দীর্ঘ ২০ মাস পর ভারত ও কানাডা দুই দেশই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিল। জি–৭–এর আসরে দুই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্ক কার্নির সাক্ষাৎকারের পর ঠিক হয়েছে, দুই দেশই হাইকমিশনারদের নিয়োগ করবে। স্বাভাবিক করে তুলবে সম্পর্ক।

জি–৭ শীর্ষ সম্মেলনের অবসরে গতকাল মঙ্গলবার দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়। তারপর কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে প্রচারিত এক বিবৃতিতে এ খবর জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশই ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্থিতিশীল করে তোলার দিকে এগিয়ে যাবে।

ওই বৈঠকের পর একই কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি জানান, সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলার প্রথম পদক্ষেপ হবে দুই দেশে হাইকমিশনার নিযুক্ত করা। দুই দেশই দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত নেবে।

দুই বছর আগে ২০২৩ সালে কানাডার শিখ নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার পর থেকে ভারত–কানাডা সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সে দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারতের হাত থাকার সন্দেহের কথা জানিয়েছিলেন। গত বছর অক্টোবরে কানাডায় ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় ভার্মাকে ফেরত পাঠানো হয়। ভারতও একই ব্যবস্থা নিয়েছিল। সেই থেকে দুই দেশেই কোনো হাইকমিশনার নেই। কূটনীতিক ও কর্মীর সংখ্যাও নগণ্য। হাইকমিশনের কাজ স্বাভাবিক করে তোলা যায়নি।

নিজ্জর ছিলেন স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র খালিস্তানের অন্যতম প্রবক্তা ও নেতা। তাঁর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা ভারত সরাসরি অস্বীকার করেছিল। কানাডাকে প্রমাণ দাখিল করতে বলেছিল। কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর অভিযোগ, বহু প্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও ভারত তদন্তে সহযোগিতায় রাজি হয়নি। ভারতের অভিযোগ, তাদের দাবি মতো কানাডা অভিযোগের সমর্থনে কোনো প্রমাণই দাখিল করেনি।

ট্রুডো সরকার সেই সময় ছিল সংখ্যালঘু। সরকারে টিকে থাকার জন্য শিখ সমর্থনের প্রয়োজন ছিল। কানাডায় বসবাসরত শিখদের একটা অংশ স্বাধীন খালিস্তানপন্থী। ভারতের অভিযোগ, ট্রুডো সরকার তাদের ভারতবিরোধী কাজে বাধা দেয়নি; বরং তাদের আন্দোলনে মদদ দিত। ট্রুডোর যুক্তি, শিখদের গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার আছে। সরকার তাতে বাধা দিতে পারে না।

জি–৭ শীর্ষ সম্মেলনে ভারত যোগ দিচ্ছে ২০১৮ সাল থেকে। এবার কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি শুরুতে ভারতকে আমন্ত্রণ জানাননি। শেষ মুহূর্তে তিনি ফোন করেন নরেন্দ্র মোদিকে এবং সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান। মোদি তা গ্রহণ করেন। গতকাল দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা করেছেন। বন্ধ থাকা বাণিজ্যসংক্রান্ত আলোচনা দ্রুত শুরুর ওপরেও দুই নেতা জোর দিয়েছেন। দুই নেতাই স্বীকার করেন, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কই প্রকৃত বন্ধন। তা যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য দুই দেশই যত্নবান হবে বলে ঠিক হয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর মোদি বলেন, চমৎকার পরিবেশে তাঁরা সব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। দুই দেশের সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের বন্ধুত্বকে গতিশীল করে তুলতে আমরা দুজনেই অপেক্ষায় রয়েছি।’ কার্নিও একই সুরে জানান, দুই দেশ একযোগে যেসব বিষয়ের মোকাবিলা করবে, ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ’ তার অন্যতম।

কার্নির কার্যালয় থেকে প্রচারিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আইনের শাসন, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার নীতির প্রতি অঙ্গীকারের ভিত্তিতে দুই দেশ সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

দুই নেতার সাক্ষাৎকারের পর মনে হচ্ছে, সম্পর্কের জমাট বাঁধা বরফ এখন দ্রুত গলার অপেক্ষায়। জি–৭–এর আসরে শেষ মুহূর্তে ভারতকে আমন্ত্রণ দুই দেশের সম্পর্কে গত ২০ মাসের আড়ষ্টতা কাটিয়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ভ ব ক কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সরকার নাগরিক সেবায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে: ইশরাক

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন অভিযোগ করে বলেছেন, ‌‘সরকার বিভিন্ন উপায়ে পরিকল্পিতভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সেবায় বাধা সৃষ্টি করছে। আমরা নগরবাসীকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অথচ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সেবায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং দায়ভার আমাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে।’ বুধবার নগর ভবনে কর্মচারী ও ‘আমরা ঢাকাবাসী’র চলমান আন্দোলনে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আন্দোলন চলমান থাকা অবস্থাতেও আমরা জরুরি সেবা চালু রেখেছি। কিন্তু সরকার থেকে‌ বিশেষ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কাজ করতে নিষেধ করেছেন বলে শুনতে পেয়েছি।’

ইশরাক হোসেন বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) জানতে পেরেছি, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ও সচিব আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তারা জন্ম নিবন্ধন বা নাগরিক সনদে স্বাক্ষর না করেন। একটা ন্যক্কারজনক কাজ করতে চাচ্ছে। তারা চাচ্ছে, সেবায় বিঘ্ন ঘটিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপাতে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গতকাল আসিফ মাহমুদ বলেছেন, আমি নাকি আইন লঙ্ঘন করেছি এবং ফৌজদারি অপরাধ করেছি। আমি তাঁকে বলতে চাই, আমি যদি অপরাধই করে থাকি তাহলে আপনারা সরকারে থেকেও কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করছেন না।’

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কেন নির্দেশ দিচ্ছেন না আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা এসব ভয় পাই না। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৭ বছর আমরা যুদ্ধ করেছি, জেল খেটেছি, গুম হয়েছি। যত ধরনের নির্যাতন আছে সহ্য করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছি।’

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে ইঙ্গিত করে ইশরাক বলেন, ‘আজকে যা কিছু হচ্ছে সবকিছুর জন্যই বর্তমান সরকার দায়ী। সরকার লোকজন দিয়ে এসব কথা বলাচ্ছে এবং আমাদের হেয়প্রতিপন্ন ও খাটো করার চেষ্টা করছে।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ