দুদক সংস্কার নিয়ে বিএনপির অবস্থান বিভ্রান্তিকর: সংস্কার কমিশন
Published: 7th, July 2025 GMT
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ৪৭টির মধ্যে ২৯তম সুপারিশ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে তার বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর, স্ববিরোধী ও হতাশাজনক হিসেবে উল্লেখ করেছে দুদক সংস্কার কমিশন।
সোমবার (৭ জুলাই) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুদকের তদন্ত কার্যক্রমে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতা এবং অনেক ক্ষেত্রে স্থবিরতা দূর করার লক্ষ্যে এসব সুপারিশ করা হয়েছে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে ৪৭টি সুপারিশের ৪৬টিতেই বিএনপির সম্মতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দুদক সংস্কার কমিশন। তবে দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তির জন্য আদালতের আদেশ নেওয়ার বিদ্যমান বাধ্যবাধকতা বাতিল করার জন্য কমিশনের ২৯ নম্বর সুপারিশ সমর্থন করতে বিএনপির ব্যর্থতা উদ্বেগজনক।
আরো পড়ুন:
কমিশনারসহ এনবিআরের আরো ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে দুদকের অভিযান
বিশেষ করে, এ বাধ্যবাধকতা না রাখলে দুদকের কার্যক্রম বিলম্বিত হবে মর্মে যেভাবে বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা নিতান্তই বিভ্রান্তিমূলক ও স্ববিরোধী। কারণ এ বাধ্যবাধকতাই দুদকের দ্বায়িত্ব পালনে বিলম্বসহ অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকরতার অন্যতম কারণ, যা দুদকের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দুদক সংস্কার কমিশনের কাজের অংশ হিসেবে গবেষণা ও সংশ্লিষ্ট অংশিজনের নিকট প্রাপ্ত তথ্য-পরামর্শ বিশ্লেষণে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ ২৯-এ বলা হয়েছে, ‘আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ৩০৯ সংশোধনপূর্বক এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, দুদক কর্তৃক চাহিত কোনো তথ্যাদি বা দলিলাদির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না।’
আয়কর আইনের অধীন প্রস্তুতকৃত বিবৃতি, দাখিলকৃত রিটার্ন বা হিসাব বিবরণী বা দলিলাদি উক্ত আইনের ৩০৯ ধারায় গোপনীয় বলে বিবেচিত এবং আদালতের আদেশ ব্যতিরেকে এনবিআর দুদককে এসব তথ্যাদি বা দলিলাদি প্রদান করতে পারে না। এই আইন প্রণয়নের আগে দুদক এনবিআর থেকে যেসব তথ্যাদি বা দলিলাদি আদালতের আদেশ ব্যতিরেকেই পেতে পারত, এই আইন প্রণয়নের পর তা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এই সুপারিশে দ্বিমত পোষণ করে আদালতের অনুমতির প্রক্রিয়া বহাল রাখার পক্ষে বিএনপির অবস্থান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন কমিশনের প্রধান ড.
তিনি আরো বলেন, “সুপারিশ-২৯ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে এনবিআর-এর তথ্যে দুদকের অবাধ ও বিলম্বহীন অভিগম্যতা নিশ্চিত করা। আয়কর সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তার যুক্তিও ভিত্তিহীন। কারণ এ তথ্য দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে দুদকের প্রাপ্য, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন বা কোনো অযাচিতভাবে প্রকাশের জন্য নয়। তাছাড়া, যে তথ্য এনবিআরের কাছে থাকতে পারে, তা এনবিআরেরই সহযোগী সংস্থা দুদককে পেতে হলে আদালতের আদেশ লাগবে— কোনো যুক্তিতেই তা গ্রহণযোগ্য নয়।”
এনবিআরও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে এ ধরনের অভিগম্যতা পেয়ে থাকে। কমিশন জোরালোভাবে বিশ্বাস করে, উল্লিখিত সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতিবিরোধী তদন্তের গতি, কার্যকারিতা এবং নিরপেক্ষতা বাড়াবে—যা দুদকের স্বাধীনতা ও কার্যকরতার অভীষ্ট অর্জনের পূর্বশর্ত এবং আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কমিশন আশা করে, বিএনপি এ বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
ড. জামান আরো বলেন, “এই সুপারিশের উদ্দেশ্য কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘন নয়, বরং দুদকের তদন্ত কার্যক্রমে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর করা। কমিশন বিশ্বাস করে, এনবিআর ও দুদকের মধ্যে সমন্বয় এবং তথ্য আদান-প্রদান দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য এবং চলমান রাষ্ট্রসংস্কার উদ্যোগের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র র তদন ত র জন য ত র অন দল ল দ
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশাল বোর্ডের ১২ কলেজে কেউ পাস করেননি
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৩৪৯টি কলেজের মধ্যে ১২টির কোনো শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। অপরদিকে, মাত্র দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
৩৪৯টি কলেজ থেকে ৩৭ হাজার ৬৬ জন এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে যে ১২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেননি, সেগুলো হলো— বরগুনার বামনা সরকারি সারওয়ারজান পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, বরিশাল সদরের কমার্স কলেজ, বাবুগঞ্জের মোহনগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেহেন্দিগঞ্জের আন্ধারমানিক ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভোলার বোরহানউদ্দিনের দেলুয়া তালুকদার বাড়ি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লালমোহনের বালুরচর দালাল বাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভোলা সদরের ভাষা শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় ও মেদুয়া কলেজ, ঝালকাঠির নলছিটির রাঙ্গাপাশা সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আব্দুস সালাম কলেজ, পটুয়াখালী সদরের আউলিয়াপুর সাবিনা আক্তার হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দুমকি উপজেলার দুমকি নাছিমা কেয়ামত আলী মহিলা কলেজ।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার ১৯৭টি কলেজের ৫০ শতাংশের বেশি পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। ৫০ শতাংশের নিচে পাস করেছেন ১৩৮টি কলেজে। ২০ শতাংশের কম শিক্ষার্থী পাস করেছেন ৬ কলেজে, ১৫ শতাংশের কম শিক্ষার্থী পাস করেছেন ৬ কলেজে এবং ১০ শতাংশের কম শিক্ষার্থী পাস করেছেন দুটি কলেজ।
এ বছর বরিশাল বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে ভালো করেছেন। এ বিভাগে পাসের হার ৭১ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৮০৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৮২ জন মেয়ে এবং ৩২৪ জন ছেলে। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৬০ দশমিক ২১ শতাংশ। এই বিভাগে ৭৭৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৬৬ জন মেয়ে এবং ১১১ জন ছেলে। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৬২ দশমিক ০৪ শতাংশ। এ বিভাগে মোট ৯১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৯ জন মেয়ে এবং ২২ জন ছেলে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে গড় পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশে। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৪ হাজার ১৬৭ জন, এবার পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৬৭৪ জন।
ঢাকা/পলাশ/রফিক