ক্যাডার কর্মকর্তারা পদোন্নতির যোগ্য, সব শর্ত পূরণ করেছেন, তবু আটকে আছেন। অন্যদিকে যোগ্যতা পূরণ করেননি এমন ৯০ জন নন–ক্যাডার কর্মকর্তাকে ক্যাডার বানিয়ে নন–ক্যাডারদের পদোন্নতি দিয়ে ক্যাডার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈষম্য করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে।

অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এখানে বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা যোগ দেওয়ার পর থেকে একই পদে আছেন। ১২ বছরের বেশি সময় হয়ে গেল, কোনো পদোন্নতি পাননি তাঁরা। অথচ যাঁরা ক্যাডার কর্মকর্তা নন, তাঁরা পদোন্নতি পেয়ে চলেছেন। চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন করে বিভাগীয় পরীক্ষা বা সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা ছাড়াই কিছু কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্ত করে সহকারী প্রকৌশলী পদ থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এতে পিএসসির মাধ্যমে ৩০, ৩১ ও ৩২তম বিসিএসে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যে বৈষম্য হয়েছে, সেটি পরীক্ষা করে দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে।মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া, চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ক্যাডার কর্মকর্তারা বলেন, ‘সরকারে বড় ধরনের বদলের পর প্রশাসন ক্যাডারে আর পুলিশ ক্যাডারে যেভাবে নানা পদোন্নতি আর সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরাও আশান্বিত হয়েছিলাম। ১২ বছরের অপেক্ষার পালা শেষ হওয়ার আশায় ছিলাম। কিন্তু আমাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি। সমস্যার কথা বলতে গিয়ে উল্টো হেনস্তার শিকার হয়েছেন আমাদের কর্মকর্তারা। অথচ এটা আমাদের যৌক্তিক ও প্রাপ্য দাবি। অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ৯০ জন কর্মকর্তা মূলত ৯ম গ্রেডের। তাঁরা কী কারণে ৪র্থ বা ৫ম গ্রেডের বেতন গ্রহণ করছেন, সেটিও বোঝা যাচ্ছে না। ভুয়া তথ্য প্রদান করে কিছু কর্মকর্তা সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কেন কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।’

পদোন্নতিবঞ্চিত একজন ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি ক্যাডার অধিদপ্তর হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় নন-ক্যাডার ও প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে ক্যাডারভুক্তকরণ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিসিএসে ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগের ফাঁকে ফাঁকে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। সহকারী প্রকৌশলী পদে অল্পসংখ্যক ক্যাডার ও অধিক সংখ্যক নন-ক্যাডার নিয়োগ দেওয়ায় ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ অধিদপ্তরে প্রকল্প থেকে আত্তীকৃত, ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের সংমিশ্রণে একটি জগাখিচুড়ি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুনকৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে নবমসহ বিভিন্ন গ্রেডে নিয়োগ, পদ ৯৭২৪ জুলাই ২০২৫

পদোন্নতিবঞ্চিত আরেকজন ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, বিগত সরকারের আমলে কিছু প্রভাবশালী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার প্রভাবে বেআইনিভাবে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের একাধিকবার ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এমনকি যোগ্যতাসম্পন্ন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে নন-ক্যাডারদের ক্যাডারভুক্তির পাঁচ মাসের মধ্যে তাঁদের পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতিও দেওয়া হয়। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এসব অবৈধ প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। সেগুলো এখন তদন্ত করলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়মিত করা ৩২ জন, ৫৮ জন নন-ক্যাডারসহ মোট ৯০ জন সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডার ভুক্তির উদ্দেশ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে। যেখানে ভূতাপেক্ষিক ক্যাডার ভুক্তির কোনো নির্দেশনা ছিল না। নিয়োগবিধি সংশোধনে এবং ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল) গঠন ও ক্যাডার বিধিমালা, ১৯৮০’ সংশোধনপূর্বক সহকারী প্রকৌশলীর ক্যাডার পদ ৫০টি থেকে ২৩৫টিতে বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপনেও কোনো ভূতাপেক্ষিক কার্যকারিতা দেওয়া হয়নি। এমনকি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় ওই ৯০ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডার পদে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো সুপারিশ করেনি। বরং বিদ্যমান ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার পর ওই ৯০ নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে ক্যাডারভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করে পিএসসি। তা সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০২২ সালে ৯০ কর্মকর্তাকে বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারে তাঁদের রাজস্ব খাতে যোগদানের তারিখ থেকে ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডারভুক্ত করে।

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএসের সিলেবাস প্রকাশ, পদ ৬৮৩২৪ জুলাই ২০২৫

ফলে ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় থেকে এই ৯০ কর্মকর্তা ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডার হয়ে যান ২০২২ সালে এসে। এই গেজেট প্রকাশের ফলে বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। যে সময় থেকে তাঁরা ক্যাডারভুক্ত, সে সময়ে ক্যাডারে পর্যাপ্ত পদই ছিল না। এই গেজেট প্রকাশের ফলে বিদ্যমান ক্যাডার কর্মকর্তারা জ্যেষ্ঠতার ক্ষেত্রে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই ৯০ জনের মধ্যে অনেকে বিসিএস পরীক্ষাই দেননি। আবার কয়েকজন বিসিএসে উত্তীর্ণ হলেও পদস্বল্পতার কারণে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। অথচ বিসিএস ক্যাডারদের কয়েক মাস আগে অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার পদে যোগদান করে তাঁরা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সিনিয়র হয়ে যান। এ ছাড়া এই অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওই গেজেট প্রকাশের পর থেকে তাঁদের অধীন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার জুনিয়র হয়ে যান।

ক্যাডার কর্মকর্তারা ২৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার কাছে জরুরি ভিত্তিতে ৯০ জনের এনক্যাডারমেন্টের প্রজ্ঞাপন বাতিল, এনক্যাডার কর্মকর্তাদের পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন সংশোধন ও পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিধিসম্মতভাবে পদোন্নতি প্রদানের দাবি জানান। তাঁরা মনে করেন এ সমস্যার সমাধান করা না হলে, বিদ্যমান ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতো ৪১তম বিসিএসের মাধ্যমে নতুন যোগদান করা ৩১ জন ও ৪৩তম বিসিএসের মাধ্যমে সুপারিশ করা ৫০ জন কর্মকর্তাও পরবর্তী সময় এ বৈষম্যের শিকার হবেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) ২৫৭ প্রকৌশলীর চাকরি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর, চাকরি নিয়মিতকরণ ও পদোন্নতিতে নানা অনিয়ম হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে পাশ কাটানো হয়েছে সব বিধিবিধান। আইনগত সুযোগ না থাকলেও দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি।

আরও পড়ুনবিদ্যুৎ কোম্পানিতে চাকরি, সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে নেবে ১১৮ জন২৫ জুলাই ২০২৫

এসব প্রকৌশলীর নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। ৩ জুলাই বিচারপতি মো.

আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের দ্বৈত বেঞ্চে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ৯০ জনের বিষয়ে তদন্ত করলে ও ক্যাডার কর্মকর্তাদের বৈষম্যের বিষয়ে তদন্ত করলেও এমন চিত্র পাওয়া যাবে। বর্তমান সরকারের কাছে এই দাবি জানান কর্মকর্তারা।

চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞ সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে যে বৈষম্য হয়েছে, সেটি পরীক্ষা করে দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক য ড র কর মকর ত দ র স থ ন য় সরক র ব ভ গ ন ক য ড র কর মকর ত ক য ড র কর মকর ত র ন কর মকর ত কর মকর ত ক ক য ড র পদ ব স এস র ভ ক ত কর প রকল প ন প রক পর ক ষ কর ত র তদন ত সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ