টিপটিপ বৃষ্টি ঝরছে। প্রকৃতির এমন ছন্দময় আবহে একমনে বাঁশি বাজিয়ে যাচ্ছেন সত্তোরোর্ধ গণেশ চন্দ্র দাস। ভরদুপুরে রাজশাহীতে রথের মেলায় চলতি পথচারী ছাড়া আর কোনো দর্শনার্থী নেই। তাঁর বাঁশি কে শুনছেন আর কে শুনছেন না—এসব নিয়ে যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নজরে এল, গণেশ চন্দ্রের (৭২) কাঁধের বাদামি রঙের ঝুলি থেকে উঁকি দিচ্ছে আরও কয়েকটি বাঁশি।

গত শুক্রবার দুপুরে নগরের সাগরপাড়া এলাকায় রথের মেলায় এসব দেখে জানতে চাওয়া হয়, বাঁশি বিক্রি হয়েছে কি না। ঠোঁট থেকে বাঁশি নামিয়ে মৃদু হেসে জবাব দিলেন গণেশ, ‘হবে। অবশ্যই বিক্রি হবে, যত দিন পৃথিবীতে মানুষ থাকবে এবং তাঁদের মনে সুর থাকবে, তত দিন।’

গণেশ বলেন, তাঁর বয়স হয়েছে ৭২ বছর। গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা সদরে। থাকেন সরকারের দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি বাড়িতে। পড়াশোনা করেছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। আনুমানিক ১২ বছর বয়স থেকে বাঁশির প্রেমে পড়েছিলেন। এরপর আর ছাড়তে পারেননি। তাই পেশার অনুষঙ্গ হিসেবে বেছে নিয়েছেন প্রায় ৬০ বছরের সঙ্গী এই বাদ্যযন্ত্রকে। বাঁশি নিয়ে প্রায় ৫০ বছর আগে পথে নামেন তিনি। তখন থেকেই বাঁশ কেটে বাঁশি তৈরি করেন। পরে এসব বাঁশি বিক্রি করেন ৫০ থেকে ২০০ টাকায়।

গণেশের কথাবার্তায় নিজস্ব দর্শন প্রকাশের ভঙ্গি দেখে এই প্রতিবেদক জানতে চান, ‘বাঁশি কি আপনার পেশা, নাকি নেশা?’ এবার ততোধিক উচ্ছ্বাসের সঙ্গে গণেশ বলে উঠলেন, ‘অবশ্যই পেশা। ৫০ বছর ধরে এই বাঁশিই আমার পেটে ভাত জোগায়। পরিবার–সন্তানসন্ততি প্রতিপালন করি।’

গণেশ চন্দ্র দাসের তিন ছেলে। এঁদের মধ্যে দুই ছেলে বিয়ের পর আলাদা সংসার পেতেছেন। একজন রংমিস্ত্রি এবং অন্যজন দোকানের কর্মচারী। আর ছোট ছেলে নরসিংদীতে একটি সরকারি প্রকল্পে কাজ করেন।

লেখাপড়ার প্রসঙ্গ তুলতেই গণেশ একটানা বলে গেলেন, ‘ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। এরপর গরু চরাইতে লাগলাম। এক পালে ২২টা গরু। এক বাড়ি থেকে কাজ করে আরেক বাড়ি যাই। এভাবে আমি সাত বাড়িতে গরু চরাইছি, হালচাষ করিছি। এ গরু চরাইতে চরাইতে বাঁশি শিখিছি। ওস্তাদ ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। তিনি ৫০ বছর আগে ভারতে চলে গেছেন। এখন বৃন্দাবনে থাকেন।’

গণেশের কথাই ফুরাচ্ছে না। তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি মেলায় বাঁশিতে যে সুর বাজাচ্ছি, বাড়িতে তা বাজাইনি। বাড়িতে বাজাই অন্য সুর। সেই সুর শুনে এক নারী আমার জীবনে আসছিল। শুধু একজন নয়, একে একে তিন নারী এই বাঁশির সুরেই এসেছিলেন। অবশ্য একজনের মৃত্যুর পরই বাকিরা এসেছেন। এখন শুধু তৃতীয় স্ত্রী বেঁচে আছেন। প্রথম স্ত্রীর কোনো সন্তান হয়নি। দ্বিতীয়জনের দুই ছেলে আর ছোটজনের এক ছেলে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন

অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।

এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।

অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।

আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার