মাল্টিপল মায়েলোমা একটি জটিল, কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত রক্ত ক্যানসার, যা প্লাজমা সেল নামে শ্বেত রক্তকণিকাকে আক্রান্ত করে।

প্লাজমা সেল আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ সেলগুলো অ্যান্টিবডি তৈরি করে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কিন্তু যখন এ কোষগুলো ক্যানসার আক্রান্ত হয় তখন তারা কার্যকর অ্যান্টিবডির পরিবর্তে এম প্রোটিন বা মনোক্লোনাল প্রোটিন নামে একধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি করতে থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করে।

এ রোগটির সূত্রপাত সাধারণত অস্থিমজ্জা থেকে। অস্থিমজ্জায় প্লাজমা সেল অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে এবং অন্যান্য সুস্থ রক্তকণিকার স্থান দখল করে নেয়। এর ফলে রোগীর শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। যেমন হাড়ের ব্যথা, রক্তশূন্যতা, বারবার সংক্রমণ, কিডনির সমস্যা ও হাড় দুর্বল হয়ে ভেঙে যাওয়া। অনেক সময় রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে মানসিক বিভ্রান্তি, বমিভাব ও অতিরিক্ত তৃষ্ণার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। মাল্টিপল মায়েলোমার লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকেই হাড়ের ব্যথা বা দুর্বলতাকে বয়সজনিত সমস্যা বলে ধরে নিয়ে চিকিৎসা নিতে দেরি করেন। অথচ প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসায় অনেক বেশি সুফল পাওয়া যায়।

রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু বিশেষ পরীক্ষা প্রয়োজন হয়, যেমন রক্তের প্রোটিন ইলেকট্রোফোরেসিস, মূত্র পরীক্ষা (প্রস্রাবে বেনস জোনস প্রোটিনের উপস্থিতি), অস্থিমজ্জা বায়োপসি, এক্স-রে বা এমআরআই এবং কিডনি ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা নির্ণয়। উন্নত ক্ষেত্রে ফ্লো সাইটোমেট্রি ও মলিকুলার টেস্ট ব্যবহার করা হয় রোগের ধরন ও অগ্রগতি বুঝতে। চিকিৎসায় রয়েছে কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট, রেডিওথেরাপি ও স্টেরয়েড থেরাপি। চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা ও রোগের ধাপের ওপর। বর্তমানে অনেক রোগী দীর্ঘদিন রেমিশন বা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে থেকে ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারছেন।

বাংলাদেশে এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা এখনো খুব কম। ফলে অনেক রোগী দেরিতে চিকিৎসা নেন এবং জটিল অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। তবে আশার কথা হলো দেশে এখন আধুনিক হেমাটোলজি সেবা, ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র ও দক্ষ চিকিৎসক রয়েছেন। এ রোগ প্রতিরোধের নির্দিষ্ট উপায় না থাকলেও সচেতনতা হতে পারে সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা। বয়স ৫০ পেরোলেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, অস্বাভাবিক হাড়ের ব্যথা বা দুর্বলতাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং বারবার সংক্রমণ হলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। মাল্টিপল মায়েলোমা ভয়াবহ হলেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। প্রাথমিক শনাক্তকরণ, আধুনিক চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তা—এই তিনের সমন্বয়ে রোগী একটি দীর্ঘ, স্বাভাবিক ও সম্মানজনক জীবন যাপন করতে পারেন।

ডা.

গুলজার হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, রক্তরোগ বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ল ট পল ম য় ল ম পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

‘তথ্য আপা’ প্রকল্পে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের অভিযান

‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পে অনিয়ম ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ছিল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় মহিলা সংস্থা’।

সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট দল এই অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, অভিযানের সময় প্রকল্পের ব্যয়–সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দলিল সংগ্রহ করা হয়। এসব রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে কমিশনে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবে এনফোর্সমেন্ট টিম।

এ প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, নারীদের ডিজিটাল প্রশিক্ষণ, সচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের অর্থ ব্যয় ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল।

আরও পড়ুন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পে ৫ মাস ধরে বেতন নেই, এখন অফিস ছাড়ারও নোটিশ১১ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ