নির্বাচন পিছিয়ে দেশ যদি গোল্লায়ও যায়, কিছু মানুষের লাভ আছে: জাহেদ উর রহমান
Published: 23rd, July 2025 GMT
এখন নির্বাচন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা একটা অদ্ভুত সমস্যার মধ্যে আছি—গণতন্ত্র চাই কিন্তু নির্বাচন চাওয়া যাবে না। এখন নির্বাচনকে ঠেকিয়ে দেওয়ার বা নির্বাচনকে বিলম্বিত করার একটা চেষ্টা আছে। নির্বাচন পিছিয়ে দেশ যদি গোল্লায়ও যায়, কিছু মানুষের লাভ আছে। কিন্তু আপনি যখন সামনে নির্বাচন দেখবেন না, তখন আপনার চরিত্র নষ্ট হবে।’
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে জাহেদ উর রহমান এ কথা বলেন। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এই গোলটেবিলের আয়োজন করে প্রথম আলো। গোলটেবিল আলোচনার শুরুতে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় শোক জানানো হয়। সবাই এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হচ্ছে উল্লেখ করে জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘এই প্রশ্নটা ভুলও নয়। আমি মনে করি, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক উত্তরণে বাধা দেওয়ার জন্য দেশের অভ্যন্তরে, বাইরে এবং বেশ কিছু শক্তি চায় যে আমরা একটা মোটামুটি নৈরাজ্যকর অবস্থায় যাই। আমাদের এখন নির্বাচন ছাড়া আসলে আর কোনো উপায় নেই। এই জিনিসটা আমাদের প্রতিটি জায়গা থেকে বলতে হবে।’
নির্বাচনকে খাটো করার প্রবণতা আছে বলে মন্তব্য করেন জাহেদ উর রহমান। তিনি বলেন, ‘আই অ্যাম স্যরি, নির্বাচন এত ছোট বিষয় নয়। যথেষ্ট এম্পিরিকাল (প্রায়োগিক) প্রমাণ আছে যে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যদি একটার পর একটা হতে থাকে, তাহলে দেশের পরিবর্তন হতে বাধ্য হয়।.
গতকাল সচিবালয়ের ফটক ভেঙে শিক্ষার্থীদের ঢুকে পড়া, উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের আটকে পড়ার কথাও উল্লেখ করেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘সবকিছু যদি আমরা যোগ করি, আমরা আসলে ভালো অবস্থায় নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আসলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।...এখন নির্বাচনকে ঠেকিয়ে দেওয়ার বা নির্বাচনকে বিলম্বিত করার একটা চেষ্টা আছে। নির্বাচন পিছিয়ে গেলে দেশ যদি গোল্লায়ও যায়, কিছু মানুষের লাভ আছে।’
এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু রাজনৈতিক দল হয়তো নির্বাচনে জিতবে না, কিন্তু সে এখন নানা রকম ক্ষমতা চর্চা করতে পারছে; বিভিন্ন নিয়োগ-পদায়ন, বদলি, বিভিন্ন রকম টেন্ডারে অনেকে তদবির করতে পারছে। ফলে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা থাকবে এবং মূল চেষ্টা হবে নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করে।’
‘হাতুড়ির বাড়ি দিয়ে দেশ ঠিক করা যায় না’
চলমান সংস্কার কার্যক্রম প্রসঙ্গে জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘আমি সংস্কার নিয়ে খুব বেশি হতাশ হই। বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ পৃথক্করণের বিষয়ে অন্তত আমরা আইনগতভাবে একমত পোষণ করছি। বিএনপির মতো দলও এর সঙ্গে একমত। আমার কাছে অনেক বড় মনে হয়, একটা সরকারের হাত থেকে যদি নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করার আইনগত ক্ষমতা কমে যায়, এটা খুব ছোট ব্যাপার নয়। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে যে ধরনের ঐকমত্য মোটাদাগে হয়েছে, এগুলো খুব খারাপ নয়।’
বাংলাদেশ এখন একটা অ্যাকিউট ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে (গভীর জরুরি অবস্থা) আছে বলে মন্তব্য করেন এই লেখক। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনটা হওয়া আমাদের রোগীর জীবন বাঁচা। এরপর কারণগুলো খুঁজে ক্রমাগত চিকিৎসা করে যেতে হবে এবং একটা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা লাগবে। শেখ হাসিনা যে সংকট তৈরি করে গেছে, এগুলো থেকে প্রতিকারের সংক্ষিপ্ত কোনো উপায় নেই। আমরা অনেকে মনে করেছি যে কামারের হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দিয়ে বাংলাদেশকে ঠিক করে ফেলব। এগুলো কাজ করে না। আমাদের সময় লাগবে।’
‘অনেকে খোয়াব দেখছেন’
আলোচনায় জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী কিছু প্রবণতার বিষয়েও কথা বলেন জাহেদ উর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে খুবই আনস্ট্রাকচার্ড ও আনঅর্গানাইজড (কাঠামোহীন ও অসংগঠিত) একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গিয়েছি এবং সফল হয়েছি। এরপর যতটুকু আমরা পেতে পারতাম, সেটা আমরা মিস করেছি। এরপর আমাদের অনেকের অনেক রকম ইচ্ছে হয়েছে। আমি সব ইচ্ছাকে খারাপ বলছি না, ভালো বলছি। কিন্তু আমরা মনে করলাম একটা সুযোগ পাওয়া গেল, এই সুযোগে আমি আমার নিজস্ব কিছু চিন্তা ও এজেন্ডা পূরণ করব। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে একটা সমাজের ক্ষমতাকাঠামো এভাবে কাজ করে না।’
জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘আমি যদি বলি সংবিধান স্থগিত করে দিয়ে এভাবে সরকার করব, এখানকার সবচেয়ে বড় ক্ষমতাবান রাজনৈতিক শক্তিকে উপেক্ষা করে আমি এটা করতে পারি না। সে বিভিন্নভাবে রেজিস্ট (প্রতিরোধ) করবেই।...আমি মনে করলাম যে সব স্থগিত করে দেব, আমি এ রকম একটা সরকার করব—এটা করতে গিয়ে আমি ভীতি তৈরি করেছি অনেকের মধ্যে। তখন সে প্রবল পরাক্রমে সে অনেক ডুয়েবল (করার মতো) কাজে রেজিস্ট (প্রতিরোধ) করেছে। কারণ, এটা তখন ক্ষমতার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে ও তো আমাকে এলিমিনেট (নির্মূল) করতে চায়, আমাকে আইসোলেট (বিচ্ছিন্ন) করতে চায়, আমাকে এক্সক্লুড (বাদ দেওয়া) করতে চায়; ও তো ক্ষমতা নিয়ে নিতে চায়।’
জুলাই অভ্যুত্থানে কোনো সংগঠিত শক্তি ছিল না উল্লেখ করে এই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘আমরা মনে করছি এটা একটা বিপ্লব, একটা বিপ্লবী সরকার হতে পারে এবং আমরা শিক্ষার্থীদের অনেকটা রেড গার্ডের মতো ব্যবহার করার চিন্তা করছি বা এখনো অনেকে সেই খোয়াব দেখছি। এগুলোর ফলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের সঞ্চালনায় এই গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, লেখক ও গবেষক মাহা মীর্জা, তরুণ গবেষক সহুল আহমদ প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ব চনক র জন ত ক আম দ র ক ষমত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘বউ পেটানো’ অভিনেতার দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন
সৈয়দা আলিজা সুলতানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরোজ খান। তাদের এই সংসার ভেঙে গেছে। আলিজা অভিযোগ করেছিলেন, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন ফিরোজ। কেবল তাই নয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ছবিও প্রকাশ করেছিলেন। এরপর তোপের মুখে পড়েন ফিরোজ খান। নেটিজেনদের অনেকে তাকে ‘বউ পেটানো’ অভিনেতার তকমাও দেন।
প্রথম সংসার ভাঙার প্রায় দুই বছর পর ডা. জয়নবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজ খান। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। মূলত, বিনোদনভিত্তিক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ডা. জয়নবের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়। তারপরই শুরু হয় ফিরোজ খানের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে জয়নবের অভিযোগের স্ক্রিনশট।
ডা. জয়নব কথিত এই নোটে বলেন, “আমি আমার সহনসীমার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। অবিরাম মানসিক চাপ ও উদ্বেগে ক্লান্ত। এমন একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে আছি, যে আমাকে বিশ্বাস করে না। আমি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি এখন ক্লান্ত। প্রতিটি কথোপকথন একটা লড়াইয়ের মতো লাগে, প্রতিটি মতবিরোধ যেন যুদ্ধ। এমন আচরণের শিকার হয়ে আমি ক্লান্ত। আমি যখন তাকে কিছু বলি, সে আমার উপর রাগ ঝাড়ে।”
স্ত্রী জয়নবের সঙ্গে ফিরোজ খান
সুখ স্মৃতিগুলো কষ্টে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। এমন মন্তব্য করে জয়নব বলেন, “সত্যি বলতে, আমরা একসঙ্গে যে স্মৃতিগুলো তৈরি করেছিলাম, তা এখন কষ্ট ও আঘাতে ঢাকা পড়ে গেছে। আমি অসংখ্যবার তাকে ক্ষমা করেছি। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো কখনো পুরোপুরি সারেনি। বুঝতে পারছি, আমি এক ধরণের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে বাস করছি, একটা সম্পর্কে আটকে আছি, যা আমার জীবনের শক্তি শুষে নিচ্ছে। আমি জানি, আমি এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কোমলতার যোগ্য। সবকিছু ঠিক আছে—আমি আর এই ভান করতে চাই না।”
ডিভোর্সের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জয়নব বলেন “এমন বিষাক্ত একটা সম্পর্কের জন্য আমি আমার সুখ ত্যাগ করেছি। আমি এখন নিজের জন্য, নিজের মানসিক সুস্থতার জন্য দাঁড়াচ্ছি। বেদনা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে, আমি আমার জীবনের এই অধ্যায় (বিবাহিত জীবন) শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ডিভোর্স নিচ্ছি। কারণ আমি জানি, এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর জন্য আমি প্রস্তুত, যেখানে আমাকে মূল্য দেওয়া হবে, সম্মান করা হবে, ভালোবাসা হবে।”
জয়নবের এই ‘ডিভোর্স নোট’ নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন ফিরোজ খান। তবে এর আগে ফিরোজ খানের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে দেখা যায়। তাতে জয়নবের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল’ ও ‘মানসিক চাপের’ অভিযোগ তোলেন। যদিও পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। পাশাপাশি এই অভিনেতা জানান, তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল।
ডা. জয়নব
তবে সংসার ভাঙার গুঞ্জনে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি ফিরোজ খান কিংবা তার স্ত্রী ডা. জয়নব। তবে বিনোদনভিত্তিক যে পেজ থেকে জয়নবের ‘ডিভোস নোট’ ছড়ানো হয়েছে, সেই পোস্টে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাতে জয়নব লেখেন, “এই ধরনের পেজগুলো আনফলো করুন অথবা রিপোর্ট করুন। এই ধরনের পেজ থেকে ভুয়া খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিরক্ত করা হচ্ছে। সত্যি বলছি, আমি জানি না কীভাবে তারা আমার স্টোরিতে পোস্টটি করার অ্যাকসেস পেয়েছে। এই পোস্ট আমি কখনো করিনি।”
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম স্ত্রী সৈয়দ আলিজা সুলতানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় ফিরোজ খানের। এ সংসারে সুলতান খান ও ফাতিমা খান নামে দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে দুই সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে আদালতে মামলা লড়ছেন এই প্রাক্তন দম্পতি। ২০২৪ সালে ডা. জয়নবকে বিয়ে করেন ফিরোজ খান।
ঢাকা/শান্ত