ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হওয়ার পর হতাশার মধ্যে পড়ে যান আফগান নাগরিক এনায়েতুল্লাহ আসগরি। আফগানিস্তানে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় পরিবার নিয়ে ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।

আর তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে হাজার হাজার আফগান নাগরিকের মতো ৩৫ বছর বয়সী আসগরি সম্প্রতি ইরান ছাড়তে বাধ্য হন। আসগরি বলেন, আফগানিস্তানে পৌঁছার পর একটা ভাড়া বাসা খুঁজে পাওয়াই কঠিন, আর পেলেও ভাড়া খুব বেশি, কোনো কাজও নেই। এখন কী করবেন, তা জানেন না। আসগরি বলেন, তারা (ইরান) আমাদের গুপ্তচর মনে করত এবং ঘৃণার চোখে দেখত। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পুলিশ এবং সরকার পর্যন্ত সবাই বলত, তোমরা আফগানরাই আমাদের শত্রু, তোমরাই আমাদের ভেতর থেকে ধ্বংস করেছ।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, এ সংঘাত আফগানিস্তানকেও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। দেশটি এমনিতেই মানবিক সংকটে জর্জরিত। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, সংঘাত চলাকালে ইরান প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশি আফগানকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এটি সংঘাতের আগের সময়ের ১৫ গুণ বেশি।

ইরানি কর্তৃপক্ষের অনুমান, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর ২০২২ সালে প্রায় ২৬ লাখ আফগান ইরানে কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বসবাস করছিলেন। ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি মঙ্গলবার বলেন, আমরা সব সময় ভালো আতিথেয়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার। অবৈধভাবে থাকা বিদেশিদের অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। এটাকে ‘বিতাড়ন’ না বলে ‘নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন’ হিসেবে দেখতে হবে। গুপ্তচরদের ধরতে সরকারের অভিযান সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি। আফগান সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে তৎক্ষণাৎ কোনো মন্তব্য করা হয়নি। 

জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে এ বছর বিদেশি, বিশেষ করে আফগানদের ধরপাকড় শুরু করেছে ইরান। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সময় ধরপাকড় আরও তীব্র হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিতাড়িত আফগান ও মানবিক সংস্থার কর্মকর্তারা।

এক সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তানে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি আরাফাত জামাল বলেন, আফগানদের জোর করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। কারণ, ইরানে ইসরায়েলি হামলার ক্ষোভ এসব আফগানের ওপরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, ইরানিরা একটি ভয়ানক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গেছেন, তা আমরা বুঝি, কিন্তু আফগানদের বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে বলেও মনে হয়। আফগানিস্তানের জন্য একটি বড় দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে বলে সতর্ক করেন তিনি। বলেন, পাকিস্তানও বাস্তুচ্যুত আফগানদের ফেরত পাঠাচ্ছে। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটির ব্যাংক খাত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত। এতে দেশটির অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তানের জন্য অনুদান দেওয়া ব্যাপক হারে বন্ধ করে দিচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে পুরো অঞ্চলের জন্য বড় ধরনের অস্থিরতার রসদ। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ