ইরান-ইসরায়েল একে-অপরের দিকে বৃহস্পতিবার রাতভর পালাপাল্টি হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা রাতে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ইরানে। ৬০টিরও বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান দিয়ে তেহরানের বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে। 

অন্যদিকে শুক্রবার ভোরে দক্ষিণ ইসরায়েলের বিরসেবা শহরে মাইক্রোসফট অফিসের কাছে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় ইসরায়েলের কিছু এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।   

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ১২০টি যুদ্ধাস্ত্র ছুড়েছে ইসরায়েল: আইডিএফ বলছে, হামলায় প্রায় ১২০টি যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা সামরিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র এবং একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি- ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত স্থাপনাগুলো তাদের হামলার লক্ষবস্তু ছিল।

আইডিএফ আরও জানিয়েছে, ইরান ইসরায়েলের ওপর হামলা চালিয়েছে। দেশের দক্ষিণে এ হামলার খবর পাওয়া গেছে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে এই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

দক্ষিণ ইসরায়েলে মাইক্রোসফট ভবনের কাছে আগুন জ্বলছে: বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ইসরায়েলের বিরসেবা শহরে মাইক্রোসফট অফিসের কাছে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। এতে কিছু আবাসিক ভবনে ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিনির্বাপক সদস্যদের ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ চালানোর ছবি দেখা গেছে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইরান আবারও গ্যাভ-ইয়াম উন্নত প্রযুক্তি পার্ককে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো শুরু করেছে। 

স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিরশেবা মাইক্রোসফট ভবনের কাছে আঘাত হেনেছে। 

ইসরায়েলের রেলওয়ে কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার কারণে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রেলস্টেশন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধারকারী দল সেখানে কাজ করছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোরে বিরসেবায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। এ সময় পুরো শহরে সতর্কসংকেত বেজে ওঠে।

ইসরায়েলের জরুরি উদ্ধারকারী দল মেগান ডেভিড অ্যাডম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ছবি প্রকাশ করেছে। 

এর আগে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের তেল আবিবসহ তিন জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলের হোলোন, তেল আবিব ও রামাতগনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।  ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হোলোন শহরে তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রামাতগন এলাকায় প্রায় ২০ জন হালকা আঘাত পেয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। তেল আবিবও হামলার শিকার হয়েছে।

ইসরায়েলের সাহায্য সংস্থাগুলো বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইরানি হামলায় মোট আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ জনে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটি ছিল ‌‘ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর ১৪তম শক্তিশালী সমন্বিত হামলা’ যা তারা বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনার ওপর চালিয়েছে। তবে এর চেয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা।

ইসরায়েলি পুলিশ সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেছে, তারা যেন ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতপ্রাপ্ত হাসপাতালে না যান। কারণ তারা সেখানে ‘বিপজ্জনক পদার্থ’ থাকার আশঙ্কা করছেন।
সম্ভবত গত কয়েক দিনের মধ্যে এটি ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। যেখানে ইসরায়েলের একজন সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, বহু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।

ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বিরশেবায় অবস্থিত সোরোকা হাসপাতাল ইরানের বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কবলে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে ধোঁয়ার বড় বড় কুণ্ডুলি, ভাঙা জানালা ও মানুষকে দেখা গিয়েছে চিৎকার করে করিডোর দিয়ে ছুটতে।

এক মুখপাত্র বলেছেন, হাসপাতালটি ‘ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। এখন মানুষদের এই এলাকা থেকে দূরে থাকতে বলা হচ্ছে। কারণ ‘বিপজ্জনক পদার্থের লিক’ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে পুলিশ সাধারণ মানুষকে ওই এলাকায় থেকে দূরে থাকার জন্য অনুরোধ করেছে।

ইসরায়েলের অন্যান্য স্থানে কমপক্ষে তিনটি আঘাতের খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।

বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, যখন ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এসে পড়ছিল তখন জেরুজালেম থেকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গিয়েছে তা অবশ্যই কয়েক দিনের মধ্যে সবচেয়ে জোরালো ছিল। ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের স্থানে ব্যাপক ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে ইসরায়েলের রামাত গান এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানের কিছু ছবি প্রকাশ পেয়েছে।

শুধু সোরোকা হাসপাতাল নয়, ইসরায়েলের আরও অনেক জায়গায় হামলার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখানে তেল আভিভের রামাত গান এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছবি ধারণ করা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র আশঙ ক ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু

কক্সবাজারে ডেঙ্গুর প্রভাব ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। একদিকে ডেঙ্গু, অন্যদিকে ম্যালেরিয়া-দুটি প্রাণঘাতী মশাবাহিত রোগই যেন চেপে ধরেছে জেলার মানুষকে। একসঙ্গে এই দুই রোগের প্রকোপে উদ্বেগ বাড়ছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরও।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের মধ্যেই কক্সবাজারে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৮৯ জন বাংলাদেশি এবং ৫১ জন রোহিঙ্গা। এরইমধ্যে ৫ জন রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন এ রোগে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের বেশিরভাগই পার্বত্য এলাকা থেকে ফিরে এসেছেন। বান্দরবানের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়িসহ পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় কাজ করতে গিয়ে তারা জীবাণুবাহী মশার শিকার হন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শান্তনু ঘোষ বলেন, 'বর্ষার এই সময় পাহাড়ি এলাকার অ্যানোফিলিস মশা সমতলে চলে আসে, ফলে সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। তাই কক্সবাজারে সংক্রমণ বাড়ছে এবং আরও বাড়তে পারে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যালেরিয়ার ওষুধ মজুত আছে। আক্রান্ত প্রত্যেককে আমরা আন্তরিক সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে চাই। তবে মানুষের সচেতনতা এই মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্র বড় ভূমিকা রাখতে পারে।'

তথ্য বলছে, জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতিও কম উদ্বেগজনক নয়। ২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১২৪ জন। এর মধ্যে স্থানীয় ১২০ জন এবং বাকি ২০০৪ জনই রোহিঙ্গা। কেবল ২৯ মে থেকে এ পর্যন্ত ১৫ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬৪ জন।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, ‘রোগী শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথেই আমরা বাসায় গিয়ে পরীক্ষা করি। রেজাল্ট পজিটিভ হলে ওষুধ দেই, অনেকেই ভালোও হয়ে যায়। কিন্তু রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে বাইরে গিয়ে কাজ করে আক্রান্ত হয়ে ফিরে আসার পর দেরিতে চিকিৎসা নেয়, তখন অনেক সময় তা মরণঘাতী হয়ে ওঠে।’

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে ম্যালেরিয়ায় ৫ জন এবং ২০২৩ সালে ১ জন মারা যান। অপরদিকে, গত বছর (২০২৪ সালে) কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২১ হাজার ৪৫৪ জন এবং মারা যান ৭ জন।

কক্সবাজারে প্রতিদিন পর্যটকদের ভিড়, আর ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী থাকা—এই বাস্তবতায় মশাবাহিত রোগ যেন দ্বিগুণ হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এ মুহূর্তে জনসচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ। নতুবা এই দুই রোগে মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ