খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ি পানছড়ি উপজেলায় গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

রবিবার (২৭ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার উগুদোছড়ি গ্রামে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত ব্যক্তির নাম খুকু চাকমা। তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়নের বেতছড়ি খ্রিস্টানপাড়ার মৃত ভাগ্যধন চাকমার ছেলে ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সদস্য।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) ছাত্র ও যুব সংগঠন হিসেবে কাজ করে।

আরো পড়ুন:

পাবনায় মসজিদ নির্মাণ নিয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত, দুই পক্ষের মামলা

পাবনায় সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু, ১৫ বাড়িতে আগুন

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম-ভিত্তিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা জেএসএসের (এমএন লারমা) সদস্যরা গুলি করেছেন বলে অভিযোগ করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।  

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শ্যামল চাকমা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, রবিবার (২৭ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য খুকু চাকমা পানছড়ি উপজেলার ২নং চেঙ্গী ইউনিয়নের উগুদোছড়ি গ্রামে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে গেলে পিকলু চাকমার নেতৃত্বে জেএসএস (এমএস লারমা) গ্রুপের ২০ জনের সশস্ত্র দল তার ওপর গুলি করে। এতে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুকু চাকমা গুরুতর আহত হয়। পরে সন্ত্রাসীরা তাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে চলে যায়। 

স্থানীয়রা বিকেলে গোলাগুলি শব্দ শুনতে পেলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেনি।

পানছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন জানান, গোলাগুলির খবর পেলেও কেউ নিহত হওয়ার বিষয়ে তথ্য তার কাছে নেই।


 

ঢাকা/রূপায়ন/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত গণত ন ত র ক য ব ফ র ম র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ‘পাহাড়ে শান্তি চেয়েছিলেন এম এন লারমা’