দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ৪৭টির মধ্যে ২৯তম সুপারিশ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে তার বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর, স্ববিরোধী ও হতাশাজনক হিসেবে উল্লেখ করেছে দুদক সংস্কার কমিশন।

সোমবার (৭ জুলাই) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুদকের তদন্ত কার্যক্রমে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতা এবং অনেক ক্ষেত্রে স্থবিরতা দূর করার লক্ষ্যে এসব সুপারিশ করা হয়েছে।

ওই সংবাদ সম্মেলনে ৪৭টি সুপারিশের ৪৬টিতেই বিএনপির সম্মতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দুদক সংস্কার কমিশন। তবে দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তির জন্য আদালতের আদেশ নেওয়ার বিদ্যমান বাধ্যবাধকতা বাতিল করার জন্য কমিশনের ২৯ নম্বর সুপারিশ সমর্থন করতে বিএনপির ব্যর্থতা উদ্বেগজনক।

আরো পড়ুন:

কমিশনারসহ এনবিআরের আরো ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে দুদকের অভিযান

বিশেষ করে, এ বাধ্যবাধকতা না রাখলে দুদকের কার্যক্রম বিলম্বিত হবে মর্মে যেভাবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা নিতান্তই বিভ্রান্তিমূলক ও স্ববিরোধী। কারণ এ বাধ্যবাধকতাই দুদকের দ্বায়িত্ব পালনে বিলম্বসহ অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকরতার অন্যতম কারণ, যা দুদকের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দুদক সংস্কার কমিশনের কাজের অংশ হিসেবে গবেষণা ও সংশ্লিষ্ট অংশিজনের নিকট প্রাপ্ত তথ্য-পরামর্শ বিশ্লেষণে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ ২৯-এ বলা হয়েছে, ‘আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ৩০৯ সংশোধনপূর্বক এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, দুদক কর্তৃক চাহিত কোনো তথ্যাদি বা দলিলাদির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না।’

আয়কর আইনের অধীন প্রস্তুতকৃত বিবৃতি, দাখিলকৃত রিটার্ন বা হিসাব বিবরণী বা দলিলাদি উক্ত আইনের ৩০৯ ধারায় গোপনীয় বলে বিবেচিত এবং আদালতের আদেশ ব্যতিরেকে এনবিআর দুদককে এসব তথ্যাদি বা দলিলাদি প্রদান করতে পারে না। এই আইন প্রণয়নের আগে দুদক এনবিআর থেকে যেসব তথ্যাদি বা দলিলাদি আদালতের আদেশ ব্যতিরেকেই পেতে পারত, এই আইন প্রণয়নের পর তা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এই সুপারিশে দ্বিমত পোষণ করে আদালতের অনুমতির প্রক্রিয়া বহাল রাখার পক্ষে বিএনপির অবস্থান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন কমিশনের প্রধান ড.

ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, “দুদকের কার্যক্রমে অহেতুক বিলম্ব রোধ করার জন্য আদালতের অনুমতি নেওয়ার বিদ্যমান বিধান অব্যাহত রাখার যুক্তি দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আদালতের অনুমতির বিধান রাখার ফলে দুর্নীতির তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা বৃদ্ধি এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রতিহত করার সুযোগ তৈরি হয়, যা দুদকের অকার্যকরতার অন্যতম কারণ।”

তিনি আরো বলেন, “সুপারিশ-২৯ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে এনবিআর-এর তথ্যে দুদকের অবাধ ও বিলম্বহীন অভিগম্যতা নিশ্চিত করা। আয়কর সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তার যুক্তিও ভিত্তিহীন। কারণ এ তথ্য দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে দুদকের প্রাপ্য, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন বা কোনো অযাচিতভাবে প্রকাশের জন্য নয়। তাছাড়া, যে তথ্য এনবিআরের কাছে থাকতে পারে, তা এনবিআরেরই সহযোগী সংস্থা দুদককে পেতে হলে আদালতের আদেশ লাগবে— কোনো যুক্তিতেই তা গ্রহণযোগ্য নয়।”

এনবিআরও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে এ ধরনের অভিগম্যতা পেয়ে থাকে। কমিশন জোরালোভাবে বিশ্বাস করে, উল্লিখিত সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতিবিরোধী তদন্তের গতি, কার্যকারিতা এবং নিরপেক্ষতা বাড়াবে—যা দুদকের স্বাধীনতা ও কার্যকরতার অভীষ্ট অর্জনের পূর্বশর্ত এবং আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

কমিশন আশা করে, বিএনপি এ বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

 ড. জামান আরো বলেন, “এই সুপারিশের উদ্দেশ্য কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘন নয়, বরং দুদকের তদন্ত কার্যক্রমে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর করা। কমিশন বিশ্বাস করে, এনবিআর ও দুদকের মধ্যে সমন্বয় এবং তথ্য আদান-প্রদান দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য এবং চলমান রাষ্ট্রসংস্কার উদ্যোগের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র র তদন ত র জন য ত র অন দল ল দ

এছাড়াও পড়ুন:

২০ লাখেরও বেশি করদাতার ই-রিটার্ন দাখিল

চলতি ২০২৫-২৬ কর বছরের করদাতারা অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ লাখের বেশি করদাতা ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন।

শনিবার (২৯ নভেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ছে

সাবেক এমপিদের ৩১ বিলাসবহুল গাড়ি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিল এনবিআর

চলতি বছরের ৪ আগস্ট অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ কর বছরের জন্য অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। করদাতারা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজে অনলাইনে রিটার্ন পূরণ করে নিমিষেই অনলাইনে দাখিল করতে পারছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানায়, এখন পর্যন্ত ২০ লাখের বেশি করদাতা ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে এ বছর ৬৫ (পঁয়ষট্টি) বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকগণ ব্যতীত সকল ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে। 

২০২৫-২৬ কর বছরে বেশ কয়েক শ্রেণির করদাতাগণকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি দেয়া হলেও তাঁরা ইচ্ছা পোষণ করলে অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। 

ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন সংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো করদাতা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলে সমর্থ না হলে ১৫ ডিসেম্বর মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের নিকট সুনির্দিষ্ট যৌক্তিকতাসহ আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত, যুগ্মকর কমিশনারের অনুমতিতে করদাতা পেপার রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।  
 
এবছর করদাতার পক্ষে তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। এছাড়া, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাগণের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তার পাসপোর্ট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ই-মেইল অ্যাড্রেস ইত্যাদি তথ্য [email protected] ই-মেইলে প্রেরণ করে আবেদন করলে আবেদনকারীর ই-মেইলে OTP এবং  Registration Link প্রেরণ করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাগণও ই-রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করে সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন।
 
কোনো ধরনের কাগজপত্র বা দলিলাদি আপলোড না করে করদাতারা তাদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে সহজে ঝামেলাহীনভাবে ঘরে বসেই ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং অথবা মোবাইল ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ ইত্যাদি) এর মাধ্যমে অনলাইনে আয়কর পরিশোধ করে  ই-রিটার্ন দাখিল করে তাৎক্ষণিকভাবে নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-রিটার্ন দাখিলের একনলেজমেন্ট স্লিপ এবং প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়কর সনদ প্রিন্ট নিতে পারেন। 

ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত বছরের মতো এবারও করদাতাদেরকে অনলাইন রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। করদাতারা ছাড়াও এ বছর করদাতার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি তথা আয়কর আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যন্টস, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যন্টস এবং চার্টার্ড সেক্রেটারিজগণকেও ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

সকল ব্যক্তি করদাতাকে ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০২৫-২০২৬ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের করতে অনুরোধ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

ঢাকা/নাজমুল/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম ও তাঁর স্ত্রীর আয়কর নথি জব্দ
  • স্ত্রীসহ সাবেক মেয়র তাপসের আয়কর নথি জব্দের আদেশ
  • অনলাইনে রিটার্ন জমা ২০ লাখ ছাড়াল
  • ২০ লাখেরও বেশি করদাতার ই-রিটার্ন দাখিল