জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান
Published: 28th, July 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে চার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পদ্ধতি সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করার আলোচনা থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াক আউট করে বিএনপি। আজ সোমবার দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার শুরুতেই বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বৈঠক থেকে বের হয়ে যান। দলটি আগেই বলেছিল এ বিষয়ে আলোচনায় তারা অংশ নেবে না। তবে কিছু সময় পর বিএনপির প্রতিনিধি দল আবার আলোচনায় যোগ দেয়।
প্রস্তাবিত সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিরীক্ষক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংক্রান্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপি অংশ নেবে না বলে আগেই জানিয়েছিল।
আজ সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২০ তম দিনের শুরুতে আলোচনার জন্য শুরু হয়।
সকাল সাড়ে ১১ টার পরে বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ জানান, তারা আলোচনায় অংশ নেবে না। এ সময় বিএনপির প্রতিনিধি দল ওয়াক আউট করে।
বিএনপি আলোচনা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, একটি দল আলোচনা করছে না তাহলে এই বিষয়ে ঐক্যমত্ত কিভাবে হবে, আলোচনা চালানো হবে কিনা তিনি সেই প্রশ্ন রাখেন।
জবাবে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপি আগেই বলেছিল এই চারটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিষয়ে আলোচনায় বিএনপি থাকবে না। তারা এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগ পদ্ধতি সংবিধানে যুক্ত করার বিরুদ্ধে।
আলী রীয়াজ বলেন, একটা দলের কারণে আলোচ্য সূচি বাদ দিতে পারে না কমিশন। তবে একটা বড় দল না থাকলে আলোচনা কার্যকর হবে না সবাই এটি মনে করলে কমিশন বিষয়টি বিবেচনা করবে।
অবশ্য কিছু সময় পর বিএনপি আবার আলোচনায় যোগ দেয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
দুদক ও পিএসসির বিষয়ে বিএনপিকে অবস্থান পরিবর্তনের আহ্বান এনসিপির
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) নিয়োগ কমিটির বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে দলীয় অবস্থান থেকে সরে আসতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২০তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে এনসিপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই একমত পোষণ করেছে বলে জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘কেবল বিএনপি পিএসসি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ কমিটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। আমরা বিএনপির কাছে আহ্বান রাখব, নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে যেভাবে দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করে একমত হয়েছে, একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাকি যে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলোর ব্যাপারে আপনারা আপনাদের দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করবেন।’
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব করেছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সে প্রস্তাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে নয় সদস্যের ওই কমিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের পাশাপাশি অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানসহ আইন দ্বারা নির্ধারিত পদের নিয়োগ দেবে।
বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বিরোধিতা মুখে গত ২৫ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে এনসিসির পরিবর্তে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি নামে নতুন প্রস্তাব করে কমিশন। এ প্রস্তাব অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন এবং আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ দেবে। তবে বিএনপি ও সমমনা পাঁচটি দল এ প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করে। তারা মনে করে, এর মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হবে।
ওই দিন এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন, এই প্রস্তাবের সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে একমত হয় বিএনপি। সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের জন্য এনসিসি বা এ ধরনের কোনো কমিটি গঠনের বিধান সংবিধানে যুক্ত করা যাবে না বলে শর্ত দেয় দলটি।
এ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘গত অর্ধশতকে বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারা নিজেদের মতো করে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয় লোক নিয়োগ দিয়েছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণে আক্রান্ত হয়েছে এবং জনবান্ধবতা হারিয়েছে।’
পিএসসি ও দুদকে নিয়োগ বিষয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা এমন একটি সিলেকশন কমিটির কথা বলেছি, যা দলনিরপেক্ষ হবে এবং যেখানে সরকারি ও বিরোধী দল উভয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকবেন। এভাবেই নিয়োগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব রোধ করে সুশাসনের পথ তৈরি করা সম্ভব হবে।’
বর্তমানে সংবিধানের ১৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, এ অবস্থান পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ যাচাই কমিটির প্রস্তাব সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তা বড় পরিবর্তন নয়, বরং কার্যকর জবাবদিহির সূচনা হবে।
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে, দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নয়। দুদক এখন একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান নিয়োগ দেন সরকারপ্রধান। ফলে অনেক সময় এটি ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতি আড়াল করে, আর বিরোধীদের টার্গেট করে। আমরা চাই, এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হোক, যার প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগ হবে একটি নিরপেক্ষ সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে।’