দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মব (সংঘবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) নিয়ে উদ্বিগ্ন তরুণেরা। তাঁরা চান সাধ্যের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা। সংস্কারের ক্ষেত্রেও তাঁরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকারে দেখতে চান।

তরুণদের এই মনোভাব উঠে এসেছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও একশনএইডের একটি জরিপে। জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তরুণদের ভাবনা–সম্পর্কিত এই জরিপ গতকাল সোমবার প্রকাশ করা হয়।

জরিপে তরুণদের কাছে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ‘নিচের আর্থসামাজিক অবস্থা জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে—আপনি কি একমত?’ জবাবে বারবার অগ্নিসংযোগ, দস্যুতা (ছিনতাই) ও চুরি নিয়ে উদ্বেগের ক্ষেত্রে একমত পোষণ করেছেন ৮০ শতাংশ তরুণ উত্তরদাতা। দ্বিমত পোষণ করেছেন ৮ শতাংশের কম। বাকিদের মতামত ছিল না।

‘মব’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রায় ৭২ শতাংশ উত্তরদাতা। জনপরিসর নিরাপত্তাহীন (বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে)—এ বিষয়ে একমত ৬১ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা। বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন ১৬ শতাংশ। অন্যায্য ও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট গ্রেপ্তার ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন ৫৬ শতাংশ তরুণ। এ প্রশ্নে দ্বিমত পোষণ করেছেন ১৫ শতাংশ।

জরিপে তরুণদের কাছে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ‘নিচের আর্থসামাজিক অবস্থা জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে—আপনি কি একমত?’ জবাবে বারবার অগ্নিসংযোগ, দস্যুতা (ছিনতাই) ও চুরি নিয়ে উদ্বেগের ক্ষেত্রে একমত পোষণ করেছেন ৮০ শতাংশ তরুণ উত্তরদাতা। দ্বিমত পোষণ করেছেন ৮ শতাংশের কম। বাকিদের মতামত ছিল না।

জরিপে উঠে এসেছে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর ৭৮ শতাংশ তরুণের ব্যক্তিগতভাবে সুনির্দিষ্ট প্রত্যাশা ছিল। সাধ্যের মধ্যে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রত্যাশা ছিল প্রায় ৭৩ শতাংশ তরুণের। ৬৭ শতাংশ তরুণের প্রত্যাশা সাধ্যের মধ্যে উন্নত ও সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা। এরপর রয়েছে রাজনৈতিক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দূর করা। এই প্রত্যাশার কথা বলেছেন ৬৫ শতাংশের বেশি তরুণ। তরুণদের প্রত্যাশার মধ্যে শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা, জনপরিসর ও অনলাইনে নিরাপত্তা, সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতি, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ইত্যাদিও রয়েছে।

দেশের আট বিভাগের ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২ হাজার তরুণের (নারী ও পুরুষ) ওপর জরিপটি করা হয়েছে। গত ২০ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত জরিপে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে গ্রাম ও শহরাঞ্চল থেকে উত্তরদাতা নেওয়া হয়েছে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরিপে আমরা দেখেছি, তরুণেরা আইনশৃঙ্খলা ও মব পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এটা নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার খুব একটা সফলতা দেখাতে পারেনি।’

তরুণেরা কোন সংস্কার চান

জরিপে কর্মসংস্থান, অভিবাসন, রাজনীতি, নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের পারদর্শিতা, সংস্কার ইত্যাদি নানা বিষয়ে তরুণদের প্রশ্ন করা হয়।

জরিপে প্রশ্নের জবাবে ৫৬ শতাংশ তরুণ সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন মাত্রায় অবহিত থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। ৪৪ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের এ বিষয়ে মোটেও ধারণা নেই। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ নিয়ে সংস্কারের কথা জানার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন ৫০ শতাংশ বা তার বেশি তরুণ। বাকি ক্ষেত্রে হার ৫০ শতাংশের কম। শ্বেতপত্র কমিটি সম্পর্কে শুনেছেন সবচেয়ে কম, ৬ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ।

সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়িত হবে কি না, এ প্রশ্নে অর্ধেকের কম তরুণ কমবেশি আশাবাদ দেখিয়েছেন। বাকিরা তেমন আশাবাদী নন অথবা নিশ্চিত নন। তরুণেরা কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার চান, সেই প্রশ্নও করা হয়েছিল। উত্তরে সবচেয়ে বেশি জোর এসেছে শিক্ষা (৯৪ শতাংশ), স্বাস্থ্য (৯২ শতাংশ), শ্রমবাজার (৯০ শতাংশ), মানবাধিকার, অর্থাৎ নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা (৮৯ শতাংশ), প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার (৮৫ শতাংশ) ইত্যাদি ক্ষেত্রে।

অনুষ্ঠানে সেলিম রায়হান বলেন, সংস্কারের একটি সুযোগ এখন এসেছে। এটা কাজে লাগাতে না পারলে বড় পরিবর্তন আনা যাবে না। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশার বাস্তবায়ন হবে না।

জরিপে আমরা দেখেছি, তরুণেরা আইনশৃঙ্খলা ও মব পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এটা নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার খুব একটা সফলতা দেখাতে পারেনি।সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হানসরকার কেমন করছে

জরিপে ১৩টি বিষয় উল্লেখ করে সে ক্ষেত্রে সরকার কেমন করছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। দেখা গেছে, তিনটি ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি তরুণ সরকারকে সফল উল্লেখ করেছেন—মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষা (৫৬ শতাংশ), সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা (৫৩ শতাংশ) ও অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনা (৫১ শতাংশ)।

বেশি সংখ্যক তরুণ সরকারকে ব্যর্থ বলে উল্লেখ করেছেন রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ (৪০ শতাংশ), নারীর নিরাপত্তা (৩৯ শতাংশ), কর্মসংস্থান সৃষ্টি (৩৮ শতাংশ), স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ (৩৮ শতাংশ) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় (৩৫ শতাংশ)। উল্লেখ্য, সফলতা ও ব্যর্থতার প্রশ্নে বড় অংশের উত্তরদাতা কোনো মতামত দেননি।

৪০ শতাংশের কম উত্তরদাতা সরকারকে সফল বলেছেন, এমন খাতের মধ্যে আরও রয়েছে বিনিয়োগ পরিবেশ, আমলাতন্ত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।

জরিপে প্রশ্নের জবাবে ৭৭ শতাংশ তরুণ বলেছেন, তাঁরা আগামী নির্বাচনে ভোট দেবেন। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে কি না, সেই প্রশ্নে আশাবাদের মাত্রায় ভিন্নতা রয়েছে। ৪১ শতাংশ মোটামুটি, ২৮ শতাংশ অত্যন্ত ও ১২ শতাংশ পুরোপুরি আশাবাদী। ১৩ শতাংশ আংশিক আশাবাদী। ৬ শতাংশ মোটেও আশাবাদী নয়।

জরিপের তথ্যমতে, তরুণদের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে রাজনীতির তথ্য পান। এরপর রয়েছে টেলিভিশন (৪৮ শতাংশ), বন্ধুবান্ধব (৩৭ শতাংশ), সংবাদপত্র (১৩ শতাংশ) এবং বাকিরা অন্যান্য মাধ্যম থেকে তথ্য পান।

কোন দল কত শতাংশ ভোট পাবে, সে সম্পর্কে ধারণা জানতে চাওয়া হয়েছিল তরুণদের কাছে। উত্তরদাতাদের মতে, আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি—৩৮ দশমিক ৭৬ ভোট বিএনপি পাবে। এরপর জামায়াতে ইসলামী ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট পাবে। এ ছাড়া বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত থাকা আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পায় তাহলে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট পাবে বলে ওই তরুণেরা মনে করেন। তাঁদের মতে, জামায়াতের বাইরে অন্য ইসলামিক দলগুলো ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে। জাতীয় পার্টি পাবে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ভোট।

সেলিম রায়হান বলেন, এখানে যে মতামত এসেছে, তা শুধু বাছাই করা ওই তরুণদের মতামত। এটাকে দেশের পুরো জনগোষ্ঠীর বা অন্যান্য বয়সের মানুষের মতামত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত হবে না। বিশেষ করে রাজনীতির মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে তা কখনোই করা সংগত হবে না।

জরিপের তথ্যমতে, তরুণদের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে রাজনীতির তথ্য পান। এরপর রয়েছে টেলিভিশন (৪৮ শতাংশ), বন্ধুবান্ধব (৩৭ শতাংশ), সংবাদপত্র (১৩ শতাংশ) এবং বাকিরা অন্যান্য মাধ্যম থেকে তথ্য পান।

রাজনীতিতে যেসব তরুণ আসেন, তাঁরা সুযোগ–সুবিধা পাওয়ার আশায় নাকি সত্যিকারের পরিবর্তন বা আদর্শ নিয়ে আসেন, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিররাজনীতিতে আগ্রহ নেই

রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ফলাফল তুলে ধরেন সানেমের গবেষণা সহযোগী সাফা তাসনীম। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ভূঁঞা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ কুদ্দুছ আলী সরকার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

জরিপে ৮৩ শতাংশ তরুণ বলেছেন, তাঁরা রাজনীতিতে যোগ দিতে আগ্রহী নন। এর বড় তিনটি কারণ হলো রাজনৈতিক সহিংসতা, রাজনীতিতে দুর্নীতি ও নৈতিকতার ঘাটতি এবং পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নিরুৎসাহিত করা। পেশাজীবনে তরুণেরা সরকারি চাকরিতে বেশি আগ্রহী।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, রাজনীতিতে যেসব তরুণ আসেন, তাঁরা সুযোগ–সুবিধা পাওয়ার আশায় নাকি সত্যিকারের পরিবর্তন বা আদর্শ নিয়ে আসেন, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তিনি আরও বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব সব সময় তরুণেরাই দিয়েছেন, কিন্তু নীতিনির্ধারণে গিয়ে আর এই তরুণেরা থাকেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ত অন ষ ঠ ন পর স থ ত র জন ত ক র মত মত দ র মত শ র কম তর ণ স তর ণ র শ তর ণ হয় ছ ল বল ছ ন প রক শ দশম ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিস্তর অভিযোগ ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, বেআইনি আটকসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা ধ্বংস করে সেগুলোকে রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়েছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডসহ গুম ও অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছে, সেটি নিশ্চিতভাবেই ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। কিন্তু এ সরকারের ১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যু, মব সহিংসতায় মৃত্যুসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোও সমানভাবে উদ্বেগজনক।

মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’–এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৪ মাসে ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি—৯টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল; আর গত তিন মাসে ঘটেছে ১১টি। ৪০ জনের মধ্যে গুলিতে মারা গেছেন ১৯ জন, নির্যাতনে মারা গেছেন ১৪ জন, পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৭ জনকে। গত তিন মাসে যে ১১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন; সেখানে পুলিশ, যৌথ বাহিনী ও সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে।

অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) অক্টোবর মাসের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসে কারা হেফাজতে যেখানে ৮ জন মারা যান, এক মাস পর সেখানে ১৩ জন মারা গেছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যা ও কারা হেফাজতে মৃত্যুর এই তথ্য যেমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়, একই সঙ্গে জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি করে। মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি আর মাঠের বাস্তবতার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক, সেই চিত্রই পরিষ্কার করে তুলে ধরে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে মব সহিংসতা ও রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যুর পরিসংখ্যানও দিয়েছে অধিকার। এ সময়ে মব সহিংসতায় ১৫৩ জন এবং রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৮১ জন নিহত হয়েছেন। এমএসএফ জানাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসে ৫২টি ও অক্টোবর মাসে ৬৬টি অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কোনো পরিসংখ্যানই স্বস্তিদায়ক নয়। এই চিত্র সরকারের দুর্বলতা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ভঙ্গুরতারই প্রতিচ্ছবি। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে ও ভারত থেকে পুশ ইন ঠেকাতে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতেও সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক চর্চার বাইরে গিয়ে দেখার অবকাশ নেই। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে লেখা খোলাচিঠিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক ছয়টি মানবাধিকার সংগঠন, ছয়টি নির্বিচার গ্রেপ্তার বন্ধ এবং গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার ও খারিজের আহ্বান জানিয়েছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যুর মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের লাগাম টানতে হলে অবশ্যই সবার আগে বাহিনীগুলোর ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কারের প্রশ্নটি সে কারণেই সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর তাদের সুপারিশে র‍্যাব বিলুপ্তি এবং বিজিবিকে সীমান্ত রক্ষা ও ডিজিএফআইকে সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া বাস্তবে কোনো সংস্কার করতে পারেনি। ফলে নির্বাচন–পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের আমলেও বাহিনীগুলোকে রাজনৈতিক ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাচ্ছে।

শুধু প্রতিশ্রুতি আর কথায় নয়, বাস্তবেও মানবাধিকার রক্ষায় সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যুর অবসান হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: সাইফুল হক
  • জুলাই সনদে সই না করা অংশের দায় নেব না: মির্জা ফখরুল
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি
  • এ সপ্তাহের রাশিফল (১-৭ নভেম্বর)
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান: তুরস্ক
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল