বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন না করার দাবিতে বিক্ষোভ
Published: 7th, July 2025 GMT
বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন না করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন একদল আইনজীবী।
আজ সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন আইনজীবীরা। পরে মিছিল নিয়ে সমিতি প্রাঙ্গণ ও সমিতি ভবন প্রদক্ষিণ করেন।
সরকারের উদ্দেশে সমাবেশে আইনজীবীরা বলেন, ন্যায়বিচার সবার দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে চাইলে জেলা আদালতকে উপজেলায় পৌঁছে দেন। সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা দিতে আসতে হয় না। নিম্ন আদালতে বিচারপ্রার্থীদের মাসে হাজিরা দিতে হয়। ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের কোনো বিভাগ নেওয়া যাবে না। যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা থেকে অচিরেই সরে আসুন। অন্যথায় আইনজীবীরা দুর্বার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
‘বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ’—এমন শিরোনামে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে এ সমাবেশ হয়।
সমাবেশে আইনজীবী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চ নিয়ে যাওয়া যাবে না। বিচার বিভাগকে আরও মজবুত করতে গিয়ে দুর্বল করে দিলে এর চেয়ে খারাপ আর কিছুই হবে না। অনুরোধ জানাই, আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা থেকে অচিরেই সরে আসুন।’
মাহফুজুর রহমান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। শুরুতে তিনি বলেন, ‘এখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয় নয়, এখানে সাধারণ আইনজীবীদের বিষয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৫ হাজার সদস্য রয়েছে। ১৫ হাজার সদস্যের তরফ থেকে বলতে চাই, ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চ নিয়ে যাওয়া যাবে না। যাবে না, যাবে না।’
সমিতির সাবেক সহসম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান বলেন, ‘বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের রায় (অষ্টম সংশোধনী মামলার রায়) থাকা সত্ত্বেও এর বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা সংস্কার কমিশনকে দেওয়া হয়নি। এটা আদালত অবমাননার শামিল।.
সমাবেশে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোকছেদুল ইসলাম, আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। অন্যদের মধ্যে আইনজীবী আবদুল কুদ্দুস বাদল, আশরাফুল ইসলাম, আনিসুর রহমান রায়হান ও মো. মাকসুদ উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ৩ জুলাই হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে এক বা একাধিক বেঞ্চ করার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের জন্য ঐকমত্য হয়েছে। হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে থাকবে—এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।
এক আইনজীবীর আবেদন
হাইকোর্টের বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের উদ্যোগ না নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম। প্রধান বিচারপতির কাছে লেখা আবেদনটি আজ হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের (বিচার) কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবেদনকারী আইনজীবী।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম তাঁর আবেদনে লিখেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন। তাই তিনি এ বিষয়ে তাঁর মতামত ও আপত্তি সদয় বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ভ গ য় শহর আইনজ ব র র জন ত ক র রহম ন ল ইসল ম র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
উপজেলায় অধস্তন আদালত সম্প্রসারণে নীতিগতভাবে একমত রাজনৈতিক দলগুলো
বিচার ব্যবস্থা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণে একমত হয়েছে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো। তবে, এক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থানে যেসব উপজেলা জেলা সদরের নিকটবর্তী সেখানে আদালত স্থাপনের বিপক্ষে দলগুলো।
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলগুলো নীতিগতভাবে একমত প্রকাশ করে।
ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, উপজেলা সদরের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, জেলা সদর থেকে দূরত্ব ও যাতায়াত ব্যবস্থা; জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিন্যাস এবং মামলার চাপ বিবেচনা করে কোন কোন উপজেলায় স্থায়ী আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করতে হবে।
বর্তমানে যেসব উপজেলায় চৌকি আদালত পরিচালিত হয়, সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সবগুলো চৌকি আদালতকে স্থায়ী আদালতে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন, না কি সেক্ষেত্রেও পুনর্বিবেচনা ও পুনর্বিন্যাসের সুযোগ রয়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে। বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে উপজেলা সদরে স্থাপিত কোনো আদালতের জন্য একাধিক উপজেলাকে সমন্বিত করে অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করা প্রয়োজন হলে, তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
উপজেলা আদালতগুলোতে সিনিয়র সহকারী জজ ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের বিচারকদের পদায়ন করতে হবে। দেওয়ানি মামলা গ্রহণে সিনিয়র সহকারী জজের আর্থিক এখতিয়ার বাড়িয়ে বাস্তবানুগ করাও প্রয়োজন। আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ বলেন, জেলা সদরের অতি কাছে যেসব উপজেলা সদর রয়েছে সেখানে অধস্তন আদালত প্রয়োজন হবে না। একইসঙ্গে জেলা সদরে উপজেলা অধস্তন আদালতের প্রয়োজন নেই। কোন উপজেলায় অধস্তন আদালত প্রয়োজন তার সংখ্যা নিরূপণের জন্য সমীক্ষার অনুরোধ করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নেওয়া কয়েকটি দলের নেতা উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত স্থাপন করা হলে দুর্নীতি বাড়বে বলে আশঙ্কা করেন। বিষয়টিতে দ্বিমত জানান জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ।
তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত হলে দুর্নীতি বাড়বে এটা ভুল ধারণা। বিচার প্রার্থীকে হয়রানি রোধ করতে বিচারের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে। দুর্নীতির বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত স্থাপনে তাগিদ দেন। প্রয়োজনে সংসদীয় আসনের ভিত্তিতে দ্রুতই অধস্তন আদালত স্থাপনের প্রস্তাব করেন তিনি।
কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে আগামী কত বছরের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ করা হবে তা নির্দিষ্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয় ঐকমত্য কমিশনকে।
পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। তবে বেশ কিছু পরামর্শ এসেছে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। সেগুলো নিয়ে বিরতির পরে আলোচনা শুরু হবে।
এতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই সংক্রান্ত কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে বর্তমান যে বিধান রয়েছে তা ভয়াবহভাবে নাগরিক অধিকারকে সংকুচিত করে এবং আদালতকে এমনভাবে বেঁধে দেয় যে তার পক্ষে কিছুই করার থাকে না। তাই সংবিধানের ১৪১ ক, খ, গ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জরুরি অবস্থার মেয়াদ ৬০ দিনের বেশি হবে না। জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানের দ্বারা নিশ্চিত করা নাগরিক অধিকার স্থগিত করা যাবে না। কোনো অবস্থাতেই নাগরিকদের তাদের অধিকার প্রয়োগের জন্য আদালতে যাওয়া বন্ধ করা যাবে না।