ট্রলিং ট্রলার আটকের জেরে বরগুনার পাথরঘাটায় অবস্থিত কোস্টগার্ড স্টেশনে কর্মকর্তাদের ২০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন জেলে, মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন। গতকাল বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) আয়োজনে দু’পক্ষের মধ্যে দিনভর বৈঠক হয়। এতে তারা সমঝোতায় পৌঁছানোর পর বিকেল ৫টার দিকে অবরোধকারীরা কোস্টগার্ড স্টেশন এলাকা ছেড়ে যান। মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে সেখানে অবস্থান করছিলেন তারা।
এ ঘটনায় দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে। কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের দাবি, অবৈধ ট্রলিং ট্রলার আটক করায় মাছ ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিকদের উস্কানিতে জেলেরা হামলা করেন। অপরদিকে মাছ ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না দেওয়ায় ট্রলার আটক করে হয়রানির অভিযোগ তোলেন কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। জেলেদের ভাষ্য, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে সাগরে যাওয়ার সুযোগ দিতে ট্রলারপতি দুই লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা। যদিও এটি অস্বীকার করেন এসব কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে অবৈধ দুটি ট্রলিং ট্রলার জব্দ করে কোস্টগার্ড। এর প্রতিবাদে পাঁচ শতাধিক জেলে সন্ধ্যা থেকে কোস্টগার্ড স্টেশনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত ৯টার দিকে তারা কোস্টগার্ডের দুটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। এ সময়ে কোস্টগার্ড সদস্যরা লাঠিচার্জ করেন। তখন যোগ দেন মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে কোস্টগার্ড। একপর্যায়ে ভবনের মধ্যে কোস্টগার্ড সদস্যদের অবরুদ্ধ করে ফেলেন বিক্ষোভকারীরা।
নৌবাহিনী ও পুলিশ রাতে সেখানে গিয়েও জেলেদের সরাতে পারেনি। তারা অর্ধশত ট্রলার দিয়ে কোস্টগার্ড স্টেশনের বোটকুল (যেখানে কোস্টগার্ডের নৌযান রাখা হয়) ঘিরে রাখে।
যে ট্রলার দুটি কোস্টগার্ড আটক করে, সেগুলোর মালিক জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম কোম্পানি। তাঁর ভাষ্য, ১১ জুন সাগরে মাছ ধরার ওপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরগামী প্রতি ট্রলার থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছে কোস্টগার্ড। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার পর আবারও তারা টাকা দাবি করছেন।
মাসুম কোম্পানি বলেন, ‘যেসব ট্রলার মালিক টাকা দেননি, তাদের তালিকা আমার কাছে চেয়েছেন কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা। তা দিতে রাজি না হওয়ায় আমার বৈধ ট্রলারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে জব্দ করা হয়েছে।’
তাঁর ভাষ্য, জেলেসহ মাছ ব্যবসায়ীরা এ সময় কোস্টগার্ড অফিসের পাশে স্টিল ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এরপর সবাই বিক্ষোভ শুরু করেন। কোস্টগার্ড সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ করেন মাসুম।
দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে ইউএনওর সভাকক্ষে বুধবার বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বৈঠক হয়। সেখানে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রিফাত আহম্মেদ জানান, ইঞ্জিন ট্রলারে ট্রলিং স্থাপন করে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ। এমন ট্রলার সাগরমুখী হলে জব্দ করা হবে। মঙ্গলবার রাতে স্টেশনে হামলার ঘটনায় মামলা হবে।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, কোস্টগার্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। মামলা না করার শর্তে মালিকরা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছেন।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রিফাত আহম্মেদ চাঁদা আদায় বিষয়ে বলেন, উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারলে ব্যবস্থা নেবেন। তবে কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে তথ্যদাতারাও (সোর্স) এ কাজ করতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বরগ ন কর মকর ত দ র ম ছ ব যবস য়
এছাড়াও পড়ুন:
সরবরাহ পর্যাপ্ত, দামও নাগালে
‘হিমসাগর আমের কেজি ৮০’, ‘পেয়ারার কেজি নেন ৫০’– হ্যান্ডমাইকে রেকর্ড করা এমন প্রচারণা চালিয়ে ভ্যানগাড়িতে ফল বিক্রি করছেন শাহ আলম নামের এক বিক্রেতা। বুধবার বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় তাঁকে ঘিরে দেখা গেল ক্রেতার ভিড়। কেউ আম কিনছেন, কেউ কিনছেন জাম কিংবা পেয়ারা।
শাহ আলমের মতো আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীকে সেখানে ভ্যানগাড়িতে করে বিভিন্ন দেশি মৌসুমি ফল বিক্রি করতে দেখা যায়। প্রত্যেকের ভ্যানে রয়েছে হ্যান্ডমাইক। দাম কত? ক্রেতার এমন প্রশ্নের বারবার জবাব দেওয়ার বিকল্প হিসেবে তারা এই মাইক ব্যবহার করছেন।
শুধু ফার্মগেট নয়, রাজধানীর সব বাজার এখন ভরপুর বিভিন্ন মৌসুমি ফলে। কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি ফলের দাপট বেশি। প্রতিটি দোকান থরে থরে সাজানো আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ নানা মৌসুমি ফলে। দাম নাগালে থাকায় ক্রেতারাও কিনছেন চাহিদামতো।
বিভিন্ন জাতের আমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হচ্ছে আম্রপালি। খুচরা পর্যায়ে আকারভেদে এ জাতের আমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আম ৭০ থেকে ৮০, হিমসাগর ৯০ থেকে ৯৫ ও ল্যাংড়া আমের কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোম্বে, চায়না, জিরান নামের কয়েক ধরনের লিচু যাওয়া যাচ্ছে বাজারে।
প্রতি একশটি বোম্বে লিচু ৪০০ থেকে ৪৫৫ ও জিরান লিচু ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। কালো জামের দামও বেশি নয়। প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। লটকনের কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। পেয়ারার দর আরও কম। প্রতি কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার দেশি ফলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল থেকে, বিশেষ করে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরা এলাকা থেকে প্রতিদিন ট্রাকে করে হাজার হাজার মণ আম আসছে ঢাকায়। দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর ও নরসিংদী অঞ্চল থেকে আসছে লিচু। এভাবে অন্যান্য জেলা থেকেও নানা ফল আসছে ঢাকায়। তবে প্রায় কাছাকাছি সময়ে সব ফল চলে আসার কারণে দাম কমে গেছে বলে জানা তারা।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ফল বিক্রেতা মামুন হোসেন সমকালকে বলেন, প্রতিদিন রাতে ট্রাক ভরে প্রচুর পরিমাণে ফল আসছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। আম, জাম, লিচু, ড্রাগন সব একসঙ্গে আসছে। এ কারণে দাম পড়ে গেছে। তবে আম বেশি আসছে বলে জানান এই ফল বিক্রেতা।
কথা হয় পাইকারি ফল ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের সঙ্গে। আম বিক্রি করা এই ব্যবসায়ী বলেন, এবার উত্তরাঞ্চল থেকে এত বেশি ফল আসছে যে বিক্রি করে শেষ করা যাচ্ছে না। ফল পাকলে বেশি সময় রাখা যায় না, পচে যায়। তাই দাম কম হলেও তাড়াতাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়। পাইকারিতে জাত ও আকারভেদে আমের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা করে বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।
দাম নিয়ে ক্রেতার অনেকেই খুশি। ফার্মগেটে ভ্যানগাড়ি থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে হাঁড়িভাঙা জাতের পাঁচ কেজি আম কিনেছেন গৃহিণী সায়েরা আলম। একই সঙ্গে ১৫০ টাকা দরে ড্রাগন ফল কিনেছেন দুই কেজি। দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, ‘ঈদের আগে আমের কেজি কিনেছি ৯০ টাকা, ড্রাগন কিনেছি আড়াইশ টাকায়। সেই তুলনায় দাম এখন মোটামুটি অনেক কম।’
তবে দাম নিয়ে অসন্তোষও রয়েছে কারও কারও মধ্যে। কারওয়ান বাজার থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে এক পাল্লা (৫ কেজি) আম্রপালি কিনেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আমির হোসেন। কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে সমকালকে তিনি বলেন, ‘খবরে শুনতেছি ২০-৩০ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করছেন চাষিরা। তাদের খরচও উঠছে না। কিন্তু ঢাকায় কিনলাম ১০০ টাকায়। তাহলে আমাদের লাভ হইল কই! বেশি দামেই কিনতে হইল।’