গাজায় হামলা বন্ধে ইসরায়েল সরকারকে চাপ দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের ছয় শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এর মধ্যে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাবেক প্রধানরাও রয়েছেন। ট্রাম্পের উদ্দেশে লেখা এক খোলাচিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে হামাসকে ইসরায়েলের জন্য হুমকি বলে মনে করেন না তাঁরা।

আজ সোমবার ওই চিঠি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলিদের বড় অংশের কাছে আপনার (ট্রাম্প) বিশ্বাসযোগ্যতা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকারকে সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য আপনার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যুদ্ধ বন্ধ করুন, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুন, দুর্দশা থামান।’

আরও পড়ুনত্রাণ নিতে গিয়েছিল শিশুটি, চোখে গুলি ছুড়ল ইসরায়েলি সেনারা ১১ ঘণ্টা আগে

এমন সময় ট্রাম্পের উদ্দেশে এই চিঠি লেখা হলো, যখন গাজায় সামরিক অভিযান জোরদার করার কথা বলেছেন নেতানিয়াহু। সংঘাত বন্ধে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েল সরকারের আলোচনাও থমকে আছে। এরই মধ্যে প্রতিদিন গাজায় ইসরায়েলের হামলায় বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর গাজায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৬১ হাজার ফিলিস্তিনি।

এ ছাড়া খাবারের তীব্র সংকটে গাজায় অনাহারে–অর্ধাহরে থাকতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। রোববারে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে উপত্যকাটির আরও ছয়জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে গাজায় অনাহারে ১৭৫ জনের মৃত্যু হলো। তাঁদের মধ্যে শিশুই ৯৩টি।

আরও পড়ুনকঙ্কালসার ইসরায়েলি জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করল হামাস০৩ আগস্ট ২০২৫

গাজায় ত্রাণ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ইসরায়েলি সংস্থা সিওজিএটি জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ১ হাজার ২০০ ট্রাকে করে ২৩ হাজার টনের বেশি মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া উড়োজাহাজে করে ত্রাণ ফেলা হচ্ছে। তবে গাজার ২২ লাখ মানুষের অনাহারে থাকা রুখতে স্থলপথে ত্রাণ সরবরাহ আরও বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা।

আরও পড়ুনখেলাধুলায় ‘চ্যাম্পিয়ন’ ফিলিস্তিনি কিশোরকে মরতে হলো খাবারের অভাবে০৩ আগস্ট ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র অন হ র

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী