কাপুরুষ গার্দিওলা আর স্কুলবালক মেসির সঙ্গে কাটানো ইব্রার ঘটনাবহুল এক বছর
Published: 3rd, August 2025 GMT
২৪ বছর শীর্ষ পর্যায়ে খেলেছেন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। এর মধ্যে বার্সেলোনায় কাটিয়েছেন মাত্র এক বছর। ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের আগস্টের ওই বছরেই সুইডিশ এই তারকা মুখোমুখি হয়েছিলেন নানা অভিজ্ঞতার, যার মূল কেন্দ্রে ছিলেন কোচ পেপ গার্দিওলা ও লিওনেল মেসি। ২০১১ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘আই অ্যাম জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ’-এ সময়ের কথা তুলে ধরেছেন তিনি।কী লিখেছেন ইব্রাহিমোভিচ
বার্সেলোনা কোচ পেপ গার্দিওলা তার ধূসর স্যুট আর গম্ভীর অভিব্যক্তি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন, দেখে মনে হচ্ছিল সে একটু সংকোচ বোধ করছে।
সেই দিনগুলোতে আমি তাকে ঠিকঠাকই ভাবতাম, (জোসে) মরিনিও বা (ফ্যাবিও) ক্যাপেলোর মতো না হলেও, একটা ভাল মানুষ। এটা আমাদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধার অনেক আগের কথা। তখন ২০০৯ সালের শরৎ, আমি আমার শৈশবের স্বপ্ন পূরণ করে চলেছি। যোগ দিয়েছি বিশ্বের সেরা দলে, ক্যাম্প ন্যুতে ৭০ হাজার মানুষ আমাকে স্বাগতও জানিয়েছে। আমি যেন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিলাম, অবশ্য পুরোপুরি নই।
পত্রিকাগুলোতে কিছু বাজে কথা লেখা হচ্ছিল। আমি একটা খারাপ ছেলে, আমাকে সামলানো কঠিন .
গার্দিওলা এসে বলল, ‘শোনো, এখানে বার্সায় আমরা পা মাটিতে রেখে চলি।’
আমি বললাম, ‘ঠিক আছে’।
সে এবার বলল, ‘আমরা ফেরারি বা পোর্শে করে ট্রেনিংয়ে আসি না।’
আমি মাথা নাড়লাম। ‘আমি কোন গাড়ি চালাই তাতে তোমার কী আসে যায়’—এ ধরনের বলতে পারতাম, বললাম না। ভাবছিলাম, সে কী চায়? আমাকে কী বার্তা দিতে চাইছে?
বিশ্বাস করো, এখন আর আমি দেখানোর জন্য চোখ-ঝলসানো গাড়ি নিয়ে এসে ফুটপাতে পার্ক করি না। আমি গাড়ি ভালোবাসি। এটা আমার আবেগ। তবে আমি গার্দিওলার কথার আড়ালে অন্য কিছু টের পাচ্ছিলাম। যেন বলতে চাইছে, তুমি নিজেকে বিশেষ কিছু ভেবো না!
আমার আগেই মনে হয়েছিল বার্সেলোনা একটু স্কুলের মতো বা কোন প্রতিষ্ঠান। খেলোয়াড়রা ঠিকঠাকই ছিল, তাদের নিয়ে কোন সমস্যা নেই। আর ম্যাক্সওয়েলও (ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার) সেখানে ছিল, আয়াক্স আর ইন্টারের পুরোনো সতীর্থ। কিন্তু সত্যি বলতে কোন খেলোয়াড়ই মহাতারকার মতো আচরণ করত না। যা একটু অদ্ভুতই লাগত। মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তা... সবাই ছিল স্কুলের বাচ্চাদের মতো। বিশ্বের সেরা ফুটবলাররা নত মাথায় দাঁড়িয়ে থাকত, ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝতে পারতাম না। ব্যাপারটা আসলে হাস্যকরই। ইতালিতে যদি ট্রেনাররা বলে লাফাও, তারকা খেলোয়াড়েরা বলে- কী বলছে এই লোক, আমরা কেন লাফাব?
কিন্তু এখানে সবাই যা বলা হয় তা-ই করত। আমি মানিয়ে নিতে পারছিলাম না, একদমই না। কিন্তু ভাবলাম, সুযোগটা উপভোগ করা যাক! আমাকে নিয়ে তাদের পূর্বধারণাকে সত্য না বানাই। তাই আমি মানিয়ে নিতে শুরু করলাম। বেশি ভাল মানুষ হয়ে গেলাম। এটার একটা মানসিক প্রভাব আছে। মিনো রাইওলা আমার এজেন্ট, পাশাপাশি ভালো বন্ধুও। সে বলল, ‘তোমার কী হয়েছে জ্লাতান? তোমাকে চেনা যাচ্ছে না।’
আসলে কেউই আমাকে চিনতে পারছিল না। না আমার বন্ধুরা, না অন্য কেউ। আমি মনমরা হয়ে যেতে শুরু করলাম। ব্যাপারটা বোঝার জন্য আপনাদের জানিয়ে রাখি—মালমো এফএফ-এ থাকার সময় থেকে আমি একটা দর্শনেই চলতাম—আমি আমার মতো করেই চলি। লোকে কী ভাবছে সেটা আমি পাত্তা দিই না। কঠোর নিয়মের মধ্যে থাকা লোকজনের সঙ্গ আমার ভালোও লাগে না। আমি সেই সব লোক পছন্দ করি যারা ট্রাফিক সিগনালের লাল বাতি পার হয়ে যায়।
তবে গার্দিওলাকে আমি তা-ই বললাম, যা বললে মানুষ খুশি হবে। ব্যাপারটা একদম গোলমেলে ছিল। আমি ক্লাবের অডি চালাতাম আর সেখানে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়তাম, যেটা স্কুল জীবনে করতাম। আমি আমার সতীর্থদের সঙ্গে আর চেঁচাতাম না। এ সবের মধ্যেই আমি বিরক্ত হয়ে উঠছিলাম। জ্লাতান আর জ্লাতান ছিল না।
তবে এর মধ্যেই মৌসুমটা ভালোভাবেই শুরু হল। একের পর এক গোল করছিলাম। আমরা উয়েফা সুপার কাপ জিতলাম। তবে মাঠে দাপুটে ফুটবল খেললেও বাইরে আমি অন্য মানুষ হয়ে গিয়েছিলাম। কিছু একটা ঘটে গিয়েছিল, তেমন গুরুতর কিছু নয়, কিন্তু তবুও। আমি চুপচাপ হয়ে গেলাম। বিশ্বাস করো, এই ব্যাপারটা কিন্তু বিপজ্জনক। ভালো খেলার জন্য আমার উত্তেজিত থাকা দরকার। চেঁচানো দরকার, হইচই করা দরকার। কিন্তু আমি একেবারে গুটিয়ে গেলাম। হয়তো এর সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সম্পর্ক ছিল। আমি জানি না।
আমি ছিলাম ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি ট্রান্সফার, আর পত্রিকাগুলো লিখছিল যে আমি একটা সমস্যাজনক শিশু, আমার চরিত্রে ঝামেলা আছে। যত সব আজেবাজে কথা। দুর্ভাগ্যবশত, আমি সবকিছু নিয়েই চাপ অনুভব করছিলাম, এমনকি বার্সেলোনায় আমরা শো-অফ করি না, এ সব নিয়েও।
তবে আমার মনে হয়, ওই সময় আমি প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম যে আমিও এ ধরনের পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পারি। এখন বুঝি, ওটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বোকামি ছিল। মাঠে আমি অসাধারণ খেলছিলাম, কিন্তু সেটাতে আগের মতো মজা পাচ্ছিলাম না।
আমি ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবলাম। চুক্তি ভেঙে দিয়ে পালানো নয়, পেশাদার হিসেবে সেটা করবও না। কিন্তু আমার উৎসাহ উবে গিয়েছিল। তারপর এল বড়দিনের ছুটি। আমরা সুইডেনে ফিরে গেলাম। একটা স্কি রিসোর্টে গিয়ে আমি একটা স্নোমোবাইল ভাড়া নিলাম। যখনই জীবন স্থবির হয়ে যায়, আমার একটু অ্যাকশন দরকার হয়। আমি সব সময় পাগলের মতো গাড়ি চালিয়ে এসেছি। এমনও হয়েছে, পুলিশকে ধুলো দেওয়ার জন্য আমি আমার পোর্শে টার্বোতে ৩২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি তুলেছি। আমি এত পাগলামি করেছি যে এখন ভাবতেও ইচ্ছা করে না। এ যাত্রায় আমি পাহাড়ে স্নোমোবাইল নিয়ে উন্মাদনায় মাতলাম। যেন জীবনের সেরা সময় কাটাচ্ছিলাম।
অবশেষে নিজেকে একটু চাপমুক্ত মনে হল। নিজের মধ্যে ফিরে এল পুরোনো জ্লাতান। ভাবলাম, কেন আমি এই সব কিছু সহ্য করব? ব্যাংকে আমার টাকা আছে। আমি ওই নির্বোধ ম্যানেজারের (গার্দিওলা) গোলামি করে সময় নষ্ট করতে চাই না। আমি বরং মজা করতে পারি, পরিবারের দেখাশোনা করতে পারি। কিন্তু ভাবনাটা স্থায়ী হলো না।
যখন আমরা স্পেনে ফিরলাম, বিপদ এসে হাজির। সরাসরি না, ধীরে ধীরে।
একটা ভয়ংকর বরফ ঝড় নেমেছিল। মনে হচ্ছিল স্প্যানিশরা কখনো বরফ দেখেনি। আমরা যেখানে থাকতাম, সেই পাহাড়ি এলাকায় গাড়িগুলো এখানে-সেখানে ছড়িয়ে পড়েছিল। মিনো নামের সেই চমৎকার কিন্তু বোকা লোকটার কথায় আমি অডি নিয়ে রাস্তায় নামলাম। পরিণাম হলো ভয়ংকর। আমরা একটা ঢালু রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কংক্রিটের দেয়ালে ধাক্কা মারলাম, গাড়ির পুরো ডান এক্সেল ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
দলের অনেকের গাড়িই সেই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, কিন্তু আমার মতো এত গুরুতর ঘটনা কারও ঘটেনি। আমি ‘ক্র্যাশ-ইয়োর-কার টুর্নামেন্ট’-এ জিতে গেলাম, আর এটা নিয়ে সবার মধ্যে হাসাহাসিও হল। তখনো মাঝে মাঝে আমি নিজেকে নিজের মতোই অনুভব করতাম। তখনো আমার মোটামুটি ভালোই লাগছিল। কিন্তু তারপর মেসি কিছু কথা বলতে শুরু করল। লিওনেল মেসি অসাধারণ। সে একেবারে অবিশ্বাস্য। আমি তাকে খুব ভাল করে চিনি না। আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ। সে বার্সায় যোগ দিয়েছিল ১৩ বছর বয়সে। যে কারণে বার্সেলোনার সংস্কৃতিতেই বড় হয়েছে, স্কুল-পর্যায়ের বাজে ব্যাপারগুলো নিয়ে তার কোনো সমস্যা নেই। আর পুরো দলই খেলে তাঁকে কেন্দ্র করে, যা স্বাভাবিকই। কারণ সে একজন জিনিয়াস।
আমি যে জায়গাটায় খেলছিলাম, সেখানে মেসির চেয়ে বেশি গোল করছিলাম। এক দিন সে গার্দিওলার কাছে গিয়ে বলল, ‘আমি আর ডান উইংয়ে খেলতে চাই না। আমি মাঝখানে খেলতে চাই।’
আমি ছিলাম স্ট্রাইকার। কিন্তু গার্দিওলা সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্রও ভাবল না। সে ট্যাকটিক্যাল ফরমেশন বদলে দিল। সে ৪-৩-৩ বাদ দিয়ে ৪-৫-১ ফরমেশন নিয়ে এল, আমাকে সামনে রেখে আর মেসিকে আমার ঠিক পেছনে। এতে করে আমি শেষ পর্যন্ত আড়ালেই পড়ে গেলাম। বল মেসির মাধ্যমে সামনে যেতে শুরু করল, আমি আর আমার মতো করে খেলতে পারলাম না। মাঠে আমি পাখির মতো করে মুক্ত হয়ে খেলতে চাই, আমি চাই প্রতিটি জায়গায় ভূমিকা রাখতে। কিন্তু গার্দিওলা আমাকে বলি দিল। এটাই সত্যি। সে আমাকে সামনের জায়গায় আটকে ফেলল। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তার অবস্থানটা বুঝতে পারছি। মেসির তার তারকা খেলোয়াড়।
গার্দিওলাকে মেসির কথা শুনতে হতো। কিন্তু বলো তো! আমি বার্সায় অনেক গোল করেছি, খেলছিলাম অসাধারণ। সে কি একটা লোকের জন্য পুরো দল বদলে দিতে পারে? পারে না। তাহলে সে আমাকে কিনলই কেন? কেউ এত টাকা খরচ করে খেলোয়াড় কেনার পর তার গলা চেপে ধরে? হ্যাঁ, গার্দিওলাকে আমাদের দুজনের কথাই ভাবতে হতো। আর স্বাভাবিকভাবেই ক্লাব ম্যানেজমেন্টের মধ্যে একটা টানাপোড়েন তৈরি হল। আমি ছিলাম তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ, আর নতুন সেটআপে আমি খুশি ছিলাম না। আমি এত দামি ছিলাম যে আমাকে অসন্তুষ্ট রেখে লাভ নেই। ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক টিকি বেগিরিস্তাইন আমাকে বললেন, ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বল। ব্যাপারটা সমাধান কর।
এই ব্যাপারটা আমার ভালো লাগেনি। আমি এমন খেলোয়াড় যে পরিস্থিতি মেনে নেয়। এক সতীর্থ বন্ধু আমাকে বলল, ‘জ্লাতান, মনে হচ্ছে বার্সেলোনা একটা ফেরারি কিনে তাকে ফিয়াটের মতো চালাচ্ছে।’ আমি ভাবলাম, ‘হ্যাঁ’। গার্দিওলা আমাকে একজন সাধারণ আর খারাপ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছিল। এটা পুরো দলের জন্যই ক্ষতি।
একদিন মাঠে অনুশীলনের ফাঁকে আমি গার্দিওলার সঙ্গে কথা বলতে গেলাম। আমার মাথায় ছিল, কোনো তর্ক করব না। তাঁকে বললাম, ‘আমি মারামারি করতে চাই না। আমি যুদ্ধও চাই না। আমি শুধু আলোচনা করতে চাই।’
সে মাথা নাড়ল। মনে হল কিছুটা যেন ভীত। আমি আবার বললাম, ‘তুমি যদি ভাবো যে আমি ঝগড়া করতে চাইছি, আমি চলে যাব। আমি শুধু কথা বলতে চাইছি।’
‘ঠিক আছে। আমি খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করি।’
বললাম, ‘শোনো, তুমি আমার সামর্থ্যের সঠিক ব্যবহার করছ না। যদি শুধু গোলস্কোরার চাইতে, তুমি ইনজাগি বা অন্য কাউকে কিনতে পারতে। আমাকে মাঠে জায়গা দেওয়া দরকার, আমি মুক্ত হয়ে খেলতে চাই। আমি শুধু সোজা সামনে-পেছনে দৌড়াতে পারব না। আমার ওজন ৯৮ কেজি। আমি সামনে-পেছনে দৌড়াদৌড়ির জন্য নিজেকে তৈরি করিনি।’
সে ভাবতে লাগল। ভাবতে গেলে সে সময় মাটির দিকে চোখ রাখে।
এরপর আমাকে বলল, ‘আমি মনে করি তুমি যেভাবে খেলছ, সেভাবেই খেলতে পারো।’
বললাম, ‘না, বরং তুমি আমাকে বেঞ্চে রাখো। সম্মান রেখেই বলছি, আমি তোমার অবস্থান বুঝতে পারছি, কিন্তু তুমি অন্য খেলোয়াড়দের জন্য আমাকে বলি দিচ্ছ। এটা কাজ করছে না। এটা যেন তুমি একটা ফেরারি কিনেছ, কিন্তু ফিয়াটের মতো চালাচ্ছ।’
সে আরেকটু ভাবল। বলল, ‘ঠিক আছে, এটা হয়তো একটা ভুল ছিল। এটা আমার সমস্যা। আমি এটা সমাধান করব।’
আমি খুশি হলাম। সে এটার সমাধান করবে। কিন্তু হলো উল্টো। সে আমাকে অবহেলা করতে শুরু করল। আমার দিকে তাকাতেই চাইত না, আর আমি এমন নই যে এসবে রাগ করি। নতুন পজিশনে থেকেও আমি দারুণ খেলছিলাম।
চ্যাম্পিয়নস লিগে আর্সেনালকে ওদের মাঠে রীতিমতো পর্যুদস্ত করে তুলেছিলাম। পরিবেশ ছিল উত্তপ্ত। প্রথম ২০ মিনিট ছিল একেবারে অবিশ্বাস্য। আমি দুই গোল করলাম, দুটোই সুন্দর গোল। ভাবছিলাম, ‘গার্দিওলায় কী আসে যায়, আমি শুধু আমার খেলা খেলব!’
কিন্তু এরপর আমাকে বদলি করে দিল গার্দিওলা, আর্সেনালও ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রথমে ১-২, এরপর ২-২ করে ফেলল। যেটা দলের জন্য বাজে ছিল।
এরপর আমার পায়ের পেশিতে চোট লাগল। সাধারণত কোচেরা এ ধরনের ঘটনায় কিছুটা চিন্তিত হয়ে ওঠেন। জ্লাতানের আহত হওয়াটা যে কোনো দলের জন্যই গুরুতর ব্যাপার। কিন্তু গার্দিওলা বরফের মতো ঠান্ডা। সে একটি শব্দও বলল না। আমি তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরে ছিলাম। এ সময়ে সে একবারও এসে জিজ্ঞেস করেনি, ‘কেমন আছ, জ্লাতান? পরের ম্যাচ খেলতে পারবে?’
সে সকালবেলা ‘গুড মর্নিং’ও বলত না। একদমই না। আমার দিকে তাকাতেই চাইত না। আমি কোনো রুমে ঢুকলে সে বেরিয়ে যেত। আমি ভাবলাম, ঘটনা কী? আমি কি কিছু ভুল করেছি? আমাকে দেখতে কি বাজে দেখাচ্ছে? আমার কথাবার্তা কি হাস্যকর? এই সব চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। আমি ঘুমোতেও পারছিলাম না।
ক্রমাগত এ সব নিয়ে ভাবছিলাম। গার্দিওলার ভালোবাসা আমার দরকার ছিল, তা নয়। সে আমাকে ঘৃণা করলেই বা কী! আর ঘৃণা আর প্রতিশোধই তো আমাকে ভালো কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু এবার আমি মনোযোগ হারিয়ে ফেললাম। যা ভাবছিলাম, সে সব নিয়ে দলের অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বললাম। কেউই কিছু জানে না। থিয়েরি অঁরি তখন বেঞ্চে। সে ফ্রান্স জাতীয় দলের ইতিহাসের সেরা গোলদাতা। দারুণ ফর্মেও ছিল। কিন্তু তার সঙ্গেও গার্দিওলার সমস্যা চলছিল না।
আমি অঁরিকে বললাম, ‘সে (গার্দিওলা) আমার সঙ্গে কথা বলে না। আমার চোখে চোখ রাখে না। তোমার কী মনে হয়, কী হয়েছে?’
‘কোনো ধারণা নেই’—অঁরি উত্তর দিল।
আমরা এটা নিয়ে মজা করতে শুরু করলাম। যেমন—‘হায় জ্লাতান, আজকে কি চোখে চোখ পড়েছে?’
‘না, কিন্তু আমি তার পিঠ দেখতে পেয়েছি!’
‘বাহ, উন্নতি হয়েছে’
এই সব বোকা বোকা কথায় খানিকটা ভালো লাগলেও পুরো ব্যাপারটা সত্যিই আমার স্নায়ুতে চাপ দিচ্ছিল। আমি প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায় নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম, আমি কী করেছি? কী সমস্যা? কিন্তু কোনো উত্তর পাচ্ছিলাম না। শুধু এটাই বুঝতে পারছিলাম যে গার্দিওলার এই ঠান্ডা আচরণের পেছনে অবশ্যই আমার পজিশন নিয়ে সেই কথোপকথনের ভূমিকা আছে। অন্য কোনো ব্যাখ্যা ছিল না। কিন্তু এটা সত্যি হলে সেটা হাস্যকর হবে। সে কি আমার পজিশন নিয়ে আলোচনার আগে আমাকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে চাইছিল? আমি তার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। তার চোখে চোখ রাখার চেষ্টা করলাম। সে আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিল। তাকে বিব্রত লাগছিল।
আমি একটা মিটিং সেট করে জিজ্ঞেস করতে পারতাম, কী হচ্ছে? কিন্তু আমি সেটা কখনোই করব না। আমি তার কাছে যথেষ্ট হাত পেতে ফেলেছি। এটা তার সমস্যা।
আমি জানতামও না সমস্যাটা কী। আমি এখনো জানি না... অথবা জানি। আমার মনে হয় এই লোকটা শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব সামলাতে পারে না। সে চায় শান্ত-শিষ্ট স্কুলছাত্র। আর তার চেয়েও বাজে ব্যাপার হচ্ছে সে তার সমস্যা থেকে পালিয়ে বেড়ায়। সে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে না, আর এটাই সবকিছুকে আরও খারাপ করে তুলেছিল।
পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে লাগল।
আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরির ছাই মেঘের কারণে ইউরোপজুড়ে সব ফ্লাইট বাতিল হয়ে গিয়েছিল, ওই সময় সান সিরোতে ইন্টার মিলানের সঙ্গে ম্যাচ আমাদের। আমরা বাসে করে গেলাম। বার্সার কোনো বুদ্ধিমান এটাই ঠিক ভেবেছিল। তত দিনে আমার চোট সেরে গেছে। কিন্তু ভ্রমণটা ছিল খুবই বাজে। ১৬ ঘণ্টা পথেই কেটেছে। মিলানে পৌঁছে আমরা একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। এটা ছিল আমাদের জন্য এ পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ—চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল। সান সিরো আমার পুরোনো হোম গ্রাউন্ড, বার্সেলোনার হয়ে নামার পর দর্শকদের দুয়ো শুনতে হবে। তাতে আমার সমস্যা নেই, বরং উল্টোটা। আমি এমন জিনিসে প্রাণচঞ্চল হই। কিন্তু মুখোমুখি হলাম ভিন্ন এক পরিস্থিতির।
জোসে মরিনিওকে নিয়ে গার্দিওলার কোনো একটা জটিলতা ছিল। মরিনিও বড় তারকা। সে এরই মধ্যে পোর্তোকে নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে। সে ইন্টারে আমার ম্যানেজার ছিল। ভালো লোক। হেলেনাকে প্রথমবার দেখেই সে ফিসফিস করে বলেছিল, ‘হেলেনা, তোমার একটাই মিশন। জ্লাতানকে খাওয়াও, তাকে ঘুম পাড়াও, তাকে খুশি রাখো!’
এই লোকটা যা খুশি তাই বলে। আমি তাকে পছন্দ করি। সে তার সেনাবাহিনীর নেতা। কিন্তু সবার খেয়ালও রাখে। সে ইন্টারে আমাকে সব সময় মেসেজ করত, জিজ্ঞেস করত আমি কেমন আছি। গার্দিওলার একদম উল্টো। যদি মরিনিও কোনো রুমে আলো জ্বালায়, গার্দিওলা পর্দা টেনে দেয়। আমার ধারণা ছিল, গার্দিওলা তার সঙ্গে পাল্লা দিতে চাইছিল।
গার্দিওলা আমাদের বলল, ‘আমাদের প্রতিপক্ষ মরিনিও নয়, ইন্টার মিলান’। এমনভাবে বলছিল যেন আমরা সবাই ভাবছি যে মরিনিওর বিপক্ষেই ফুটবল খেলতে যাচ্ছি। এরপর সে তার দর্শন শোনাতে শুরু করে দিল।
আমি কান দিয়ে শুনছিলামই না। কেন শুনব? ওইগুলা ছিল উন্নত মানের বাজে কথা—রক্ত, ঘাম আর অশ্রু এই সব নিয়ে। আমি কখনোই কোনো ফুটবল ম্যানেজারকে এমন কথা বলতে শুনিনি! একেবারে বাজে! একপর্যায়ে সে আমার দিকে এগিয়ে আসল। এটা ছিল সান সিরোর অনুশীলন সেশন। লোকজন আমাদের অনুশীলন দেখতে এসেছে, বলাবলি করছে ‘ইব্রা ফিরে এসেছে!’
গার্দিওলা আমাকে জিজ্ঞেস করল প্রথম থেকেই খেলতে পারব কি না। বললাম, ‘আমি প্রস্তুত’।
পাল্টা জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কি সত্যিই প্রস্তুত?’
‘একদম। আমি ভালো আছি।’
‘কিন্তু তুমি কি প্রস্তুত?’
সে পাখির মতো একই কথা বলে যাচ্ছিল, শুনে আমার বিরক্ত লাগছিল।
বললাম, ‘শোনো, ভ্রমণটা খুব ফালতু ছিল, কিন্তু আমি ফর্মে আছি। আমার চোট সেরে গেছে। আমি ১০০% দেব।’
গার্দিওলা সন্দেহভরে তাকাল। আমি তাকে বুঝতে পারছিলাম না। তারপর আমি মিনো রাইওলাকে ফোন করলাম। আমি সব সময় মিনোর সঙ্গে ফোনে কথা বলি। সুইডিশ সাংবাদিকেরা সব সময় বলে, মিনো জ্লাতানের ইমেজ নষ্ট করছে। মিনো এটা, মিনো সেটা। আমি কি এখানে পরিষ্কার করে বলব? মিনো একজন জিনিয়াস। তাই আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই লোকটা (গার্দিওলা) কী বলতে চাইছে?’
আমরা দুজনই কিছু বুঝতে পারলাম না। রাগ চড়ে যাচ্ছিল। ম্যাচের সময় শুরুর একাদশেই আমার সুযোগ হল, একপর্যায়ে আমরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেলার। তারপর পরিস্থিতি পাল্টে গেল। আমাকে ৬০ মিনিটে বদলি করে উঠিয়ে নেওয়া হল, আমরা ৩-১ গোলে হেরে গেলাম। আমার খুব রাগ হল।
আগে আমি হারের কথা দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ ভাবতাম। কিন্তু এখন আমার কাছে হেলেনা আর বাচ্চারা আছে। তারা আমাকে ভুলে যেতে আর সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। তাই আমি ক্যাম্প ন্যুতে ফিরে আসার দিকে ফোকাস করলাম। সেরে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর পরিবেশও প্রতিনিয়ত আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল। চাপটা পাগল করার মতো ছিল। মনে হচ্ছিল বাতাসে গুঞ্জন হচ্ছে, আর আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হলে বড় একটা জয় দরকার। কিন্তু তারপর... ।
(দ্বিতীয় লেগে) আমরা ১-০ জিতলাম। কিন্তু এটা যথেষ্ট ছিল না। আমরা চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়ে গেলাম। এরপর গার্দিওলা আমার দিকে এমনভাবে তাকাল, যেন এটা সব আমার দোষ। আর আমি ভাবলাম, এটাই শেষ। আমি আমার শেষ কার্ড খেলে ফেলেছি।
ওই ম্যাচের পর মনে হচ্ছিল ক্লাবে আমার আর জায়গা নেই, আর তাদের অডি চালাতে গিয়েও আমার খারাপ লাগছিল। লকার রুমে বসে গার্দিওলা যখন আমাকে কোনো উৎপাত বা কোনো এলিয়েনের মতো তাকিয়ে দেখত, তখন আমি একেবারে মুষড়ে যেতাম। এটা মানসিক ব্যাপার ছিল। সে একটা দেয়াল, ইটের দেয়াল। তার মধ্যে কোনো জীবনের লক্ষণ আমি দেখতে পাইনি, আর ক্লাবে প্রতিটি ঘণ্টায় আমি শুধু চাইতাম সেখান থেকে পালাতে।
আমি আর দলকে ধারণ করতে পারছিলাম না। ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ সে আমাকে মাত্র পাঁচ মিনিট খেলালো। পাঁচ মিনিট! আমি ভেতরে-ভেতরে ফুটছিলাম, শুধু বেঞ্চে থাকার জন্য না। আমি সেটা সামলাতে পারি। যদি ম্যানেজার সাহসী হতো, বলে দিত—তুমি যথেষ্ট ভালো নও জ্লাতান।’
কিন্তু গার্দিওলা একটি শব্দও বলেনি, একদম চুপ। এ সব আমার সহ্য হচ্ছিল না। আমি সেটা আমার পুরো শরীর দিয়েই অনুভব করছিলাম। আমি যদি গার্দিওলা হতাম, ওভাবে দেখে ভয়ই পেতাম। আমি বলছি না যে, আমি মুষ্টিযুদ্ধে পারদর্শী! আমি সব রকমের বাজে কাজ করেছি। কিন্তু আমি হাতাহাতিতে জড়াই না। হ্যাঁ, মাঠে আমি কয়েকজনের মাথায় ঢুষ মেরেছি।
এখন যদি আমি এখানে বিস্তারিত বলি—ম্যাচের পর আমি লকার রুমে যাই। আমার কোনো উন্মত্ত আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু খুব খারাপ লাগছিল। আমার সামনে তখন শত্রু দাঁড়িয়ে, মাথা চুলকাচ্ছে। সেখানে আর তেমন নেই।
ইয়াইয়া তোরে ছিল সেখানে, সঙ্গে আরও কয়েকজন। আর ছিল সেই ধাতব বাক্স, যেখানে আমরা ম্যাচের কিট রাখতাম। আমি সেই বাক্সের দিকে তাকিয়ে আচমকা একটা লাথি মারলাম। আমার মনে হয় এটা প্রায় তিন মিটার উড়ে গিয়েছিল, কিন্তু তখনো আমি থামিনি। একদমই না। আমি চিৎকার করে বললাম, ‘তোমার কোনো সাহস নেই’। এরপর এর চেয়েও খারাপ কিছু। এও বললাম, ‘তুমি মরিনিওর সামনে ভয়ে কাঁপছ। তুমি গিয়ে নরকে পড়!’
আমি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললাম। তোমরা হয়তো ভাবছ গার্দিওলা বলবে, ‘মাথা ঠান্ডা কর, তোমার ম্যানেজারের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলো না!’ কিন্তু সে এই ধরনের মানুষই নয়। সে একজন কাপুরুষ। সে শুধু সেই ধাতব বাক্সটা তুলে নিল, যেমন একজন ছোট্ট কেয়ারটেকার করে। তারপর চলে গেল। আর কখনোই এটা নিয়ে কিছু বলল না, একটি শব্দও না।
কিন্তু চারদিকে খবরটা ছড়িয়ে পড়ল। বাসে সবাই উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল, জিজ্ঞেস করছিল, ‘কী হয়েছে? কী হয়েছে?’
এটা নিয়ে কথা বলতে আমার ইচ্ছা করছিল না। রাগ লাগছিল। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে আমার ম্যানেজার এবং বস আমাকে বাদ দিয়েছিল, কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই। এটা একেবারে হাস্যকর। আমার অতীতে বড় বড় ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু পরের দিন আমরা সমস্যা সমাধান করতাম এবং কোনো মনোমালিন্য থাকত না।
কিন্তু এখন? শুধু নীরবতা আর মানসিক খেলা চলছিল। ভাবলাম, আমার বয়স ২৮ বছর। আমি বার্সায় একাই ২২ গোল এবং ১৫ অ্যাসিস্ট করেছি, আর এখনো আমার সঙ্গে এমন আচরণ করা হচ্ছে যেন আমি অস্তিত্বহীন। আমি কি শুধু বসে থাকব এবং মেনে নেব? আমি কি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাব? কখনোই না!
যখন আমি বুঝতে পারলাম যে আলমেরিয়ার বিপক্ষে আমাকে বেঞ্চে থাকতে হবে, তখন আমার সেই লাইনটা মনে পড়ল—‘বার্সেলোনায় আমরা ট্রেনিং সেশনে পোর্শে বা ফেরারি নিয়ে আসি না!’
এটা আবার কী ধরনের বাজে কথা? আমি আমার ইচ্ছামতো গাড়ি নিয়ে আসব। তাতে যদি অন্তত নির্বোধদের বিরক্ত করতে পারি। আমি আমার এনজোতে লাফিয়ে পড়লাম, গাড়ির গতি বাড়ালাম এবং অনুশীলন মাঠের দরজার ঠিক সামনে পার্ক করলাম। ব্যাপারটা নিয়ে বেশ হইচই হলো। পত্রিকাগুলো লিখল যে আমার গাড়ির দাম আলমেরিয়া খেলোয়াড়দের মোট মাসিক বেতনের সমান।
কিন্তু তাতে আমার বয়েই গেল। মিডিয়ার বাজে কথা এখানে তুচ্ছ প্রসঙ্গ। তখন আমার মাথায় ঘুরছে ‘আমার কথা আমিই বলব।’
ঠিক করেছিলাম আমি আমার পক্ষে লড়াই শুরু করব। তবে আমি আমার প্রস্তুতিতে অবহেলা করতে পারিনি, তাই আমি মিনোর সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বললাম। আমরা সব সময় আমাদের কৌশল একসঙ্গে পরিকল্পনা করি, বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ এবং নোংরা দুটোই। আর আমি আমার বন্ধুদের ফোন করলাম।
আমি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে জিনিসগুলো দেখতে চেয়েছিলাম। সব রকমের পরামর্শ পেয়েছিলামও। রোজেনগার্ডের ছেলেরা নেমে এসে জায়গাটা ভেঙে দিতে চেয়েছিল। এটা তাদের জন্য ভালো ছিল, কিন্তু পরিস্থিতি অনুসারে সঠিক কৌশল বলে মনে হচ্ছিল না। হেলেনার সঙ্গেও আলোচনা করলাম। সে অন্য এক জগতের মানুষ। শান্ত। আবার কঠোরও হতে পারে। কিন্তু এবার সে কিছু উৎসাহ দিল। বলল, ‘যা-ই হোক, তুমি একজন ভালো বাবা হয়েছ। যখন তোমার পছন্দের দল পাওনি, তুমি বাড়িতেই একটি দল বানাও।’
আমি বাচ্চাদের সঙ্গে অনেক ফুটবল খেললাম। নিশ্চিত করার চেষ্টা করলাম যে সবাই ঠিক আছে। ভিডিও গেমস নিয়েও বসে থাকতাম। এটা আমার এক ধরনের আসক্তি। আমি সম্পূর্ণভাবে এর মধ্যে ডুবে যাই।
তবে আমি শুধু সময় নষ্ট করতে পারিনি। স্পেনের সেই সপ্তাহগুলো পরিবারের জন্য উৎসর্গ করার চেষ্টা করলাম, বাগানে সময় দিলাম। এমনকি মাঝে মাঝে করোনা (বিয়ার) পান করলাম। এটা ছিল ভালো দিক।
কিন্তু রাতে যখন আমি জেগে শুয়ে থাকতাম বা ট্রেনিং সেশনে যখন গার্দিওলাকে দেখতাম, আমার অন্ধকার দিক জেগে উঠত। রাগ আমার মাথায় স্পন্দিত হতো। আমি আমার মুষ্টি বন্ধ করতাম, প্রতিশোধের পরিকল্পনা করতাম। একপর্যায়ে বুঝতে পারলাম, এখন আর ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এখন সময় হয়েছে আবার আমার পুরোনো নিজেকে ফিরে পাওয়ার।
পাঠকের জন্য তথ্যইব্রাহিমোভিচ বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছিলেন ৫ বছরের চুক্তিতে। কিন্তু এক বছর পরই তাঁকে ধারে মিলানে চলে যেতে হয়েছিল। পরে ইতালির ক্লাবটিতেই স্থায়ী হন। শুধু গার্দিওলার সঙ্গেই নন, বিভিন্ন সময়ে বার্সেলোনার দর্শন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন ইব্রা। তাঁর মতে বার্সেলোনা বার্সেলোনা একটা ক্লাসরুম, এখানে কোচের সামনে খেলোয়াড়েরা যেন স্কুলের ছাত্র। আত্মজীবনীতে গার্দিওলার সঙ্গে ইব্রার ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্বের অন্যতম সূত্রপাত মেসির পজিশন বদলানোর ঘটনা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আর্জেন্টাইন মহাতারকা সম্পর্কে সব সময়ই ইতিবাচক ইব্রা। এখনো মেসির সঙ্গে যে কারও তুলনায় বা আচরণবিষয়ক আলোচনায় আর্জেন্টাইন অধিনায়কের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ইব্রা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ য ম প য়নস ল গ আম র ম থ য় জ জ ঞ স কর আম র প র আম র দ ক পর স থ ত ল র জন য প রস ত ত করছ ল ম র সমস য সব সময় আম র ব এক ব র পর য য় র পর স আম র চ ভ বল ম ত ই আম এই ল ক র স মন গ ল কর আম র ক আম র স ইন ট র অন য ক সব ন য় হয় ছ ল আম দ র ধরন র দরক র র একট করল ম বলল ম ত রপর পছন দ কখন ই ফ টবল র ঘটন করত ম স করল
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুর থেকে সিয়াটল, বন্ধুত্ব এখনো অটুট
ছবি: লেখকের সৌজন্যে