলত পশ্চিমের উন্নত দেশগুলোর পরিপ্রেক্ষিত থেকে। তাদের মতে, বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া লাগামহীন হয়ে যাওয়ায় সেসব দেশের সরবরাহ শৃঙ্খল বিশ্ববাজার, বিশেষত চীনের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কোভিড মহামারির সময় সরবরাহে বিঘ্ন আর তার পরের উচ্চ মূল্যস্ফীতি এই মতবাদে ইন্ধন জুগিয়েছে।

বিশ্বায়ন সম্পর্কে রক্ষণশীলদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে মূলত চীনের উত্থান এবং চীন-ভীতি থেকে। কয়েকটি উপাত্ত থেকে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করা যাবে।

ক. ২০০১ সালে, যখন চীন ডব্লিউটিওতে যোগ দেয় তখন দেশটির জিডিপি ছিল বৈশ্বিক জিডিপির ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২২ সালে তা উঠে দাঁড়ায় ১৮ শতাংশে। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ছিল প্রায় ২৫ শতাংশ।

খ. ২০০১ সালে চীনের মাথাপিছু আয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ৯ শতাংশের কাছাকাছি। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ শতাংশে।

গ. বৈশ্বিক বাণিজ্যে চীনের অংশ ২০০১ সালে ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ২০২১ সালে তা উঠে যায় ১৫ দশমিক ১ শতাংশে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ১১ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে নেমে যায় ৭ দশমিক ৯ শতাংশে।

অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিকভাবেও চীনের প্রভাব বৃদ্ধি বিশেষভাবে দেখা যায় উন্নয়নশীল বিশ্বে চীনের উপস্থিতির দিকে তাকালে। আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে যে চীন উন্নয়নশীল বিশ্বের সঙ্গে তার সম্পর্ক জোরদার করছে মূলত অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে। কিন্তু তার বিভিন্ন কর্মসূচি, বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ থেকে দেখা যায় যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিও জড়িত হয়ে যায়।

৩.

চীনের উত্থান থেকেই উন্নত বিশ্বে জন্ম নিয়েছে দেশটি সম্পর্কে অস্বস্তি ও কিছুটা ভীতি। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম আমল থেকেই লিপ্ত হয়েছে চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধে, অন্যদিকে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোও দেশটি থেকে আমদানির ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে।

তবে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তার পরিসর ও ব্যাপ্তি বলা যায় বৈশ্বিক। এবার শুধু চীন নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের আমদানির ওপরই উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তাতে ইউরোপের উন্নত দেশ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে লেসোথোর মতো ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দেশ, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের পরিমাণ অতি সামান্য। তবে সঙ্গে রাখা হয়েছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাদাভাবে দর–কষাকষির সম্ভাবনা। বস্তুত এ রকম ভিন্ন ভিন্ন চুক্তি করাই মনে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কৌশলের একটি প্রধান দিক।

অবশ্য নব্বইয়ের দশক থেকেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে চুক্তির প্রবণতা বাড়ছিল। লক্ষ করার বিষয় যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান দেশগুলো এবং চীন এ ধরনের চুক্তিতে বড় ভূমিকা রাখে। ডব্লিউটিওর বিধিমালার আওতায় থেকেই এ ধরনের চুক্তি করা যায়। আঞ্চলিক বা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বৃদ্ধির প্রবণতা বিশ্বায়নের মূল চেতনার সঙ্গে কিছুটা হলেও সাংঘর্ষিক।

৪.

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ককে হাতিয়ার হিসেবে যেভাবে ব্যবহার করছেন, তা নজিরবিহীন। অতি উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে সাময়িকভাবে তার কার্যকারিতা স্থগিত রাখা, কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও দর–কষাকষিকে উৎসাহিত করা, নিজের দেশের বিচার বিভাগের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়া আর বিভিন্ন ধরনের পরস্পরবিরোধী বা অস্পষ্ট মন্তব্য করার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে লেগেছে আঘাত। এর ফলে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক।

বিভিন্ন দেশ থেকে আসা খবর যেমন যুক্তরাষ্ট্রের স্টক মার্কেটের ওঠানামা, ট্রেজারি বন্ডের দাম বেড়ে যাওয়া, চীনের শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া এবং কর্মী ছাঁটাই হওয়ার মতো খবরে এ রকম আভাসই পাওয়া যায়। আর আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) তার বৈশ্বিক ও প্রধান দেশগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।

বিশ্বায়নের ওপর আঘাত শুধু রক্ষণশীল ঘরানা থেকে নয়, অন্যরাও এতে ভূমিকা রেখেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় এসে চীনের ওপর ট্রাম্পের (প্রথম আমলে) আরোপ করা শুল্ক বজায় রেখেছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসও চীন থেকে আমদানির ওপর শুল্ক বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, যদিও বিস্তারিত প্রস্তাবগুলোতে কিছুটা পার্থক্য ছিল। তা ছাড়া চীন থেকে আমদানির ওপর বিধিনিষেধ বা শুল্কের অস্ত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নও ব্যবহার করছে। সুতরাং বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া যে আগের ধারায় আর চলবে না, এটি মোটামুটি নিশ্চিত।

৫.

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দুই ধরনের হুমকির মুখে আছে। একটি যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্কযুদ্ধ, যা এই মুহূর্তে চলমান। একে এককালীন বা সাময়িক সমস্যা বলে মনে হতে পারে।

তবে এটাকে এভাবে দেখা উচিত হবে না। কারণ, এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব মধ্য মেয়াদ পর্যন্ত চলতে পারে। এই যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে নিম্নগতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর তা হলে তার অভিঘাত বাংলাদেশের মতো রপ্তানিনির্ভর দেশের ওপর পড়বে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে চাহিদা কমে যেতে পারে, অন্যদিকে প্রবৃদ্ধিতে নিম্নগতি দেখা দিলে আমদানির ওপর (যার কিছুটা বাংলাদেশের রপ্তানি) নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

দ্বিতীয় যে হুমকির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে, তা বাংলাদেশ এবং তার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে, বিশেষ করে যারা বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তিতে উন্নত বিশ্বের আমদানিকারক দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর বিভিন্ন ধরনের শর্ত আরোপ করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আলোচনা, যেখানে রপ্তানিমুখী শিল্পে শ্রমমান উন্নয়ন একটি শর্ত হিসেবে আসছে। অনুরূপভাবে পরিবেশের ওপর প্রভাবও বাণিজ্যচুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রবণতা দেখা যায়।

৬.

বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্যাটির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদের জন্য সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করা যেতে পারে।

স্বল্প মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি শুল্কহার বৃদ্ধি ঠেকানোর লক্ষ্যে দেশটি থেকে আমদানি বাড়ানো একটি সহজ কৌশল বলে মনে হতে পারে এবং তার জন্য কোনো কোনো পণ্য (যেমন তুলা বা সয়াবিন) আমদানির উৎস বদল করতে হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি পরিমাণে তুলা কিনতে হলে বর্তমান উৎস থেকে আমদানি বন্ধ করতে অথবা কমাতে হবে। তেমনি বোয়িং বিমান ক্রয় করতে হলে তার প্রতিযোগী এয়ারবাস কোম্পানি সম্ভাব্য বাজার হারাবে।

আমদানির উৎসে এ ধরনের পরিবর্তন ভূরাজনীতি ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তা ছাড়া এটি কত দ্রুত করা যাবে, তা নির্ভর করবে চলতি চুক্তিগুলোর মেয়াদের ওপর এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির ব্যয়, পণ্যের গুণগত মান, আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় সময়—এসব বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে।

অনেক সময় রপ্তানির বাজারে বৈচিত্র্য আনার কথা বলা হয়। বিশেষ করে অতি উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে কেউ কেউ বলছেন, আমাদের বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে। মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। তবে এ প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা বলা দরকার।

মোট পোশাক রপ্তানিতে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সম্মিলিত পরিমাণ এত বেশি যে এই বাজারগুলোকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। উদাহরণস্বরূপ, ইইউতে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বেশ কয়েক বছর ধরেই ঋণাত্মক কেন, তার কারণ খুঁজতে হবে। কানাডার ক্ষেত্রেও এ প্রশ্ন প্রযোজ্য।

দ্বিতীয়ত, তুলনামূলকভাবে ছোট বাজারগুলোর মধ্যে কোথায় সম্প্রসারণের সম্ভাবনা আছে, তা দেখতে হবে। আর সেখানে মাথাপিছু আয় ও জনসংখ্যা দুই–ই বিবেচনায় রাখা দরকার। চীন ও ভারত জনসংখ্যায় অনেক বড় হলেও জাপান, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর বাজারের দিকে নজর রাখতে হবে।

৭.

ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পে শ্রমমান, কর্মপরিবেশ এবং বাইরের পরিবেশের ওপর প্রভাবের বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রথমোক্ত দুটি বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাতেও বাংলাদেশকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

তৈরি পোশাকের প্রধান বাজারগুলোতে অনিশ্চয়তা কাটাতে হলে দ্রুত এসব বিষয়ের সন্তোষজনক নিষ্পত্তি প্রয়োজন। চার দশক বয়সী শিল্পটিকে নাবালক বা দেশটি স্বল্পোন্নত—এ ধরনের অজুহাত বেশি দিন গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা নয়।

বৈশ্বিক অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কর্মকৌশল প্রণয়নে সামনে রাখতে হবে একটি বড় পটভূমি আর নিতে হবে একটি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি। 

রিজওয়ানুল ইসলাম অর্থনীতিবিদ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এমপ্লয়মেন্ট সেক্টরের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা। তাঁর সাম্প্রতিক বই উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন (২০২৫)।

মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র আমদ ন র ওপর প রব দ ধ প রক র য় ব শ ষ কর এ ধরন র অসন ত ষ পর প র র প রব প রথম দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডির সুযোগ, ১-৪ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা

জাপানে পড়াশোনা করার আগ্রহ থাকতে পারে অনেকের। এ আগ্রহে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য দারুণ এক সুযোগ নিয়ে এসেছে দেশটির হোনজো ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ ২০২৬-এ আবেদন শুরু হয়েছে। এই মর্যাদাপূর্ণ জাপানি বৃত্তির মাধ্যমে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যাবে। এতে রয়েছে আংশিক অর্থায়নের বৃত্তির পাশাপাশি মাসিক ভাতা, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই আন্তর্জাতিক বৃত্তি মূলত তাঁদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার লক্ষ্যেই প্রদান করা হয়। পাশাপাশি এটি জাপান এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে।

হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপের উদ্দেশ্য—

১৯৯৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে হোনজো ফাউন্ডেশনকে আন্তর্জাতিক বৃত্তি সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি প্রতিষ্ঠা করেন টাউন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মাসানরি হোনজো। তিনি ফাউন্ডেশনের প্রাথমিক মূলধন হিসেবে ২০ কোটি ইয়েন নগদ অর্থ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ শেয়ার দান করেন এ বৃত্তির জন্য। হোনজো ফাউন্ডেশন উন্নয়নশীল দেশের সেই সব শিক্ষার্থীকে সাহায্য করে, যাঁরা ভবিষ্যতে নিজেদের দেশকে উন্নয়নের পথে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি জাপানি শিক্ষার্থীরাও বিদেশে পড়াশোনার জন্য এ বৃত্তি পেয়ে থাকেন, যা বৈশ্বিক সংযোগ ও আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

আবেদনে যোগ্যতার শর্ত

হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তির জন্য আবেদনকারীদের নিচের শর্তগুলো পূরণ করতে হবে—

—জাপান ব্যতীত সব দেশের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।

—আবেদনকারীকে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া কোনো গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে বা ভর্তির পরিকল্পনা থাকতে হবে।

—বর্তমান শিক্ষার্থী, যাঁরা এখনো ভর্তি হননি বা কর্মরত, তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন, যদি তাঁরা এপ্রিল ২০২৬-এ ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করেন।

—যাঁরা ২০২৫ সালের শরৎকালীন সেমিস্টারে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরাও এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

—প্রফেশনাল গ্র্যাজুয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা সাধারণত যোগ্য নন, তবে বৈধ গবেষণা পরিকল্পনা জমা দিতে পারলে তাঁরা আবেদন করতে পারবেন।

বয়সসীমা

—পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর।

—মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছর।

—পড়াশোনা শেষ করার পর নিজ দেশের উন্নয়নে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার থাকতে হবে।

—আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতি আগ্রহী হতে হবে এবং ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অ্যালামনাই নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করতে হবে।

—দৈনন্দিন কথোপকথনের মতো জাপানি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে, কারণ, সাক্ষাৎকার কেবল জাপানি ভাষায় হবে।

বৃত্তির সুবিধা

হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক আর্থিক ও একাডেমিক সহায়তা প্রদান করে:

১। পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ।

২। মাসিক ভাতা।

—১ বা ২ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার ইয়েন।

—৩ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ১০ হাজার ইয়েন।

—৪ বা ৫ বছরের কোর্সের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন।

—জাপানে যাওয়ার জন্য ট্রাভেল গ্র্যান্ট দেওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।

—আর্থিক দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ।

—জাপানের সংস্কৃতিময় জীবনযাত্রা উপভোগের পাশাপাশি পড়াশোনার সুযোগ।

—বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্লোবাল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সুযোগ।

হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তিতে শিক্ষার্থীরা পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ পাবেন এবং পাবেন মাসিক ভাতা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডির সুযোগ, ১-৪ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা