ফুলকুড়িদের কবর আর শোক ও বিক্ষোভে দেশ
Published: 22nd, July 2025 GMT
আগুন পুড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে যারা; মিলেছে যাদের মৃত্যুর ছাড়পত্র; সেইসব না ফোটা ফুলকুড়িদের অঙ্গার নিথর দেহ নিয়ে বাবা-মা ও স্বজন-পরিজন ফিরেছে ঘরে; শুইয়ে দিয়েছে শান্ত কবরের কোমল মাটিতে। তাদের বিদায়ে কেঁদেছে গ্রাম-শহর, শোকে ঢুকরে উঠেছে জাতির হৃদয়। এমন দিনে দায়-দোষ ও গড়িমসির হিসাব-নিকাশের প্রশ্ন নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখেছে দেশ। গুজব হানা দিয়েছে ডানা মেলে অসহ্যভাবে। আর করণীয় খুঁজতে দৌড়ঝাঁপে রয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বাংলাদেশ হয়ে উঠে প্রশ্ন-উত্তরে বিমর্ষ-বিহ্বল এক দেশ। ঢাকার বড় বড় হাসপাতালের বিছানায় কাতর কাচা প্রাণের বাঁচার আকুতির মধ্যে সর্বশেষ খবরের দৌড়ে মিলেছে একেকটি বেদনার ঘোষণা। যারা এক দিন আগেও ছিল অমিত সম্ভাবনার কুড়ি, তারা আগুনে ছাই হয়ে না ফোটা ফুলের গল্প হয়ে গেছে। আর চামড়া পোড়ার যন্ত্রণা নিয়ে ছটফট করা শিশুদের জন্য দোয়া করছে দেশ; তাদের জীবিত ফেরার অপেক্ষায় সবাই।
সোমবার (২১ জুলাই) ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে আগুন ধরা অবস্থায় বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ। ঘটনাস্থল থেকে লাশের পর লাশ বের করে আনা হয়। আহতদের উদ্ধার করে নেওয়া হয় বিভিন্ন হাসপাতালে।
আরো পড়ুন:
উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: নিখোঁজ রাইসার মরদেহ শনাক্ত
যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে উদ্ধারকালে অনভিপ্রেত ঘটনা, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ জনে, যাদের মধ্যে ২৮ জনই শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের দুজন শিক্ষক। এই ৩০ জনই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের। আর দুর্ঘটনাকবলিত উড়োজাহাজের বৈমানিকও চলে গেছেন স্বপ্নের জীবন ছেড়ে না ফেরার দেশে; তার দাফন হয়েছে।
আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানায়, প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩১ জন মারা গেছে; বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি আছে ১৬৫ জন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তি আছে ৮ জন, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৪৬ জন, সেখানে মারা গেছেন ১০ জন।
ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছে তিনজন, সেখানে মারা গেছেন ১ জন। ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি ২৮ এবং মারা গেছে ১৬।
লবুনা জেনারেল হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টারে আহত ১৩ এবং নিহত ২, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে আহত ৬০ এবং নিহত ১, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আহত ১, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ১, ইউনাইটেড হাসপাতালে আহত ২ এবং নিহত ১, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছে তিনজন।
দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবের অবরুদ্ধ ৯ ঘণ্টা
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও শিক্ষা উপদেষ্টা সি.
সকাল ১০টার পরপর তারা সেখানে গিয়েছিলেন কিন্তু এরপর তার বেরিয়ে আসতে পারেননি। বিকালে একবার কলেজ থেকে বের হওয়ার পর দিয়াবাড়ি মোড়ে আবার বাধার মুখে পড়েন তারা। বিক্ষোভের মুখে তখন তারা আবার ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয় এবং অবরুদ্ধ থাকলেও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় বলে জানা গেছে।
দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে পরিস্থিতি আগের চেয়ে জটিল আকার ধারণ করে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজেসহ আশেপাশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেয়।
অবশ্য সোমবার গভীর রাত থেকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরা। বিমান বিধ্বস্তের পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কেন ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ এবং এ জন্য সেনাবাহিনীর নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া ও শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি নিয়ে বিক্ষোভে সরব হন তারা। রাতেরই গেটে ধাক্কাধাক্কি করে নিজেদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে আবার বিক্ষোভ শুরু হয়, যা দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব যাওয়ার পর আরো জোরদার হয়।
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের তিনজনকে অবরুদ্ধ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া হয়। আহত হন বেশ কয়েকজন। তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির কোনো খবর নেই।
উদ্ধারকালে ‘অনভিপ্রেত’ ঘটনার তদন্ত হবে: আইএসপিআর
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনাকালে শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগের বিষয়টিকে ‘অনভিপ্রেত ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর। তারা পরিষ্কার জানিয়েছে, তদন্ত করে দোষ পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইএসপিআর জানায়, উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তে উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন, বিকালের দিকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু উৎসুক জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় উদ্ধার কাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফলে একদল উৎসুক জনতার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়, যা এক পর্যায়ে একটি অনভিপ্রেত ঘটনার অবতারণা করে।
আইএসপিআর জানায়, উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে দুর্ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ব্যাপক ভিড় দেখা দেয়, যা ইভাকুয়েশন ও রেসকিউ কার্যক্রমকে বারবার ব্যাহত করে।
সেনাবাহিনীর সদস্য এবং মাইলস্টোন স্কুলের স্বেচ্ছাসেবকরা বারবার অনুরোধ করলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় সময়মতো আহতদের সরিয়ে নেওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে, প্রাণহানির ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। সেনা সদস্যরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে।
উল্লেখ্য যে, উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত ১৪ জন সেনা সদস্য শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে থেকে পেশাদারিত্ব ও সর্বোচ্চ দায়িত্ব বোধের সঙ্গে কর্তব্য পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ
শিক্ষা উপদেষ্টা সি. আর. আবরারের পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয়ের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটায় ছত্রভঙ্গ হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসার পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার শব্দ শোনা গেছে। ছোড়া হয়েছে কাঁদানে গ্যাসের শেলও।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকাল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে এই ঘটনার পর উত্তাপ কিছুটা কমলেও সন্ধ্যার দিকে জিপিও মোড়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবার সংঘর্ষ হয়।
এর আগে সচিবালয়ের ভেতর ঢুকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়, লাঠিচার্জ করে। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপে আহত ৮৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোহাম্মদ ফারুক বলেন, “সচিবালয় থেকে আজ বিকেলের দিকে আহত অবস্থায় ৮৫ জন শিক্ষার্থীসহ ও একজন সাংবাদিক আহত অবস্থায় জরুরি বিভাগে আসার পর তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি শাহবাগ থানা অবগত আছে।”
বৈমানিক তৌকিরকে রাজশাহীতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
মাইলস্টোনে বিধ্বস্ত বিমানের নিহত বৈমানিক (পাইলট) তৌকির ইসলাম সাগরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহী শহরের সপুরা গোরস্থানে সমাহিত করা হয়।
বিকাল সাড়ে ৪টায় জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে তৌকির ইসলাম সাগরের জানাজা হয়। জানাজার আগে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের জীবনী পড়ে শোনানো হয়। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম ও মামা মতিউর রহমান।
দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে তৌকিরের মরদেহ রাজশাহী সেনানিবাসে নেওয়া হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৩টা ২০ মিনিটে সেনানিবাসের পাশেই উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরে ভাড়া বাসায় তৌকিরের মরদেহ নেওয়া হয়।
তৌকির ইসলামের বাবা তহুরুল ইসলাম ব্যবসায়ী। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। তবে, প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি রাজশাহী শহরে বাস করেন। তার একমাত্র ছেলে তৌকিরের বেড়ে ওঠা রাজশাহীতেই। ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করে তিনি বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। বছরখানেক আগে তৌকির বিয়ে করেছিলেন। স্ত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক।
প্রশিক্ষণের শেষ ধাপে সোমবার একা (সলো) যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশে উড়েছিলেন তৌকির। একজন বৈমানিকের জীবনে এটি বিশেষ দিন। সেদিনই বিমানটি রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে তৌকির প্রাণ হারান। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ৩১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
সারা দেশে শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বহু মানুষ হতাহতের পরও এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত দেরিতে জানানোয় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি. আর. আবরারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, রাত ৩টার দিকে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্ধ। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব পদত্যাগ না করলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
চীন, ভারত ও জাপান চিকিৎসাসহায়তা দিতে আগ্রহী
প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসাসহায়তা দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন, ভারত ও জাপান। এ মুহূর্তে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, তা দ্রুত জানাতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে তারা। মঙ্গলবার বিকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ম ন ব ধ বস ত র উপদ ষ ট র প অনভ প র ত র পদত য গ র ঘটন য় দ র ঘটন অবর দ ধ ল কল জ ব যবস তদন ত ঘটন র অবস থ সদস য ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটির পাহাড়ে ইউপিডিএফের আস্তানায় সেনা অভিযান
রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে চালানো এই অভিযানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে একে-৪৭ রাইফেলসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। অভিযান এখনো চলছে।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সংঘাত নিরসনে তৎকালীন সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে শান্তিচুক্তি সই হয়। চুক্তিতে বহু ধারার উল্লেখ ছিল—এর কিছু বাস্তবায়ন করা হয়, আর বাকিগুলোর বাস্তবায়নের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। তবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের অভিযোগ, চুক্তির অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ধারা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
এই চুক্তির বিরোধিতা করেই ১৯৯৮ সালের জুনে আত্মপ্রকাশ করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। সংগঠনটি মূলত চুক্তিবিরোধী অবস্থান নিয়ে পাহাড়ি তরুণদের মধ্যে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে।
এরপর থেকেই পার্বত্য অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউপিডিএফ ও জেএসএসের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে। দুই সংগঠনের সংঘর্ষে বিভিন্ন সময়ে বহু কর্মী নিহত হন, আর সশস্ত্র সহিংসতায় পাহাড়জুড়ে বিরাজ করে আতঙ্ক।
২০১০ সালে জেএসএসের মূল ধারা (সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন) থেকে একটি অংশ বেরিয়ে এসে জেএসএস (এম এন লারমা) নামে নতুন একটি সংগঠন গঠন করে।
পরে ২০১৭ সালে ইউপিডিএফের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের পর প্রসীত খিসার নেতৃত্বাধীন মূল সংগঠন থেকে আলাদা হয়ে আরেকটি অংশ ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক নামে আত্মপ্রকাশ করে।
ঢাকা/হাসান/ইভা