ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল–সংলগ্ন পুকুর থেকে শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর ভাসমান মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় এজাহার জমা দিয়েছেন তাঁর বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলওয়ার। আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে তিনি বাদী হয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় এ এজাহার জমা দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান। বিকেল সোয়া চারটার দিকে বলেন, ওই এজাহার মামলা হিসেবে রুজুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুনহত্যাকাণ্ডের শিকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ, দাবি স্বজনদের১৮ জুলাই ২০২৫

সাজিদ আবদুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের সামনের পুকুর থেকে তাঁর ভাসমান লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় তাঁর পরিবার ও সহপাঠীরা অভিযোগ করেন, সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল।

এদিকে সাজিদ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আজ বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি প্রশাসন ভবন চত্বরে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। আজ বেলা ১১টার দিকে আল–কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে মিছিলটি বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘বিচার বিচার, বিচার চাই; সাজিদ হত্যার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘খুন হয়েছে আমার ভাই, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দড়ি লাগলে দড়ি নে, খুনিদের ফাঁসি দে’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

আরও পড়ুনইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়২০ ঘণ্টা আগে

মিছিলে অংশ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, হত্যাকারীদের প্রশাসন এখনো চিহ্নিত করতে পারেনি। প্রশাসন যদি সাজিদ হত্যার বিচার করতে না পারে, তাহলে এই দায়িত্বে থাকার তাঁদের কোনো নৈতিক অধিকার থাকে না। এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করতে হবে। সেই সঙ্গে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মাধ্যমে তদন্ত করে অপরাধীদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

অবস্থান কর্মসূচির একপর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘সাজিদের হত্যাকাণ্ডের অবশ্যই বিচার হবে। যেহেতু এটি হত্যাকাণ্ড, সেহেতু বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাদের চাহিদা মোতাবেক যাবতীয় সহযোগিতা করা হবে। জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আর এই দাবি নিয়ে তোমাদের (শিক্ষার্থীদের) নতুন করে আসা লাগবে না। প্রশাসনই তোমাদের টাইম টু টাইম জানাবে, আমরা কী করছি।’

আরও পড়ুনইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে ভাসছিল শিক্ষার্থীর মরদেহ১৭ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স জ দ হত য হত য ক ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নাইরোবিতে উইকিপিডিয়ার সম্মেলনে যাচ্ছেন ৫ বাংলাদেশি তরুণ

এ বছর উকিপিডিয়ানদের নিয়ে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে উইকিম্যানিয়া ২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ও পূর্ণ স্কলারশিপে এ অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন পাঁচ বাংলাদেশি উইকিপিডিয়ান।

প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে নির্বাচিত উইকিমিডিয়ানদের নিয়ে নিজস্ব খরচে এ সম্মেলনের আয়োজন করে উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন।

আগামী ৬ থেকে ৯ আগস্ট কেনিয়ার নাইরোবিতে বার্ষিক সম্মেলন ও উইকিম্যানিয়ার ২০তম বার্ষিকী অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে একটি ভার্চুয়াল সংস্করণও থাকবে। এ সম্মেলনে যোগ দিতে পাঁচ বাংলাদেশি উইকিপিডিয়ান ইতোমধ্যে কেনিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।

পাঁচ বাংলাদেশি উইকিপিডিয়ান হলেন, বগুড়ার মাসুম আল হাসান রকি, ময়মনসিংহের দোলন প্রভা, বরগুনার মুহাম্মদ ইয়াহিয়া, চাঁদপুরের দেলোয়ার হোসাইন ও আরব আমিরাত প্রবাসী বাংলাদেশি মো. জিল্লুর রহমান।

গত বছর অন্তত ১৪০ দেশের ২ হাজারের বেশি উইকিমিডিয়ান অংশ নিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবার সেই সংখ্যা আরো বাড়বে। সম্মেলনের কনফারেন্স টিম উইকিপিডিয়ার নতুন প্রযুক্তি, ফিচার এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরছে। অংশগ্রহণকারীরাও মতামত দিচ্ছেন সরাসরি।

এবারের সম্মেলনে বাংলাভাষী উইকিমিডিয়ানদের উদ্যোগ বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। তুলে ধরা হচ্ছে ‘বাংলা উইকিমৈত্রী’ ও ‘উইকি ভালোবাসে রমজান’ প্রকল্পের সাফল্য ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা। এসব প্রকল্পে সম্মিলিতভাবে বাংলা উইকিপিডিয়াকে আরো তথ্যসমৃদ্ধ করা হয়েছে, তুলে ধরা হয়েছে রমজান মাসের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ভবিষ্যতে আরো বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করে, এই উদ্যোগগুলোকে আরও বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক সম্প্রদায় উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের আঞ্চলিক কার্যক্রমের তথ্যচিত্রও উপস্থাপনের কথা রয়েছে।

উইকিপিডিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিশ্বকোষ, যেখানে ৩ শতাধিক ভাষায় সাড়ে ৬ কোটিরও বেশি নিবন্ধ। আর এই বিশাল ভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন লাখো স্বেচ্ছাসেবী। বাংলাদেশের উইকিপিডিয়ানরাও দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস আর ঐতিহ্য তুলে ধরছেন বিশ্ব দরবারে। এতে দেশের সম্মান যেমন বাড়ছে, তেমনি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহও বাড়ছে।

এবার উইকিম্যানিয়া ২০২৫-এ বৈচিত্র্য, নারীর অংশগ্রহণ ও ভাষাভিত্তিক অবদানকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন শুরু করেছে ‘নোলেজ ইজ হিউম্যান, নোলেজ ইজ হার’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন, যেখানে বিশ্বজুড়ে নারীর অবদান তুলে ধরা হচ্ছে। বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছেন উন্নয়নশীল দেশের নারী উইকিপিডিয়ানরা। শুধু সম্পাদক নয়, ইভেন্ট, ওয়ার্কশপ বা ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে অবদান রাখা সবাই এবার স্বীকৃতি পাচ্ছেন।

নাইরোবিতে উইকিম্যানিয়া ২০২৫-এর মূল প্রতিপাদ্য ‘বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন’। এখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও নারীবিষয়ক তথ্যের ঘাটতি পূরণে আলোচনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন।

আরেকটি তথ্য হলো উইকিপিডিয়া এখন শুধু তথ্যভাণ্ডার নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের প্রধান তথ্যসূত্রও। তাই সবার সহযোগিতায় উইকিপিডিয়াকে আরও নির্ভরযোগ্য ও বৈচিত্র্যময় করতে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এ বিষয়ে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশের সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রযুক্তিবিদ শাবাব মুস্তাফা জানান, উইকিম্যানিয়া হচ্ছে উইকিপিডিয়ান ও উইকিমিডিয়ানদের নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় একটি সম্মেলন। এতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উইকিপিডিয়ানরা বিশ্বকোষে তাদের অবদান বিষয়ে নানা অভিজ্ঞতা ও আইডিয়া বিনিময় করেন।

তিনি জানান, প্রায় প্রতি বছরই এ সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে উইকিপিডিয়ানরা অংশ নিয়ে থাকেন। আমরা আশা করছি বাংলাদেশি উইকিপিডিয়ানরা সেখান থেকে হৃদ্য হয়ে বাংলা উইকিপিডিয়া সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবেন।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ