ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
Published: 30th, July 2025 GMT
ভারত চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হলে দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, “তারা (ভারত) ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে।”
বুধবার (৩০ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, চুক্তিতে পৌঁছালে ব্যর্থ হলে ভারত কি উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হবে? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “হ্যাঁ, আমার তাই মনে হয়।”
ভারতসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশকে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুবা বর্ধিত শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে।
আরো পড়ুন:
পুতিনকে এবার ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প
নিউ ইয়র্কে গুলিতে নিহত রতনের কুলাউড়ার বাড়িতে শোকের ছায়া
ভারতীয় ও আমেরিকান কর্মকর্তারা গত কয়েক মাস ধরে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন, তবে এখনও কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদিত হয়নি। সোমবার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সিএনবিসি-কে বলেন, “ভারত তাদের বাজারের কিছু অংশ খুলে দিতে চাচ্ছে, আমরা আলোচনায় আগ্রহী। তবে কতটা অগ্রসর হতে তারা প্রস্তুত- সেটি আরো আলোচনা দরকার।’
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের উচ্চ শুল্ক নীতির সমালোচনা করে আসছেন। তার অভিযোগ, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ভালো বন্ধু, কিন্তু বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ভারত মার্কিন পণ্যে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করে।
ট্রাম্প বলেন, “এখন আমি দায়িত্বে আছি, তাই ভারত তা করতে পারবে না।” তিনি ভারতকে ‘শুল্কের রাজা’ ও বাণিজ্য সম্পর্কের ‘বড় অপব্যবহারকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প, যা পরে স্থগিত করা হয়। তবে নতুন করে তিনি আবারো কড়া অবস্থান নিচ্ছেন।
উভয় পক্ষই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে, কর্মকর্তারা আলোচনাকে কখনো ‘ইতিবাচক’, আবার কখনোবা ‘পরিমিত’ বলে বলে মনে করছেন।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার স্বীকার করেছেন যে- যদিও তিনি আগে বলেছিলেন ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি ‘আসন্ন’, কিন্তু “এটি বোঝা উচিত যে, দিল্লির বাণিজ্য নীতি ‘অনেক দিন ধরেই সুরক্ষাবাদী’ এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার’ ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।”
গ্রিয়ার জানান, ট্রাম্প এমন চুক্তি নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করছেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যান্য দেশের বাজারকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্মুক্ত করবে।
উভয় দেশের জন্যই কৃষি ও দুগ্ধ খাত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়াশিংটন ভারতের কৃষি খাতে আরো বেশি প্রবেশাধিকারের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু ভারত দুগ্ধ ও কৃষিখাতে বড় পরিসরে বাজার উন্মুক্ত করতে অনাগ্রহী। আমদানির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে মোদি সরকার সংবেদনশীল কৃষি খাত রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ এই খাতে বিপুলসংখ্যক ভারতীয়ের জীবিকা জড়িত।
গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সিএনবিসিকে বলেন, কৃষিক্ষেত্র ভারতের জন্য সংবেদনশীল এবং সরকার কৃষকদের স্বার্থ ‘ভালোভাবে সুরক্ষিত’ নিশ্চিত করবে।
গোয়েল আরো বলেন, ভারত শিগগির ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি চুক্তি করার বিষয়ে আশাবাদী।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প এবং মোদি এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।
ভারত ইতিমধ্যেই বোর্বন হুইস্কি ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনও ভারতের সঙ্গে ৪৫ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি চালিয়ে যাচ্ছে, যা ট্রাম্প কমাতে আগ্রহী।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র শ ল ক আর প র জন য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা