আইসিইউর সামনে বাবার ২৪ ঘণ্টা, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার সামিয়াকে বাঁচিয়ে দাও...’
Published: 23rd, July 2025 GMT
মঙ্গলবার বেলা ৩টা ৫ মিনিট। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ফটকের সামনে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যবসায়ী আবদুর রহিম। আইসিইউর প্রধান ফটকের স্বচ্ছ কাচ দিয়ে ভেতরের কিছু জায়গা দেখা যায়। আবদুর রহিমের চোখ আইসিইউর ভেতরে। তখন ভেতর থেকে একজন নার্স বের হয়ে আসেন। সামিয়ার আত্মীয়স্বজন কে আছেন জানতে চান। সামিয়ার নাম শুনে বাবা রহিম তাঁকে বলেন, ‘জি আপা, সামিয়ার লোক আছেন।’
রহিম তখন আইসিইউর সামনে থাকা তাঁর মামাকে আইসিইউর ভেতরে পাঠান। আর নিজে উৎকণ্ঠাভরা চেহারা নিয়ে আইসিইউর সামনে পায়চারি করতে থাকেন। পাঁচ মিনিট পর রহিমের মামা আইসিইউর ভেতর থেকে বের হন।
তখন আবদুর রহিম তাঁর মামার কাছে মেয়ে সামিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার তথ্য জানতে পারেন। এ সময় আবদুর রহিম কাঁদতে থাকেন। এ সময় রহিমের দুই বন্ধু তাঁকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। তখন রহিম আক্ষেপ করে বলতে থাকেন, ‘আমার মা তিন বছর আগে মরে গেছেন। মারা যাওয়ার আগে মা আমাকে বলে গেছেন, রহিম রে তুই আমার সামিয়াকে দেখে রাখিস…মাগো, আমি হয়তো তোমার কথা রাখতে পারব না মা। হে আল্লাহ, তুমি আমার সামিয়াকে হায়াত দাও…।’
আইসিইউর সামনে রহিম যখন মেয়েকে নিয়ে বিলাপ করছিলেন, তখন তাঁর তিন বন্ধু তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। বন্ধুরা সান্ত্বনা দিলেও রহিম বলতে থাকেন, ‘আমি আমার মেয়েকে মাইলস্টোন কলেজের বিধ্বস্ত ভবন থেকে উদ্ধার করেছি। সেই মেয়ে আমার লাইফ সাপোর্টে।’
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ইতিমধ্যে মারা গেছে ৩১ জন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় রাজধানীর ১০টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ১৬৫ জন।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছে মেয়ে সামিয়া। তাঁর জন্য বিলাপ করতে থাকা বাবা আবদুর রহিমকে সান্ত্বনা দেন তাঁর বন্ধুরা। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ক্যানসারে আক্রান্ত ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর শরীরে ত্বকের ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। বমি ও নিম্ন রক্তচাপের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার শরীরে ক্যানসারের প্রাথমিক ধাপ ধরা পড়ে। বর্তমানে তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি।
আরো পড়ুন:
৬ বছর পর ব্রাজিলকে হারিয়ে বিশ্বকাপ প্লে-অফে বলিভিয়া
মারাকানায় ব্রাজিলের বড় জয়
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার একদিন পর তার ত্বকের ক্যানসারের প্রাথমিক ধাপ ধরা পড়ে।
বুধবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তার ত্বকের পরীক্ষা করে ‘স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’ শনাক্ত হয়েছে।এটি ত্বকের মাঝারি মাত্রার ক্যানসার, যা সবচেয়ে হালকা ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ধাপের মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে।
চিকিৎসকরা বলেছেন যে, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। ৭০ বছর বয়সী বলসোনারো গত মঙ্গলবার বমি এবং নিম্ন রক্তচাপের কারণে ব্রাসিলিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে ক্যানসারের বিষয়টি গত রবিবারের পরীক্ষায় ধরা পড়ে, যখন তার বুক ও হাতে থাকা ক্ষতস্থানের টিস্যু অপসারণ করা হয়েছিল।
তার অনকোলজিস্ট ক্লাউদিও বিয়ারোলিনি জানিয়েছেন, বলসোনারোর ক্যানসার ‘ইন সিটু’ ধাপে রয়েছে, অর্থাৎ অস্বাভাবিক কোষগুলো এখনো ছড়িয়ে পড়েনি। অস্ত্রোপচারই এর চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট হবে। বর্তমানে বলসোনারোর শরীরে সেলাই ও ব্যান্ডেজ রয়েছে, যা দুই সপ্তাহের মধ্যে খোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বুধবার তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন, যেখানে তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
বলসোনারো ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই গৃহবন্দি ছিলেন। সম্প্রতি তাকে ২৭ বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি আলেকজান্দ্রে দে মোরেসের নির্দেশ অনুযায়ী, গৃহবন্দিত্বে থাকলেও চিকিৎসা জরুরি হলে তিনি বাসার বাইরে যেতে পারেন। তবে প্রতিবারই তার আইনজীবীদের আদালতে চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হয়।
বলসোনারোর সমর্থকরা তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছেন, যাতে তিনি কারাগারে না গিয়ে বাড়িতেই সাজা ভোগ করতে পারেন। তাদের দাবি, কারাগারে নিলে তার শারীরিক জটিলতা বা দুর্ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়বে।
তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সিনেটর ফ্লাভিও বলসোনারো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “আমার বাবা আগেও কঠিন লড়াই লড়ে জয়ী হয়েছেন। এবারও ভিন্ন কিছু হবে না।”
ঢাকা/ফিরোজ