১৮ জুন, ২০০৫। কার্ডিফ, ইংল্যান্ড। ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে। মোহাম্মদ আশরাফুলের অসাধারণ সেঞ্চুরি। শেষ ওভারের প্রথম বলে জেসন গিলেস্পিকে ছক্কা মারার পরের বলে ১ রান নিয়ে আফতাব আহমেদের উদযাপন। সেই সময়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ। এবং ম্যাচের মতোই বিখ্যাত পরদিন প্রথম আলোয় প্রকাশিত সেই ম্যাচ রিপোর্টের শিরোনাম: ‘বাঘের গর্জন শুনেছে বিশ্ব।’ সেই জয়ের ২০ বছর পূর্তির দিনে উৎপল শুভ্রের সেই ম্যাচ রিপোর্ট পড়তে গেলে হয়তো নতুন করে রোমাঞ্চিত হবেন অনেক পাঠক।
বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে নতুন সূর্যোদয় হলো কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে। গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে কাল ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ! মোহাম্মদ আশরাফুলের অনবদ্য এক সেঞ্চুরিতেই এসেছে অস্ট্রেলিয়ার দর্প চূর্ণকারী এই অবিস্মরণীয় জয়।
সোফিয়া গার্ডেনে এর আগে যে চারটি ওয়ানডে ম্যাচ হয়েছে, তাঁর সব কটিতেই জিতেছে পরে ব্যাট করা দল। তাঁরপরও টসে জিতে কেন প্রথমে ব্যাটিং করলেন রিকি পন্টিং? চিরন্তন অস্ট্রেলীয় ঔদ্ধত্যকেই একমাত্র কারণ বলে মনে হচ্ছে না। মুখে যা-ই বলুন, ইংল্যান্ড সফরে প্রথম দু ম্যাচেই পরাজয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের এমনই নাড়িয়ে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচেও নিরাপদ পথেই হেঁটেছেন পন্টিং। কিন্তু তাতেও তাঁর শেষ রক্ষা হলো না।
আরও পড়ুনওয়ানডের যে ১০টি রেকর্ড (হয়তো) ভাঙবে না কোনো দিন৭ ঘণ্টা আগেসোফিয়া গার্ডেনের উইকেট বোলারদের যা দেওয়ার তা সকালের এক ঘণ্টায়ই দিয়ে দেয়, এরপর তা হয়ে যায় শুধুই ব্যাটসম্যানদের। তাঁরপরও প্রথমে ব্যাট করাটাই যে পন্টিংয়ের কাছে নিরাপদ বলে মনে হলো, তাঁর দুটি কারণ অনুমান করা যাচ্ছে। এক.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
শুল্ক আরোপের সময়সীমা পেছালেন ট্রাম্প, তারপরও কেন স্বস্তি নেই
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত তথাকথিত পাল্টা শুল্ক আজ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সই হবে। তা না হলে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে। কিন্তু বাণিজ্য চুক্তি না হওয়া সত্ত্বেও শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন সময়সীমা ১ আগস্ট।
এ বিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারেরা নতুন চুক্তির জন্য কিছুটা বাড়তি সময় পাচ্ছেন ঠিক, কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। মূলধারার অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ বরাবরই শুল্কের বিরুদ্ধে। কারণ, গবেষণায় দেখা গেছে, শুল্ক আরোপকারী দেশই শেষমেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়ে এবং ভোক্তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
অবশ্য ট্রাম্পের আগের আরোপিত শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি সেভাবে বাড়েনি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেমে যায়নি, চাকরিও কমেনি—অন্তত এখন পর্যন্ত। এ পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্র্রী স্কট বেসেন্ট মজা করে বলেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির বিষয়টি দৃশ্যমান নয়, বিষয়টি অনেকটা সেই কুকুরের মতো, যে ঘেউ ঘেউ করছে না। অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানে এর প্রভাব পড়তে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। বছরের শেষ দিকে এসে তা মারাত্মক আকার নিতে পারে।
শুল্ক হচ্ছে আমদানি পণ্যের ওপর কর, যে কারণে সরাসরি উৎপাদন খরচ ও পণ্যের দাম বেড়ে যায়। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানির অর্ধেকের বেশি হলো মধ্যবর্তী পণ্য, মূল পণ্য তৈরিতে যা ব্যবহৃত হয়।
ডার্টমাউথ কলেজের অর্থনীতিবিদ ডগ আরউইন বলেন, বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ বা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি কোনো গাড়ি আসলে বিভিন্ন দেশের উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। তিনি জানান, এসব উপকরণে শুল্ক আরোপ মানে খরচ বৃদ্ধি। যে ভার শেষমেশ ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
এটাই ঘটেছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে। ২০১৮ সালে ২৮৩ বিলিয়ন বা ২৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের আমদানিতে বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করা হয়। নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়, এ শুল্কের প্রভাব স্থানীয় বাজারে পণ্যের দামে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়েছিল।
বিশ্লেষকেরা বলেন, গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার তুলনামূলকভাবে কম থাকায় আমদানি পণ্য সস্তা ছিল। ফলে ২০০১ সাল থেকে আমদানি পণ্যের দাম খুব বেশি বাড়েনি, কিন্তু সেবার দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সম্প্রতি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যমূল্য কিছুটা বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলেও ধারণা।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাবশুল্ক আরোপ শুধু দামের ওপর নয়, দেশের মোট উৎপাদনেও (জিডিপি) নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ২০২০ সালে ১৫১টি দেশের ১৯৬৩-২০১৪ কালপর্বের তথ্য বিশ্লেষণ করে এক গবেষণা করা হয়। এতে দেখা যায়, এ শুল্ক দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে যায়।
শুল্ক কম থাকলে যেটা হয়, সেটা হলো যেসব পণ্যে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা আছে, দেশগুলো সাধারণত সেসব পণ্য উৎপাদনে জোর দেয়। কিন্তু শুল্ক বাড়লে শ্রমশক্তি ততটা দক্ষভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয় নয়।
শুল্কনীতির আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো এতে অনিশ্চয়তা বেড়ে যায়। বিশেষ করে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির অসংলগ্নতা। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যৎ করনীতির ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইনডিপেনডেন্ট বিজনেসের এক জরিপে দেখা গেছে, অনিশ্চয়তার ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোর পুঁজি বিনিয়োগ পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। পরিস্থিতি বোঝাতে তারা এ উপমা ব্যবহার করেছে, ‘কুয়াশার মধ্যে জাহাজ চালানো কঠিন।’
চাকরিতেও ক্ষতিঅবাক করার মতো হলেও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শুল্ক আরোপে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরিবর্তে বেকারত্ব কিছুটা বাড়ে। ডার্টমাউথের ডগ আরউইনের মতে, ২০১৮ সালের ইস্পাত শুল্কে কর্মসংস্থান কমে গেছে। কারণ, স্টিলশিল্পে যেসংখ্যক লোক কাজ করেন, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ কাজ করেন স্টিলনির্ভর বিভিন্ন খাতে।
২০১৮-১৯ সালের যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের এক গবেষণায় দেখা যায়, এতে উৎপাদন খরচ বাড়ে, কর্মসংস্থান কমে। প্রতিশোধমূলক শুল্কের (যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ওপর) কারণে ক্ষতি বৃদ্ধি হয়।
শুল্ক আরোপের জবাবে প্রতিপক্ষ দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক বসায়। ফলে ওই সব দেশের ক্রেতাদের কাছে সে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তখন চাহিদা কমে। এ বছর ট্রাম্প যখন নতুন শুল্কের ঘোষণা দেন, তখনই চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। পরে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে অস্থায়ী সমঝোতায় আসে।
অর্থনীতিবিদেরা স্বীকার করেন, মুক্ত বাণিজ্য যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক, তেমনি এর কিছু মূল্যও দিতে হয়। যেমন বিদেশি প্রতিযোগিতার কারণে অনেক মানুষ চাকরি হারান। বিষয়টি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মতো—সারা বিশ্বেই উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থানের হার কমছে।
তবে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ‘ন্যায়সংগত রূপান্তরের’ ধারণা কাজে আসতে পারে, যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পের শ্রমিকদের পুনঃপ্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন খাতে স্থানান্তর করা যায়।
মহামারির সময় সরবরাহ–শৃঙ্খল ভেঙে পড়ায় অনেক দেশ নিজস্ব উৎপাদনশীলতায় নির্ভর করার নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু অর্থনীতিবিদেরা বলেন, সে লক্ষ্যেও শুল্ক নয়; বরং নির্দিষ্ট খাতে প্রণোদনা বা ভর্তুকি কার্যকর পন্থা হতে পারে।
মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান জেপি মর্গানের ডেভিড কেলি মনে করিয়ে দেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুধু মুনাফার বিষয় নয়, এটি যুদ্ধ ও সংঘাত এড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশগুলোর একে অপরের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গভীর হলে দ্বন্দ্ব–সংঘাতে তাদের ক্ষতির ঝুঁকিও কম থাকে। ফলে যুদ্ধ এড়ানোর প্রবণতা বাড়ে।