যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ইরান হামলায় যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণ ‘অবৈধ’
Published: 20th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি সম্ভাব্য ইরান হামলায় ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণ আইনগতভাবে অবৈধ হবে; ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে এমনই সতর্কতা দিয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল লর্ড হারমার।
দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, লর্ড হারমারের আইনি পরামর্শ ব্রিটেনের সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রকে কঠোরভাবে সীমিত করেছে এবং স্টারমারের জন্য এক রাজনৈতিক সংকটে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত লর্ড হারমার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। আইনি মতামত দিয়ে হারমান বলেছেন, যুক্তরাজ্যের যেকোনো সামরিক বিষয়ে জড়িত থাকার ক্ষেত্র অবশ্যই আত্মরক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে অর্থাৎ শুধু মিত্রদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যে, ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণাত্মক অভিযানে নয়।
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের বেয়ারশেভা ইরানের ‘টার্গেটে’, টানা দুই দিন হামলা
ইরানের ‘লাল রেখা’ কী কী?
হারমানের আইনি পরামর্শটি পর্যালোচনা করা একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “অ্যাটর্নি জেনারেল উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, আত্মরক্ষা ছাড়া অন্য যেকোনো ভূমিকায় যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণ আইনগতভাবে টেকসই হবে না।”
মিডল ইস্ট মনিটর লিখেছে, এই সতর্কতা এমন সময়ে এসেছে যখন ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর বিমান হামলার নির্দেশ দিতে পারেন, যার জন্য ভারত মহাসাগরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য যৌথ ঘাঁটি ডিয়েগো গার্সিয়া ব্যবহার করা হতে পারে। যদিও ঘাঁটিটির সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাজ্যের হাতে, তবে সেখান থেকে যেকোনো মার্কিন হামলা চালাতে ব্রিটিশ অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
এটি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি কঠিন রাজনৈতিক প্রশ্ন তৈরি করেছে। স্টারমার একজন ঘোষিত আটলান্টিসিস্ট (যুক্তরাষ্ট্রমুখী কূটনীতির সমর্থক) এবং তিনি মার্কিন-ইসরায়েলি স্বার্থের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছেন। তবে আইনি প্রক্রিয়া এড়িয়ে একতরফাভাবে সামরিক অভিযানে যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণের চেষ্টা সরকারকে দেশে-বিদেশে বৈধতার সংকটে ফেলতে পারে।
এরই মধ্যে টনি ব্লেয়ারের ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক আক্রমণে যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণের সঙ্গে এই পরিস্থিতির তুলনা শুরু হয়েছে। ইরাক যুদ্ধকে বহু আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ অবৈধ বলে চিহ্নিত করেছেন। যুদ্ধটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে উপেক্ষা করে পরিচালিত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
বর্তমানে ইরানভিত্তিক ইসরায়েলের ‘অপ্ররোচিত’ বোমা হামলায় ৩০০ জনেরও বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল বলছে, এগুলো আত্মরক্ষার অংশ কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনে আত্মরক্ষার অধিকার কেবলমাত্র তাৎক্ষণিক হুমকির ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। ফলে এমন কোনো অভিযানে যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণ জেনেভা কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ব্রিটেন এখনই যুদ্ধ চায় না, বলছে সরকার: ‘ইরাক যুদ্ধের ভুল’ এড়াতে সতর্কতা
ব্রিটিশ সরকার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, তারা এখনই কোনো সামরিক সংঘাতে জড়াতে চায় না। ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা উত্তেজনা বাড়াতে নয়, বরং কমাতে চাই।”
এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে যে, সরকার কৌশলগতভাবে পরিস্থিতি ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি জরুরি আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে রয়েছেন। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব জন হিলি রয়্যাল এয়ার ফোর্সের সম্ভাব্য যুদ্ধে নামার পূর্বাপর পর্যালোচনা করছেন বলে জানা গেছে।
তবে যুক্তরাজ্য একেবারে নিষ্ক্রিয়ও নয়। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকার ইতোমধ্যে ছয়টি অতিরিক্ত টাইফুন যুদ্ধবিমান সাইপ্রাসে মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাজ্যের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছে। তবে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ডিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলায় যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণ নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এই সতর্ক অবস্থানের পেছনে বড় একটি কারণ হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক হুমকি, যেখানে তিনি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ‘খুব বড়’ প্রতিক্রিয়া জানানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে, ইরানও জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনো বিদেশি আগ্রাসনের মুখে মাথা নত করবে না এবং প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা স্পষ্টভাবে সতর্ক করছেন, স্টারমার সরকার যেন ইরাক যুদ্ধের ভুল না করে।
“আত্মরক্ষার বাইরের যেকোনো সামরিক অভিযান বা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই যেকোনো হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন,” এমনটাই বলছেন লর্ড হারমার।
এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে আইনগত ও নৈতিক দায়িত্বের ভারসাম্য বজায় রাখা যায়, বিশেষ করে যখন পূর্ববর্তী যুদ্ধ অভিজ্ঞতা এখনো জাতীয় স্মৃতিতে স্পষ্ট।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল য ক তর ষ ট র র র জন য সতর ক সরক র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
বনানীতে গুলিবিদ্ধ সেই হাসপাতালকর্মীর মৃত্যু
রাজধানীর বনানীতে গুলিতে আহত হওয়া বক্ষব্যাধি হাসপাতালের এক সাবেক কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা গেছেন। সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে তিনি মারা যান।
নিহত জামান হোসেন (৪০) বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন এবং একসময় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংগঠনের (অফিস ক্লাব) সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
জামান হোসেনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি বনানী থানা-পুলিশকে জানানো হয়েছে।
জামানের বড় ভাই সালাউদ্দিন জানান, গত শুক্রবার রাত সোয়া আটটার দিকে বনানী থানাধীন বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির অফিস ক্লাবের সামনে চা খেতে যান জামান। এ সময় হঠাৎ মুখোশধারী দুই দুর্বৃত্ত দূর থেকে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।
জামানের ডান চোখের পাশে গুলি লাগে। পরে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নিহত জামান হোসেন মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায়।