গঙ্গাচড়ায় হিন্দুদের বসতঘরে হামলার নিন্দা, জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি
Published: 28th, July 2025 GMT
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কটূক্তির অভিযোগে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৪টি বসতঘরে হামলা–ভাঙচুর–লুটপাটের ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), মহিলা পরিষদ ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সোমবার পৃথক তিনটি বিবৃতিতে তারা এ ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নে দুই দফায় হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাসদ। দলটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৭ বছর বয়সের এক কিশোরের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত এই হামলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাহীনতার চিত্র ফুটে উঠেছে।
পুলিশ সেই কিশোরকে গ্রেপ্তার করার পরেও উত্তেজনা সৃষ্টি করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা বলে মন্তব্য করেছে বাসদ। এ ঘটনায় দায়ীদের আইনের আওতায় আনা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নিরাপত্তা বিধান করা এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে বাসদের বিবৃতিতে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুর দেওয়া বিবৃতিতে গঙ্গাচড়ায় ধর্ম অবমাননার অজুহাতে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। মহিলা পরিষদ বিবৃতিতে বলেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অজুহাতে বাবা-ছেলেকে প্রকাশ্যে মারধর, রাজধানীর খিলক্ষেতে প্রকাশ্যে বুলডোজার দিয়ে মন্দির ভেঙে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে মহিলা পরিষদ বিবৃতিতে বলেছে, এসব অপতৎপরতা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। এ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় জনমনে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও বিভক্তি বিস্তারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
সব সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে মহিলা পরিষদ বলেছে, এসব ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত শাস্তির দাবি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, বিচার বা শাস্তি হয় না বলে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা সমাজের মধ্যে ঘটে চলেছে। সব ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতেও সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে মহিলা পরিষদ।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী এক বিবৃতিতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গঙ্গাচড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও মারধরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। উদীচীর সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বিবৃতিতে এ হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রংপুরে মহানবী (সা.)–কে কটূক্তির অভিযোগে কিশোর গ্রেপ্তার, ১৪টি বসতঘর ভাঙচুর
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কটূক্তির অভিযোগে এক কিশোরকে (১৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় উত্তেজিত লোকজন গতকাল শনিবার রাতে ও আজ রোববার বিকেলে ওই কিশোরের বাড়িসহ সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজনের ১৪টি বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে।
আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার কিশোর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী। বাড়ি গঙ্গাচড়ার বেদগাড়ি ইউনিয়নের একটি গ্রামে।
গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান প্রথম আলোকে বলেন, ওই কিশোর ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর লেখা ও ছবি দিয়েছে—এমন অভিযোগ পায় পুলিশ। পরে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আটক করে রাত সাড়ে আটটার দিকে থানায় আনা হয়। পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই কিশোরকে থানায় নেওয়ার পর তার বিচারের দাবিতে মিছিলসহ উত্তেজিত লোকজন তার বাড়ির সামনে যায়। রাত ১০টার দিকে দ্বিতীয়বার আরেকটি মিছিল এসে কিশোরের এক স্বজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। পরে রাতে থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওসি আল এমরান বলেন, গতকাল রাত ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত পুলিশ ছিল। পরিস্থিতি শান্ত করার পর তাঁরা চলে আসেন। আজ জোহরের নামাজের পর হাজার হাজার লোক সেদিকে যাবেন—এমন খবর পেয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং তাঁরা সেনাবাহিনীর সাহায্য চান। বেলা একটা থেকে পুলিশ সেখানে অবস্থান নেয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উত্তেজিত জনতা বাড়িঘরে হামলা শুরু করলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর হয়। এতে পুলিশ সদস্যদের অনেকে আহত হয়েছেন। একজন কনস্টেবলকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আলদাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। সেখান থেকে ৫০০ গজ দূরে বাড়িঘরে হামলা করছে উত্তেজিত জনতা। কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা চলে যায়। পরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ১৪টি বসতঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে।
মিছিল নিয়ে এসে মোট ১৪টি বসতবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। রোববার বিকেলে গঙ্গাচড়া উপজেলার আহলাদপুর গ্রামে