মাল্টিপল মায়েলোমা: নীরব ঘাতক রক্তরোগ
Published: 20th, June 2025 GMT
মাল্টিপল মায়েলোমা একটি জটিল, কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত রক্ত ক্যানসার, যা প্লাজমা সেল নামে শ্বেত রক্তকণিকাকে আক্রান্ত করে।
প্লাজমা সেল আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ সেলগুলো অ্যান্টিবডি তৈরি করে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কিন্তু যখন এ কোষগুলো ক্যানসার আক্রান্ত হয় তখন তারা কার্যকর অ্যান্টিবডির পরিবর্তে এম প্রোটিন বা মনোক্লোনাল প্রোটিন নামে একধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি করতে থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করে।
এ রোগটির সূত্রপাত সাধারণত অস্থিমজ্জা থেকে। অস্থিমজ্জায় প্লাজমা সেল অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে এবং অন্যান্য সুস্থ রক্তকণিকার স্থান দখল করে নেয়। এর ফলে রোগীর শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। যেমন হাড়ের ব্যথা, রক্তশূন্যতা, বারবার সংক্রমণ, কিডনির সমস্যা ও হাড় দুর্বল হয়ে ভেঙে যাওয়া। অনেক সময় রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে মানসিক বিভ্রান্তি, বমিভাব ও অতিরিক্ত তৃষ্ণার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। মাল্টিপল মায়েলোমার লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকেই হাড়ের ব্যথা বা দুর্বলতাকে বয়সজনিত সমস্যা বলে ধরে নিয়ে চিকিৎসা নিতে দেরি করেন। অথচ প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসায় অনেক বেশি সুফল পাওয়া যায়।
রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু বিশেষ পরীক্ষা প্রয়োজন হয়, যেমন রক্তের প্রোটিন ইলেকট্রোফোরেসিস, মূত্র পরীক্ষা (প্রস্রাবে বেনস জোনস প্রোটিনের উপস্থিতি), অস্থিমজ্জা বায়োপসি, এক্স-রে বা এমআরআই এবং কিডনি ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা নির্ণয়। উন্নত ক্ষেত্রে ফ্লো সাইটোমেট্রি ও মলিকুলার টেস্ট ব্যবহার করা হয় রোগের ধরন ও অগ্রগতি বুঝতে। চিকিৎসায় রয়েছে কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট, রেডিওথেরাপি ও স্টেরয়েড থেরাপি। চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা ও রোগের ধাপের ওপর। বর্তমানে অনেক রোগী দীর্ঘদিন রেমিশন বা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে থেকে ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারছেন।
বাংলাদেশে এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা এখনো খুব কম। ফলে অনেক রোগী দেরিতে চিকিৎসা নেন এবং জটিল অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। তবে আশার কথা হলো দেশে এখন আধুনিক হেমাটোলজি সেবা, ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র ও দক্ষ চিকিৎসক রয়েছেন। এ রোগ প্রতিরোধের নির্দিষ্ট উপায় না থাকলেও সচেতনতা হতে পারে সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা। বয়স ৫০ পেরোলেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, অস্বাভাবিক হাড়ের ব্যথা বা দুর্বলতাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং বারবার সংক্রমণ হলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। মাল্টিপল মায়েলোমা ভয়াবহ হলেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। প্রাথমিক শনাক্তকরণ, আধুনিক চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তা—এই তিনের সমন্বয়ে রোগী একটি দীর্ঘ, স্বাভাবিক ও সম্মানজনক জীবন যাপন করতে পারেন।
ডা.
গুলজার হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, রক্তরোগ বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ল ট পল ম য় ল ম পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে খাদ্য পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক: উপদেষ্টা
দেশে বর্তমানে খাদ্য পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক, দাবি করে খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, “বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। যদি আমন মৌসুমেও ভালো ফলন হয়, তাহলে বিদেশ থেকে আর চাল আমদানির প্রয়োজন হবে না।”
শুক্রবার (২০ জুন) পটুয়াখালী সার্কিট হাউজে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় খাদ্য অধিদপ্তরের পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, চলতি বোরো মৌসুমে পটুয়াখালী জেলায় ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন ও ৫ হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন ধান এবং ৪ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
বরগুনা জেলার লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ মেট্রিক টন ধান ও ১ হাজার ৫১৩ মেট্রিক টন চাল। এর বিপরীতে ৫০০ মেট্রিক টন ধান এবং ১ হাজার ৩৪৯ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। বরগুনার ছয়টি এলএসডির (স্থানীয় সংগ্রহ কেন্দ্র) সম্মিলিত ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার মেট্রিক টন।
খাদ্য উপদেষ্টা বলেছেন, “আমরা যে ভালো অবস্থানে আছি, তা বলছি ঠিকই; তবে এ অবস্থান রক্ষা করা কঠিন। কারণ, খাদ্য ক্রমাগত খরচ হচ্ছে, আবার ক্রমাগত সংযোজনও হচ্ছে। এজন্য নিয়মিত তদারকি জরুরি।”
তিনি জেলা প্রশাসকদের স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্য সংগ্রহ ও বিতরণ কার্যক্রম ‘ক্লোজ মনিটরিং’ করার নির্দেশ দেন।
উপদেষ্টা বলেন, “এই বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মোট ১৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান এবং ১৪ লাখ টন চাল কেনা হবে।"
কৃষকদের জন্য ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ধানের দাম প্রতি কেজি ৩৬ টাকা ও চালের দাম ৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় কেজি প্রতি ৪ টাকা বেশি।
বোরো সংগ্রহ কার্যক্রম চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল শুরু হয়েছে। চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
সভায় জানানো হয়েছে, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হচ্ছে, যা চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ছিল ৮ হাজার ৫৯ কোটি টাকা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ওএমএস ও টিসিবি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছে। আগামী অর্থবছরে ওএমএস কার্যক্রমের আওতায় উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে। প্রতিটি পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি চাল ১৫ টাকা কেজি দরে সরবরাহ করা হবে। বর্তমানে এ কার্যক্রম বছরে পাঁচ মাস চালু থাকলেও আগামী অর্থবছর থেকে তা ছয় মাস কার্যকর থাকবে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ঢাকা/এএএম/রফিক