প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ঢাকার বাসাবো এলাকায় সেলিম নামের এক ব্যক্তি শৌচাগার খুঁজছিলেন। অবশেষে একটি শৌচাগারের খোঁজ পেলেও সেখানে দীর্ঘ লাইনের মুখোমুখি হন তিনি। যখন অপেক্ষার পর তাঁর সিরিয়াল এল, তখন ভেতরে প্রবেশ করে তিনি যে দৃশ্য দেখলেন, তাতে স্বস্তির বদলে প্রবল অস্বস্তি ও বিরক্তি ঘিরে ধরল তাঁকে।
শৌচাগারের নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বিষহ। এই অভিজ্ঞতা শুধু সেলিমের একার নয়; এটি নগরজীবনের প্রতিদিনের বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নারী, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য এই পরিস্থিতি আরও বিড়ম্বনার।
সময়মতো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে না পারার ফলে দেখা দেয় নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি—পেটব্যথা, সংক্রমণ, ব্লাডার ও কিডনির জটিলতা, ঘন ঘন ডায়রিয়া এমনকি অন্ত্রের ক্যানসারের মতো গুরুতর রোগ। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এমন ভোগান্তি দুঃখজনক এবং বৈষম্যের মতো।
স্বাস্থ্যসম্মত গণশৌচাগারের সংকট সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের উচিত ঢাকা মহানগরের ব্যস্ততম এলাকা, যাত্রীছাউনি ও জনসমাগমস্থলে পর্যাপ্ত আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন শৌচাগার নির্মাণ করা। সেই সঙ্গে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। পরিষ্কার, নিরাপদ ও সহজপ্রাপ্য শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। তাই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করে এই উদ্যোগকে সফল করতে হবে।
সোনিয়া ক্যাথি
গভ.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজউক সার্ভারে ঢুকে নকশা অনুমোদন, গ্রেপ্তার ৩
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ইসিপিএস সার্ভার হ্যাক করে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে জালিয়াতি করে নকশা অনুমোদনের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজউকের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মারুফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৯ মে নকশা অনুমোদন-সক্রান্ত ইসিপিএস সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে মাত্র ১৭ মিনিটে একটি ভবনের অনুমোদন পাশের ঘটনাটি নজরে আসে রাজউক কর্তৃপক্ষের।
জলাভূমি ও হাইট রেস্ট্রিকশন থাকা ভূমিতে ১৫ তলাবিশিষ্ট ১৮৫ ইউনিটের এই সুউচ্চ ভবনটির নকশা সব বিধিকে পাশ কাটিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পাস করিয়ে নেয় অনুপ্রবেশকারীরা। পরে রাজউক কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি জানতে পেরে প্রাথমিক তদন্তে একই উপায়ে আরও তিনটি ভবনের নকশা অনুমোদন শেষ পর্যায়ে প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় পায়। তৎক্ষণাৎ সার্ভারটি বন্ধ করে মতিঝিল থানায় সেদিনই একটি জিডি করা হয়।
পাস করা নকশার সূত্র ধরে রাবেয়া বারী নামক এক প্রকৌশলীর সন্ধান পায় রাজউক, যার স্বাক্ষর নকশাগুলোতে পাওয়া যায়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে মতিঝিলের নীলনকশা নামের একটি কম্পিউটারের দোকান ও সেখানকার এক কর্মচারী স্বপনের নাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনির হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে গত ২২ মে একটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় মতিঝিলের নীলনকশা নামক দোকানটিতে। দোকানটির সঙ্গে অননুমোদিত নকশা অনুমোদনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। একই সঙ্গে দোকানটির মালিক এনামুলের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে রাজউকের নির্ধারিত ফি পরিশোধের প্রমাণ পাওয়া যায়।
এ ছাড়াও দোকানের কয়েকটি কম্পিউটারে ওই অবৈধ ভবনগুলোর নকশা পাওয়া যায়। এতে দোকানের মালিক এনামুল ও কর্মচারী স্বপনের সম্পৃক্ততা প্রতীয়মান হয়। মোবাইল কোর্ট চলাকালে তাদের কাউকেই না পাওয়া যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মচারীদের পুলিশের আওতায় নেওয়া হয়।
রাজউকের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, এমন সংবেদনশীল বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন এবং তাঁর নির্দেশনায় ৬ জুন রাজউক বাদী হয়ে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ধারাসহ দণ্ডবিধির ধারায় উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন।
তিনি বলেন, মামলার এজাহারনামীয় ২১ নম্বর আসামি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ‘নীলাভ নকশাঘর’ এর মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ এজাহারনামীয় ২২ ও ২৩ নম্বর আসামি সজীব ও মুকুলকে পুলিশ মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে।