ঋণ নিয়ে আত্মগোপনে সাবেক এমপির শ্যালক, বেতন বন্ধ দুই শিক্ষকের
Published: 20th, June 2025 GMT
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন মো. কামরুজ্জামান সাচ্চু। দুই বছর আগে তিনি ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে। আত্মগোপনে থেকেই ডাকযোগে পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে আর ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন না।
এমন অবস্থায় ওই ঋণের জামিনদার হিসেবে নাম থাকা দুই শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। যদিও ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা বলছেন, তাঁরা কোনো ঋণের জামিনদার হননি, কোথাও স্বাক্ষরও দেননি।
ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায়। অভিযুক্ত মো.
মো. কামরুজ্জামানের ঋণের কিস্তির টাকা না পেয়ে মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম ও শারমিন আক্তারের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর গত দুই মাস তাঁরা বেতন পাননি। এমনকি এবারের ঈদের বোনাসটিও তাঁরা পাননি। এতে পরিবার নিয়ে অসহায় জীবন পার করছেন তাঁরা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, মো. কামরুজ্জামান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংসদ সদস্যের শ্যালকের প্রভাব খাটিয়ে ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসতেন না। মাঝেমধ্যে এসে খতায় স্মারক করে চলে যেতেন। ১৫ বছরে তিনি এক প্রকার ক্লাস না করেই বেতনভাতা উত্তোলন করেছেন। ২০২২ সালে তিনি রূপালী ব্যাংক হাট খালিশপুর শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা কনজ্যুমার ঋণ নেন। ঋণ নেওয়ার সময় তাঁরই প্রতিষ্ঠানের দুজন শিক্ষকের নাম জামিনদার হিসেবে দেন। সেখানে তাঁদের স্মাক্ষরও করা রয়েছে।
শিক্ষক আরিফুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি কোনো ঋণপত্রে কখনো স্বাক্ষর করেননি। এটা ঋণগ্রহীতা নিজেই জালিয়াতি করে করেছেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁকে এলাকায় দেখা যায় না। তিনি বিদ্যালয়ে আসেন না। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সশরীর না এসে ডাকযোগে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। প্রথম দিকে তিনি ঋণের কিস্তি দিলেও গত ৫ মাস দেন না। যার ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জামিনদাতার ঘরে তাঁদের দুই শিক্ষকের নাম থাকায় তাঁদের বেতন আটকে দিয়েছেন। তাঁরা ব্যাংকে যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন ঋণগ্রহীতাকে না পাওয়া গেলে ঋণের টাকা জামিনদাতার কাছ থেকে নেওয়ার বিধান রয়েছে। তাই এই টাকা তাঁদের দিতে হবে।
আরেক শিক্ষক নাসরিন আক্তার বলেন, মো. কামরুজ্জামান ব্যাংক ঋণ নিতে তাঁদের স্বাক্ষর জাল এবং ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র চুরি করে ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেই সময় স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে জামিনদারকে ব্যাংকে হাজির করেননি। তাঁরা ওই কাগজে স্বাক্ষর না করেও এখন বেতন পাচ্ছেন না। তাঁরা স্বাক্ষর জাল করে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে হাট খালিশপুর রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বরাবর পৃথক লিখিত আবেদন করেছেন।
মো. কামরুজ্জামান এলাকায় না থাকায় ও ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জন কুমার বলেন, বিষয়টির একটা সমাধান হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। এর বেশি তিনি কিছু বলতে চান না।
ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানাভাবে চেষ্টা করেও কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন রূপালী ব্যাংক হাট খালিশপুর শাখার ব্যবস্থাক মোহাম্মদ তুহিন আলী। নিয়মানুযায়ী জামিনদার এখন ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেতনের জন্য ওই দুই শিক্ষক এসেছিলেন। তাঁদের দাবি তাঁরা কামরুজ্জামান সাচ্চুর ঋণপত্রে স্বাক্ষর করেননি। তাঁদের এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে বলা হয়েছে। যদি প্রমাণিত হয় স্বাক্ষর করেননি, তাহলে তাঁরা জামিনদার থেকে মুক্ত হবেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নিয়ে আত্মগোপনে সাবেক এমপির শ্যালক, বেতন বন্ধ দুই শিক্ষকের
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন মো. কামরুজ্জামান সাচ্চু। দুই বছর আগে তিনি ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে। আত্মগোপনে থেকেই ডাকযোগে পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে আর ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন না।
এমন অবস্থায় ওই ঋণের জামিনদার হিসেবে নাম থাকা দুই শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। যদিও ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা বলছেন, তাঁরা কোনো ঋণের জামিনদার হননি, কোথাও স্বাক্ষরও দেননি।
ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায়। অভিযুক্ত মো. কামরুজ্জামান সাচ্চু মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে কারিগরি শাখার সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনি ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খানের (চঞ্চল) শ্যালক। চাকরিকালে ভগ্নিপতির প্রভাব খাটিয়ে তিনি রূপালী ব্যাংক খালিশপুর শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ করিয়ে নেন বলে অভিযোগ।
মো. কামরুজ্জামানের ঋণের কিস্তির টাকা না পেয়ে মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম ও শারমিন আক্তারের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর গত দুই মাস তাঁরা বেতন পাননি। এমনকি এবারের ঈদের বোনাসটিও তাঁরা পাননি। এতে পরিবার নিয়ে অসহায় জীবন পার করছেন তাঁরা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, মো. কামরুজ্জামান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংসদ সদস্যের শ্যালকের প্রভাব খাটিয়ে ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসতেন না। মাঝেমধ্যে এসে খতায় স্মারক করে চলে যেতেন। ১৫ বছরে তিনি এক প্রকার ক্লাস না করেই বেতনভাতা উত্তোলন করেছেন। ২০২২ সালে তিনি রূপালী ব্যাংক হাট খালিশপুর শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা কনজ্যুমার ঋণ নেন। ঋণ নেওয়ার সময় তাঁরই প্রতিষ্ঠানের দুজন শিক্ষকের নাম জামিনদার হিসেবে দেন। সেখানে তাঁদের স্মাক্ষরও করা রয়েছে।
শিক্ষক আরিফুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি কোনো ঋণপত্রে কখনো স্বাক্ষর করেননি। এটা ঋণগ্রহীতা নিজেই জালিয়াতি করে করেছেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁকে এলাকায় দেখা যায় না। তিনি বিদ্যালয়ে আসেন না। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সশরীর না এসে ডাকযোগে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। প্রথম দিকে তিনি ঋণের কিস্তি দিলেও গত ৫ মাস দেন না। যার ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জামিনদাতার ঘরে তাঁদের দুই শিক্ষকের নাম থাকায় তাঁদের বেতন আটকে দিয়েছেন। তাঁরা ব্যাংকে যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন ঋণগ্রহীতাকে না পাওয়া গেলে ঋণের টাকা জামিনদাতার কাছ থেকে নেওয়ার বিধান রয়েছে। তাই এই টাকা তাঁদের দিতে হবে।
আরেক শিক্ষক নাসরিন আক্তার বলেন, মো. কামরুজ্জামান ব্যাংক ঋণ নিতে তাঁদের স্বাক্ষর জাল এবং ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র চুরি করে ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেই সময় স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে জামিনদারকে ব্যাংকে হাজির করেননি। তাঁরা ওই কাগজে স্বাক্ষর না করেও এখন বেতন পাচ্ছেন না। তাঁরা স্বাক্ষর জাল করে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে হাট খালিশপুর রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বরাবর পৃথক লিখিত আবেদন করেছেন।
মো. কামরুজ্জামান এলাকায় না থাকায় ও ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জন কুমার বলেন, বিষয়টির একটা সমাধান হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। এর বেশি তিনি কিছু বলতে চান না।
ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানাভাবে চেষ্টা করেও কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন রূপালী ব্যাংক হাট খালিশপুর শাখার ব্যবস্থাক মোহাম্মদ তুহিন আলী। নিয়মানুযায়ী জামিনদার এখন ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেতনের জন্য ওই দুই শিক্ষক এসেছিলেন। তাঁদের দাবি তাঁরা কামরুজ্জামান সাচ্চুর ঋণপত্রে স্বাক্ষর করেননি। তাঁদের এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে বলা হয়েছে। যদি প্রমাণিত হয় স্বাক্ষর করেননি, তাহলে তাঁরা জামিনদার থেকে মুক্ত হবেন।