দুই মাস ধরে পানের দাম কম। এর মধ্যেই কয়েক দফায় পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে পানের বরজের। এমন পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন কক্সবাজারের মহেশখালীর পানচাষিরা। চাষিরা জানান, তিন মাস আগে প্রতি বিড়া (৮০টি) পান ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এখন সেই পানের বিড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়।

সাগর আর নদীবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মানুষের আয়ের প্রধান উৎস মাছ ধরা এবং লবণ ও মিষ্টি পান চাষ। দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ পান চাষের ওপর নির্ভরশীল। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মহেশখালী উপজেলায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ হেক্টর চাষাবাদ হয়েছে পাহাড়ি জমিতে। পানের বরজের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। চাষির সংখ্যা ২৮ হাজারের মতো।

তবে এবার দুই মাস ধরে পানের দাম কমে গেছে। এর মধ্যে মে মাসের শেষ সপ্তাহ এবং চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দুই দফা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার অন্তত ৫০০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, গত মৌসুমেও প্রতি এক হেক্টর জমিতে পান চাষ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে ৪৮ লাখ টাকা। প্রতি হেক্টরে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন পান উৎপাদন হয়, যা বিক্রি করে প্রতি হেক্টরে চাষিদের আয় হয় প্রায় ৯৮ লাখ টাকা। এতে খরচ বাদ দিয়েও চাষিদের প্রতি হেক্টরে প্রায় ৪০ লাখ টাকা লাভ হয়। তবে এবার গত দুই মাস ধরে পানের দাম কমে গেছে। এর মধ্যে মে মাসের শেষ সপ্তাহ এবং চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দুই দফা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার অন্তত ৫০০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক যুগ ধরে উপজেলার বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ির ঢাল ও কৃষিজমিতে পান চাষ হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় বছরজুড়েই পান চাষ করা হয়। তবে কৃষিজমিতে হয় বছরে ৯ মাসের মতো। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে পান চাষ শুরু হয়ে জুন মাসের দিকে শেষ হয়। পানের বরজ থেকে পান তুলে নিয়ে চাষিরা স্থানীয় হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।

গত শুক্রবার উপজেলার পানের হাট জনতা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পান বেচাকেনা করতে শতাধিক চাষি পান নিয়ে বাজারে এসেছেন। কক্সবাজারের চকরিয়া, বান্দরবান, চট্টগ্রামের পটিয়া, বাঁশখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা পান কিনতে ভিড় করেছেন বাজারে। আকারভেদে প্রতি বিড়া পান ১০০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

দুই মাস আগেও যে পান ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন সেই পান বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। এই দামে পান বিক্রি করে খরচের টাকাও উঠবে না।আবদুল হাকিম, মহেশখালীর পানচাষি

পানের হাটে কথা হয় কালারমারছড়া ইউনিয়নের ইনুছখালীর বাসিন্দা চাষি আবদুল হাকিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগেও যে পান ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন সেই পান বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। এই দামে পান বিক্রি করে চাষাবাদের খরচের টাকাও উঠবে না।’

পটিয়া থেকে পান কিনতে আসা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলম বলেন, সরবরাহ বাড়ায় দুই মাস ধরে আড়তে পানের দাম কম গেছে। তাই তাঁরাও চাষিদের কাছ থেকে আগের চেয়ে কম দামে পান কিনছেন।

শাপলাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মনিপুর এলাকার পানচাষি সাইদুল ইসলামের ২০ শতক পানের বরজ রয়েছে। তিনি বলেন, গত বছরের অক্টোবরে পান চাষ শুরু করেন তিনি। চাষাবাদে তাঁর খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। এখন উৎপাদন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবার পানের যা দাম, লাভ দূরে থাক, লোকসান গুনতে হবে তাঁকে। একই গ্রামের বাসিন্দা ও আরেক পানচাষি নুরুল ইসলাম বলেন, তাঁর ১৫ শতকের পানের বরজটি গত ২৯ ও ৩০ মে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কবলে পড়ে। তাঁর অন্তত এক লাখ টাকার পানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা পান বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন মহেশখালীর জনতা বাজারে। গত শুক্রবার সকালে তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ন র দ ম কম প ন র বরজ উপজ ল র ১৫০ ট ক বরজ র

এছাড়াও পড়ুন:

এমন তো হবার কথা ছিল না: তারেক রহমান

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শেষ পর্যন্ত কোনো অগণতান্ত্রিক কিংবা অপশক্তির কাছে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের পথে হাটতে হয় কি-না, এমন শঙ্কাও জানিয়েছেন তারেক রহমান। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন বিপদের কথাও স্মরণ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।’

বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।’

দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তবে তাঁর বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।

শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তাঁর দল।

তারেক রহমান বলেন, ‘দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।’

প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে

সম্পর্কিত নিবন্ধ