এআইয়ের চোখে মানুষের সেরা ২৫ অনুভূতি
Published: 28th, July 2025 GMT
ছবি: প্রথম আলো
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এআই নিয়ে শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর গা ছাড়া মনোভাব, বললেন বিজ্ঞানী জিওফ্রি হিন্টন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খ্যাতনামা ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জিওফ্রি হিন্টন। তাঁর দাবি, বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এআইয়ের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হলেও তা প্রকাশ্যে গুরুত্ব দিয়ে দেখাচ্ছে না। হিন্টনের ভাষায়, এআই এখন এমনভাবে বিকশিত হচ্ছে, যার গতি ও জটিলতা বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশারও বাইরে।
সম্প্রতি ‘ওয়ান ডিসিশন’ নামের একটি পডকাস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিন্টন বলেন, বড় কোম্পানিগুলোর অনেকেই এসব ঝুঁকি সম্পর্কে জানেন, কিন্তু প্রকাশ্যে সেসবে গুরুত্ব দিতে অনিচ্ছুক। কিন্তু ডেমিস হাসাবিস এই দিক থেকে ব্যতিক্রম। তিনি বিষয়টি গভীরভাবে বোঝেন এবং আন্তরিকভাবে কিছু করার চেষ্টা করছেন।
কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণার জন্য এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জিওফ্রি হিন্টন ও মার্কিন গবেষক জন জে হপফিল্ড। এই গবেষণাকাজই আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। হিন্টন জানান, এআই এখন যে হারে উন্নত হচ্ছে, তা আগাম কল্পনার বাইরে ছিল। তাঁর মতে, এআই মডেলগুলো এখন এমন সব উপায়ে শেখার ক্ষমতা অর্জন করছে, যা অনেক সময় গবেষকেরাও পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারছেন না।
হিন্টন বলেন, ‘এই প্রযুক্তির অগ্রগতি এত দ্রুত ঘটছে যে কখন কোন দিক থেকে কোন ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে, তা আগে থেকে বলা কঠিন। আমি যদি আরও আগে এর সম্ভাব্য বিপদগুলো নিয়ে ভাবতাম, তাহলে হয়তো প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকত। তখন মনে হয়েছিল, এসব ঝুঁকি বহু দূরের ভবিষ্যতের বিষয়।’
২০২৩ সালে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় কাজ করার পর গুগল ছাড়েন হিন্টন। তখন অনেকেই ধরে নেন, গুগলের আগ্রাসী এআই কৌশলের প্রতিবাদেই প্রতিষ্ঠানটি ছাড়ছেন তিনি। তবে পডকাস্টে হিন্টন এই ব্যাখ্যাকে ‘মিডিয়ার বানানো গল্প’ বলে উল্লেখ করেন। ‘গল্পটা এমন যে একজন সৎ বিজ্ঞানী প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন সত্য বলার জন্য। এটা মিডিয়ার বানানো। সত্যি কথা হলো, আমি গুগল ছেড়েছি কারণ বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। আমি আর আগের মতো কোড করতে পারছিলাম না’—বলেন হিন্টন। তবে তিনি স্বীকার করেন, গুগলে থাকলে তাঁর পক্ষে সব কথা খোলাখুলি বলা সম্ভব হতো না। ‘আপনি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বেতন নেন, তখন তাদের স্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে কিছু বলা কঠিন।’
ডেমিস হাসাবিসের প্রসঙ্গে হিন্টনের মন্তব্য, ‘ডেমিস এমন একজন, যিনি কেবল প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন না, এর দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিও বুঝতে পারছেন এবং সেটা রোধে উদ্যোগ নিতে আগ্রহী।’ ডেমিস হাসাবিস ২০১৪ সালে গুগলের মালিকানাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। বর্তমানে তিনি গুগলের এআই গবেষণা শাখার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রযুক্তির অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদী হলেও তিনি এআইয়ের অপব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সতর্কতা প্রকাশ করে আসছেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হাসাবিস বলেন, তাঁর মূল উদ্বেগ চাকরি হারানোর ঝুঁকি নয়, বরং এই প্রযুক্তি যদি ভুল মানুষের হাতে পড়ে, সেটাই বড় ভয়। তিনি বলেন, ‘একজন অসৎ ব্যক্তি যদি এই প্রযুক্তিকে ক্ষতিকর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই প্রযুক্তির শক্তিশালী দিকগুলো যেন কেবল সৎ ও দায়িত্বশীল মানুষের হাতেই থাকে।’ হাসাবিস মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন যেন একদিকে ভালো মানুষের জন্য সুযোগ তৈরি করে, আবার অন্যদিকে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে এর নিয়ন্ত্রণ সুরক্ষিত রাখা যায়। সেই ভারসাম্যই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে