৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করলে এনসিবি তা করবে: আখতার হোসেন
Published: 30th, July 2025 GMT
সরকার যদি ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করে, তাহলে এনসিপি দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে নিজেরা তা প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একবিন্দু ছাড় দিতে রাজি না।’
এই নেতা মনে করেন, সরকার যদি আন্তরিক হয় এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমন্বয় করে, তাহলে ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যেই একটি পরিপূর্ণ, আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তিসম্পন্ন ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা সম্ভব।
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের মধ্যবর্তী বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আখতার হোসেন এ কথাগুলো বলেন। এ সময় তিনি জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে চলমান বিভ্রান্তি দূর করতে একটি ব্যাখ্যাও দেন।
আখতার হোসেন বলেন, এই দুটি নথি এক নয় এবং ভুলভাবে গুলিয়ে ফেলা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি প্রচারণা হতে পারে, যা এনসিপির অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র হচ্ছে গত বছরের আগস্টের গণ–অভ্যুত্থান এবং ৫ আগস্টের বিজয়ের একটি ঐতিহাসিক স্বীকৃতি, যার একটি আইনি ভিত্তি থাকা দরকার। এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। অন্যদিকে, জুলাই সনদ হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কমিশনে আলোচিত প্রস্তাবগুলোর একটি বাস্তবায়নযোগ্য রূপরেখা।
জুলাই সনদ নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই না এমন একটি অকার্যকর, অপূর্ণ এবং মৌলিক সংস্কারবিহীন জুলাই সনদ তৈরি হোক, যেটা তিন দলের অতীত রূপরেখার মতো শুধু ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই জুলাই সনদটি হবে কার্যকর, পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ধারণকারী, আইনি ভিত্তিসম্পন্ন এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য।’
জুলাই সনদ নিয়ে কমিশনের প্রাথমিক খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সনদে অন্তর্ভুক্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এটি এনসিপি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই ধরনের বিলম্বিত বাস্তবায়নের প্রস্তাব প্রতারণার সুযোগ তৈরি করে এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে আখতার হোসেন অনুরোধ জানান, সংবাদ পরিবেশনের সময় যেন জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের পার্থক্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, ‘অনেকে ভাবছেন আমরা জুলাই সনদে সই করলেই সব মেনে নিচ্ছি, এটা ভুল। আমরা মৌলিক সংস্কার এবং আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো সনদে সই করব না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আখত র হ স ন জ ল ই সনদ প রক শ এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
সাফল্যের সঙ্গে সব সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বাসস লিখেছে, বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি, যার মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এই সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে কেবল সুগমই করবে না, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “জনগণ প্রত্যাশায় আছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখার জন্য, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে; এমন কিছু পরিবর্তন যা এদেশে আর কখনো কোনো স্বৈরাচারের আগমন ঘটতে দেবে না, এমন কিছু পরিবর্তন যা আমাদের জাতীয় জীবনে সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাবে, সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে।”
“সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি। বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
‘অতীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমরা বিদেশিদের আসতে দেখেছি’ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বন্ধু রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে, আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।”
“এই কারণেই সকল রাজনৈতিক দল এক কাতারে এসেছে, রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিয়েছে এবং আমাদেরকে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে আমরা নিজেরাই বিশ্ববাসীর দরবারে আমাদের জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরেছি,” বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা এই সনদ তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাদের সকলকে আমি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”
এই জুলাই সনদ সারা বিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সংকটকালীন সময়ে দেশগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ যারা মাসের পর মাস এই দীর্ঘ আলোচনার সঙ্গে থেকেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সকল কার্যকলাপ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য আমাদের মাঝে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, এই দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।”
‘দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে’ বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো একক ব্যক্তি, একক সংগঠন, একক সংস্থা অথবা একক সরকার দিয়ে সম্ভব হবে না; এজন্য সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে একতা থাকতে হবে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”
ঢাকা/রাসেল