গুরুতর সাইবার দুর্বলতার কারণে কোটি কোটি গাড়ি হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে
Published: 13th, July 2025 GMT
এই ডিজিটাল যুগে আমাদের চারপাশের প্রতিটি জিনিসই ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছে। গাড়িও তার ব্যতিক্রম নয়। স্মার্ট গাড়ি, সংযুক্ত গাড়ি, টেলিম্যাট্রিক্স , ওভার-দ্য-এয়ার আপডেট ইত্যাদি প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করেছে, তেমনই এনেছে নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, কোটি কোটি গাড়ি রয়েছে ভয়াবহ রিমোট হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে। অর্থাৎ, একটি বড় ধরনের নিরাপত্তা দুর্বলতার ফলে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি গাড়ি দূর থেকে হ্যাকড হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে, যা শুধু ব্যক্তিগত গোপনীয়তাই নয়, বরং জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিসিএ সাইবার সিকিউরিটি সম্প্রতি ‘পারফেক্টব্লু’নামে একটি গুরুতর নিরাপত্তা দুর্বলতা আবিষ্কার করেছে, যা ওপেন সিনারজি ব্লুএসডিকে ব্লুটুথে বিদ্যমান। এই ব্লুটুথ স্ট্যাক অসংখ্য গাড়িতে ব্যবহৃত হয় এবং এর মাধ্যমে হ্যাকাররা দূর থেকে গাড়ির ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে। শুধু তা–ই নয়, ব্লুটুথের মাধ্যমে গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করা, অডিও রেকর্ড, এমনকি ফোনবুকে প্রবেশ করাও সম্ভব।
পারফেক্টব্লু আক্রমণটি একাধিক ব্লুটুথ দুর্বলতাকে একত্র করে, যার ফলে হ্যাকাররা গাড়ির সঙ্গে জোড়া লাগানো এম্বেডেড যন্ত্রাংশের মাধ্যমে সহজেই ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে মাত্র এক ক্লিকেই এই আক্রমণ বাস্তবায়ন সম্ভব। যদিও গবেষকেরা গাড়ির স্টিয়ারিং বা উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সরাসরি দেখাননি, তবু তাত্ত্বিকভাবে এটি সম্ভব বলে জানিয়েছেন।
শুধু ব্লুটুথ নয়, গাড়ির নির্মাতাদের ওয়েব পোর্টাল ও এপিআইতেও রয়েছে ভয়াবহ সাইবার নিরাপত্তা ফাঁক। সম্প্রতি কিয়া, টয়োটা, হোন্ডা, ইনফিনিটি, বিএমডব্লিউ, ফেরারিসহ বহু ব্র্যান্ডের গাড়িতে এমন দুর্বলতা পাওয়া গেছে, যার মাধ্যমে শুধু গাড়ির লাইসেন্স প্লেট নম্বর জানলেই হ্যাকাররা—
* গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করতে পারে
* দরজা খুলতে পারে
* ইঞ্জিন চালু করতে পারে
* হর্ন বাজাতে পারে
* এমনকি গাড়ির ক্যামেরা চালু করতে পারে (কিছু মডেলে)।
এই দুর্বলতার মাধ্যমে হ্যাকাররা গাড়ির মালিকের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা, এমনকি অতীতের ড্রাইভিং রুটও সংগ্রহ করতে পারে।
নিরাপত্তা গবেষক স্যাম কারি ও তাঁর দল কিয়ার ওয়েব পোর্টালে একটি ত্রুটি খুঁজে পান, যার মাধ্যমে তাঁরা কাস্টম অ্যাপ ব্যবহার করে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হন। তাঁরা দেখান, কেবল লাইসেন্স প্লেট নম্বর ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের তথ্য দিয়ে ভিআইএন (ভেহিকল আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) বের করে, তারপর ‘আনলক’ বাটনে ক্লিক করলেই দরজা খুলে যায়।
এমনকি, ডিলার পোর্টালের এপিআইতেও ত্রুটি ছিল, যার মাধ্যমে হ্যাকাররা ‘ডিলার’ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে যেকোনো গাড়ি অন্য অ্যাকাউন্টে রি-অ্যাসাইন করতে পারতেন। ফলে, গাড়ির মালিকের অজান্তেই তাঁর গাড়ির নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারত অন্য কারও হাতে।
গবেষকরা জানান, শুধু কিয়া নয়, হোন্ডা, ইনফিনিটি, নিসান, অ্যাকিউরা, মার্সিডিজ-বেঞ্জ, হুন্দাই, জেনেসিস, বিএমডব্লিউ, রোলস রয়েস, ফেরারিসহ সব ব্র্যান্ডেই একই ধরনের দুর্বলতা রয়েছে। গাড়ি নির্মাতারা দ্রুত এসব দুর্বলতা ঠিক করার জন্য সফটওয়্যার হালনাগাদ দিয়েছে। তবে গবেষকেরা সতর্ক করেছেন যে একটি ত্রুটি পাওয়া মানে আরও অনেক ত্রুটি লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই গাড়ির সফটওয়্যার নিয়মিত হালনাগাদ ইনস্টল করুন, অপরিচিত যন্ত্রের সঙ্গে ব্লুটুথ সংযোগ এড়িয়ে চলুন এবং গাড়ির ওয়েব পোর্টালে সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে দ্রুত উক্ত গাড়ির ওয়েবসাইট রিপোর্ট করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, গাড়ি নির্মাতাদের উচিত ডিজিটাল নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং ওয়েব ও এপিআই নিরাপত্তা নিয়মিত পরীক্ষা করা।
আধুনিক গাড়ি শুধু পরিবহনের মাধ্যম নয়, বরং একেকটি মোবাইল কম্পিউটিং সিস্টেম। তাই, ডিজিটাল নিরাপত্তার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। গাড়ির মালিক, ব্যবহারকারী, নির্মাতাসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে। নইলে, প্রযুক্তির সুফল যেমন পাব, তেমনি এর অপব্যবহারও আমাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
সূত্র: সাইবার সিকিউরিটি নিউজ, সিকিউরিটি উইক, দ্য হাকার নিউজ ও হ্যাকারস অনলাইন ক্লাব
শামীম আহমেদ: যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী তথ্যপ্রযুক্তিবিদ
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘বউ পেটানো’ অভিনেতার দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন
সৈয়দা আলিজা সুলতানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরোজ খান। তাদের এই সংসার ভেঙে গেছে। আলিজা অভিযোগ করেছিলেন, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন ফিরোজ। কেবল তাই নয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ছবিও প্রকাশ করেছিলেন। এরপর তোপের মুখে পড়েন ফিরোজ খান। নেটিজেনদের অনেকে তাকে ‘বউ পেটানো’ অভিনেতার তকমাও দেন।
প্রথম সংসার ভাঙার প্রায় দুই বছর পর ডা. জয়নবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজ খান। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। মূলত, বিনোদনভিত্তিক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ডা. জয়নবের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়। তারপরই শুরু হয় ফিরোজ খানের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে জয়নবের অভিযোগের স্ক্রিনশট।
ডা. জয়নব কথিত এই নোটে বলেন, “আমি আমার সহনসীমার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। অবিরাম মানসিক চাপ ও উদ্বেগে ক্লান্ত। এমন একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে আছি, যে আমাকে বিশ্বাস করে না। আমি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি এখন ক্লান্ত। প্রতিটি কথোপকথন একটা লড়াইয়ের মতো লাগে, প্রতিটি মতবিরোধ যেন যুদ্ধ। এমন আচরণের শিকার হয়ে আমি ক্লান্ত। আমি যখন তাকে কিছু বলি, সে আমার উপর রাগ ঝাড়ে।”
স্ত্রী জয়নবের সঙ্গে ফিরোজ খান
সুখ স্মৃতিগুলো কষ্টে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। এমন মন্তব্য করে জয়নব বলেন, “সত্যি বলতে, আমরা একসঙ্গে যে স্মৃতিগুলো তৈরি করেছিলাম, তা এখন কষ্ট ও আঘাতে ঢাকা পড়ে গেছে। আমি অসংখ্যবার তাকে ক্ষমা করেছি। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো কখনো পুরোপুরি সারেনি। বুঝতে পারছি, আমি এক ধরণের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে বাস করছি, একটা সম্পর্কে আটকে আছি, যা আমার জীবনের শক্তি শুষে নিচ্ছে। আমি জানি, আমি এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কোমলতার যোগ্য। সবকিছু ঠিক আছে—আমি আর এই ভান করতে চাই না।”
ডিভোর্সের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জয়নব বলেন “এমন বিষাক্ত একটা সম্পর্কের জন্য আমি আমার সুখ ত্যাগ করেছি। আমি এখন নিজের জন্য, নিজের মানসিক সুস্থতার জন্য দাঁড়াচ্ছি। বেদনা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে, আমি আমার জীবনের এই অধ্যায় (বিবাহিত জীবন) শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ডিভোর্স নিচ্ছি। কারণ আমি জানি, এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর জন্য আমি প্রস্তুত, যেখানে আমাকে মূল্য দেওয়া হবে, সম্মান করা হবে, ভালোবাসা হবে।”
জয়নবের এই ‘ডিভোর্স নোট’ নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন ফিরোজ খান। তবে এর আগে ফিরোজ খানের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে দেখা যায়। তাতে জয়নবের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল’ ও ‘মানসিক চাপের’ অভিযোগ তোলেন। যদিও পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। পাশাপাশি এই অভিনেতা জানান, তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল।
ডা. জয়নব
তবে সংসার ভাঙার গুঞ্জনে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি ফিরোজ খান কিংবা তার স্ত্রী ডা. জয়নব। তবে বিনোদনভিত্তিক যে পেজ থেকে জয়নবের ‘ডিভোস নোট’ ছড়ানো হয়েছে, সেই পোস্টে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাতে জয়নব লেখেন, “এই ধরনের পেজগুলো আনফলো করুন অথবা রিপোর্ট করুন। এই ধরনের পেজ থেকে ভুয়া খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিরক্ত করা হচ্ছে। সত্যি বলছি, আমি জানি না কীভাবে তারা আমার স্টোরিতে পোস্টটি করার অ্যাকসেস পেয়েছে। এই পোস্ট আমি কখনো করিনি।”
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম স্ত্রী সৈয়দ আলিজা সুলতানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় ফিরোজ খানের। এ সংসারে সুলতান খান ও ফাতিমা খান নামে দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে দুই সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে আদালতে মামলা লড়ছেন এই প্রাক্তন দম্পতি। ২০২৪ সালে ডা. জয়নবকে বিয়ে করেন ফিরোজ খান।
ঢাকা/শান্ত