আগামী নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার ঠেকাতে কানাডার সহায়তা চেয়েছে ইসি: সিইসি
Published: 8th, July 2025 GMT
আগামী জাতীয় নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার ঠেকাতে কানাডার সহায়তা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং আজ মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এই সাক্ষাৎকালে সিইসি এ বিষয়ে সহযোগিতা চান। বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক গত তিনটি নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য বলে ‘সার্টিফিকেট’ দিয়েছিল, তাদের আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমোদন দেওয়া হবে না।
আজ সকালে হাইকমিশনার অজিত সিংসহ কানাডা হাইকমিশনের একটি প্রতিনিধিদল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসি নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিনিধিদল বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। ইসি তা জানিয়েছে। ইসি সারা দেশে বড় আকারে ভোটার সচেতনতা ও ভোটার এডুকেশন কার্যক্রম শুরু করবে। এ ছাড়া প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এসব ক্ষেত্রে কানাডা ইসিকে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে।
নাসির উদ্দিন বলেন, কানাডা চায়, এখানে যেন একটি অবাধ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হয়। তারা নারী ভোটারের অন্তর্ভুক্তি ও পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চেয়েছে।
আগামী নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহারকে নির্বাচন কমিশন একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখছে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। নাসির উদ্দিন বলেন, এআইয়ের অপব্যবহার রোধে কী করা যায়, সে বিষয়ে তিনি কানাডার সহায়তা চেয়েছেন। কারণ, সম্প্রতি কানাডায় নির্বাচন হয়েছে। তাদের এই বিষয়টি মোকাবিলা করতে হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা আছে।
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্ন করা হয় সিইসিকে। জবাবে তিনি বলেন, ‘উনি (কানাডার হাইকমিশনার) জানতে চেয়েছেন, ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।’
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞাসা করেছেন তিনি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে। এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যারা সার্টিফিকেট দিয়েছে, তাদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি নির্বাচন খুব সুন্দর নির্বাচন হয়েছে সার্টিফিকেট দিয়েছে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছে, তাদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখেশুনেই নেব। যারা অভিজ্ঞ, ডিফেন্ডেবল, রিলায়েবল ও বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজারভ করেছে, তাদের নেব। তিনটা নির্বাচনকে যারা সার্টিফিকেট দিয়েছে, তাদের কোনোমতেই নয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে: ট্রাম্প
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত উচ্চ শুল্ক স্থগিতাদেশের মেয়াদ ৯ জুলাই শেষ হতে যাচ্ছে। তার আগেই যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প।
সোমবার (৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় গতকাল রবিবার ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার কাছাকাছি পৌঁছেছে। ৯ জুলাইয়ের মধ্যে অন্যান্য দেশগুলোকে উচ্চ শুল্ক হারের বিষয়ে অবহিত করা হবে।”
আরো পড়ুন:
ব্রিকস দেশগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
টেক্সাসে বন্যায় মৃত বেড়ে ৮১, নিখোঁজ ৪১
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী কার্যত বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন। এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে আর্থিক বাজার। এতে দেশগুলো তাদের অর্থনীতিকে রক্ষা করার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে বাধ্য হচ্ছে।
গত ২ এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। বেশিরভাগ দেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক হার এবং ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেন তিনি।
পরে ১০ শতাংশ বাদে সকলের জন্য কার্যকর শুল্কনীতি ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। তখন ট্রাম্প জানান, এই ৯০ দিনে তিনি দেশগুলোর সঙ্গে ৯০টি বাণিজ্য চুক্তি করতে চান। ওই সময় পর্যন্ত দেশগুলোকে উচ্চহারের শুল্কারোপ থেকে ছাড় দেন ট্রাম্প। এ প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
রবিবার মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, উচ্চ শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। সময়সীমার মধ্যে চুক্তি করতে পারেনি-এমন প্রায় ১০০ দেশকে সতর্ক করে দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে।
ট্রাম্প এবং অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারা এর আগে ১ আগস্টের তারিখটি ঘোষণা করেছিলেন। তবে তখন সমস্ত শুল্ক বৃদ্ধি পাবে কি না তা স্পষ্ট ছিল না। এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকও সাংবাদিকদের জানান, উচ্চ শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ট্রাম্প শুল্কহার এবং চুক্তিগুলো নির্ধারণ করছেন।
এদিকে রবিবার ট্রাম্প নতুন করে এবার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর জোট ‘ব্রিকস’-এর বিরুদ্ধে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার হুমকি দিয়েছেন।
ট্রাম্প লেখেন, “কোনো দেশ ব্রিকসের আমেরিকাবিরোধী নীতিকে সমর্থন করলে তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই কথার কোনো হেরফের হবে না।”
২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন ব্রিকস প্রতিষ্ঠা করে। জোটটি পরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে এবং গত বছর মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কিছু দেশের নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছেন।
রবিবার বিকেলে ব্রিকস নেতারা একটি যৌথ বিবৃতিতে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এছাড়াও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিকস নেতারা সতর্ক করে আরো বলেছেন, শুল্ক বৃদ্ধি বিশ্ব বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলবে।
তবে ট্রাম্পের এই অতিরক্তি শুল্ক আরোপের হুমকি ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য ব্রিকস দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনাকে ব্যাহত করবে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।
রবিবার, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সিএনএন-এর ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’-কে বলেন, আগামী দিনে বাণিজ্য চুক্তির বেশ কয়েকটি বড় ঘোষণা আসতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের আলোচনায় ভালো অগ্রগতি করেছে।
তিনি আরো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব বেশি বাণিজ্য নেই- এমন ১০০টি দেশকে ট্রাম্প চিঠি পাঠিয়ে তাদেরকে উচ্চ শুল্ক হারের বিষয়ে অবহিত করবেন। তাই আমি মনে করি আমরা খুব দ্রুত অনেক চুক্তি দেখতে পাব।”
হোয়াইট হাউজের জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান কেভিন হ্যাসেট সিবিএস-এর ‘ফেস দ্য নেশন’-কে বলেন, “আন্তরিকভাবে আলোচনায় জড়িত দেশগুলোর জন্য সময়সীমা বাড়তে পারে। কিছু আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার দিকে রয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রিম করে পিছিয়ে যাবে। এ বিষয়ে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেবেন।”
ঢাকা/ফিরোজ