যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে সাত লাখ টন করে গম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে বাণিজ্যঘাটতি কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি কত কমবে, গম আমদানির বর্তমান উৎস দেশগুলো কী কী, এসব বিষয় সামনে এসেছে। গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো গম আমদানি হয়নি। গত ২২ বছরে অনিয়মিতভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাত্র ২২ লাখ টাকা গম আমদানি হয়েছে। অথচ গত অর্থবছরে; অর্থাৎ এক বছরেই বিভিন্ন দেশ থেকে ৫৯ লাখ টাকা গম আমদানি হয়।

গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের গম রপ্তানিকারক সমিতি বা ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে সরকার। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছর প্রতিবছর সরকারি পর্যায়ে দেশটি থেকে সাত লাখ টন করে গম প্রতিযোগিতামূলক দরে কেনা হবে।

প্রধান দুই খাদ্যশস্যের মধ্যে গম মূলত আমদানিনির্ভর। উৎপাদন কম হওয়ায় চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশই আমদানি করতে হয়। আমদানির বড় অংশই বেসরকারি খাত করে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫৯ লাখ টন গম আমদানি হয়, যার ছয় শতাংশ সরকারি সংস্থা আমদানি করেছে। এখন সরকার বছরে সাত লাখ টন আমদানির উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারি খাতে আমদানির হার বাড়বে।

কোন দেশ থেকে কত আমদানি

বিশ্ববাজারে দুই ধরনের গম পাওয়া যায়। একটি হলো সাধারণ আমিষযুক্ত, যা বিশ্ববাজারে দাম কম থাকে। আরেকটি হলো উচ্চ আমিষযুক্ত, যা তুলনামূলক দাম বেশি থাকে। বাংলাদেশে সাধারণ আমিষযুক্ত সস্তা গমই আমদানি হচ্ছে বেশি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, গত বছর সরকারি-বেসরকারি খাতে ১৬৩ কোটি ডলার ব্যয়ে (শুল্কায়ন মূল্য ২২ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা) ৫৯ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। এই গম আমদানি হয়েছে বিশ্বের আটটি দেশ থেকে।

এনবিআরের এক দশকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সাধারণ আমিষযুক্ত সস্তা গম আমদানির বড় উৎস রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এরপরও গত অর্থবছরে গম আমদানির ৪৬ শতাংশ বা ২৭ লাখ টন আমদানি হয় রাশিয়া থেকে। ইউক্রেন থেকে আমদানি হয়েছে ১৮ শতাংশ; অর্থাৎ মোট গম আমদানির ৬৪ শতাংশ আসছে দেশ দুটি থেকে।

এ ছাড়া কানাডা থেকে ১৯ শতাংশ, আর্জেন্টিনা থেকে ৮ শতাংশ, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া থেকে ৩ শতাংশ করে, ব্রাজিল থেকে ২ শতাংশ ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ১ শতাংশ আমদানি হয়।

বাংলাদেশে আমদানি হওয়া গমের প্রায় ৭০ শতাংশই সাধারণ আমিষযুক্ত। এ ধরনের গমের দাম তুলনামূলক কম থাকে। সাধারণ আমিষযুক্ত গম আসছে রাশিয়া-ইউক্রেন, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া ও ব্রাজিল থেকে। এসব দেশ থেকে আমদানি করা প্রতি টন গমের দাম পড়েছে ২৬৪ থেকে ২৭৫ ডলারের মধ্যে। সাধারণ আমিষযুক্ত গম দিয়ে রুটি ও সাধারণ মানের বেকারি পণ্য তৈরি হয়।

উচ্চ আমিষযুক্ত গম আমদানি হয়েছে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে। প্রতি টনের দাম পড়ছে ৩০০ থেকে ৩১৩ ডলার। আর্জেন্টিনা থেকে সাধারণ ও উচ্চ আমিষযুক্ত, দুই ধরনের গম আমদানি হচ্ছে। উচ্চ আমিষযুক্ত গম দিয়ে পরোটা, উন্নত মানের বিস্কুটসহ নানা খাদ্যপণ্য তৈরি করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির ইতিহাস

জানা গেছে, গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি হয়নি। গত ২২ বছরে দেশটি থেকে সোয়া ২২ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ১৭ লাখ টনের বেশি আমদানি হয়। সরকারি খাতে তিন লাখ টন আমদানি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই দশকে সবচেয়ে বেশি সাড়ে চার লাখ টন গম আমদানি হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে। বেসরকারি সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, নাবিল গ্রুপসহ কয়েকটি গ্রুপ এই গম আমদানি করে। সরকারি খাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বশেষ গম আমদানি হয় ২০১৭ সালে।

জানতে চাইলে ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্যঘাটতি কমাতে হলে বেসরকারি খাতে আমদানি বাড়ানোর বিকল্প নেই। তুলনামূলক দাম কিছুটা বেশি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমের মান ভালো। প্রতিযোগিতামূলক দাম ও সুবিধা পেলে দেশটি থেকে বেসরকারি খাতেও গম আমদানি বাড়তে পারে।

আমিরুল হক বলেন, গমের পাশাপাশি তুলা, এলপিজি, সয়াবিন ও ইস্পাত কারখানার কাঁচামাল স্ক্র্যাপ (লোহার টুকরা) এই চার পণ্যে চার বিলিয়ন ডলার আমদানির সুযোগ আছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এ জন্য সরকারের লজিস্টিকস খাতে নীতি সহায়তা বাড়াতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ টন গম আমদ ন য ক তর ষ ট র থ ক য ক তর ষ ট র র গম আমদ ন র ন গম আমদ ন ব সরক র ম লক দ

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন