রূপলাল-প্রদীপকে মারধরে জড়িত অনেকে চিহ্নিত, গ্রেপ্তার নেই
Published: 19th, August 2025 GMT
রংপুরের তারাগঞ্জে দুই ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে অনেকে চিহ্নিত হলেও পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ এবং নিহত রূপলাল দাস ও প্রদীপ লালের পরিবারের সদস্যরা অপরাধীদের শনাক্ত করেছেন। এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া তিনটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে মারধরে জড়িত অন্তত সাতজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বটতলা এলাকায় রূপলাল দাস ও প্রদীপ লালকে আটকের সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আটকের পর এ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। প্রদীপ তাঁর ভ্যানের আসনের কাছে ও রূপলাল ভ্যানের পেছনে বসা ছিলেন। একপর্যায়ে এক যুবক ক্ষিপ্ত হয়ে ‘পিটাও রুবেল ভাই, পিটাও’ বলে চিৎকার করেন। এরপর প্রদীপ লালের পেছন থেকে সাদা শার্ট পরিহিত এক যুবক তাঁর কলার টেনে ধরে ঘুষি মারেন। তিনি বালাপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে খায়রুল ইসলাম।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য খায়রুল ইসলামের বাড়িতে গেলে দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। তাঁর স্ত্রী আরজু বেগম বাড়ির পাশে গাছতলায় বসেছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেই দিন আমার স্বামী দীঘলটারীর কৃষিকাজ করছে। বাড়ি আসার সময় গোলযোগ শুনি গেছলো। সে সামনে দাঁড়াই ছিল লোকজগুলাক বাঁচপার জন্যে। তাতে ভিডিওর ছবি উঠছে।’
আরও পড়ুনভিডিওতে দেখা যাচ্ছে খুনিদের, তবু ধরছে না পুলিশ—ক্ষোভ রূপলালের স্ত্রীর১৫ আগস্ট ২০২৫ভিডিওতে দেখা যায়, ভ্যানের ওপর উঠে আবার সেখান থেকে নেমে প্রদীপ লালের সামনে আসেন আকাশি রঙের গেঞ্জি পরিহিত এক যুবক। তিনি প্রদীপকে আঘাত করতে থাকেন। তিনি বুড়িরহাট পাইকারপাড়া গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে রুবেল পাইকার।
কথা বলার জন্য রুবেল পাইকারের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির সামনে বসে আছেন একদল লোক। এই প্রতিবেদককে দেখে সটকে পড়েন সবাই। বেশ কয়েকবার ডাকার পর রুবেলের মা আনোয়ারা বেগম পাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘একজন লোক ফোন দিয়া আমার ছেলেক ডাকে নিছে। ওয় তো লোক দুইটাক বাঁচপার জন্য ভ্যানোত উঠি চিল্লাচিল্লি করছে। তাক তো ভিডিওতে দেখা যাওছে।’
৯ আগস্ট রাত নয়টার দিকে তারাগঞ্জের সায়ার ইউনিয়নের বটতলা বুড়িরহাট এলাকায় পিটুনিতে নিহত হন উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামের রূপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া গ্রামের প্রদীপ লাল (৩৫)। সম্পর্কে তাঁরা আত্মীয়। রূপলাল স্থানীয় বাজারে জুতা সেলাই করতেন আর প্রদীপ লাল ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।রুবেল পাইকারের মারধর শেষ না হতেই দৌড়ে গিয়ে প্রদীপের মাথা ও কানে ঘুষি মারতে থাকেন সাদা প্রিন্টের শার্ট পরা একই গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে সোহাগ হোসেন। কথা বলার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও সোহাগ হোসেনকেও বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর বাবা আশরাফুলও বাড়িতে ছিলেন না। তবে সোহাগের মা লাভলি বেগম বলেন, ‘গ্রামের সবাই ভয়ে পালাইছে। রংপুর থাকি আমার ছেলে বাড়ি আসার পথে ওই লোক দুইটাক মাইরডাং করা দেখছে। ওই সময় ছবি ভিডিও উঠছে, কিন্তু সে তো কাকও মারে নাই।’
ওই ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ভ্যানের ওপর পড়ে যাওয়া রূপলালকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন সবুজ রঙের গেঞ্জি পরা বালাপুর গ্রামের ছলি মামুদের ছেলে নজরুল ইসলাম। নজরুলের স্ত্রীর ওজিদা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারে নাই। আমার স্বামী দেখপার গেইছে, তাতে ভিডিওত উঠছে। সবাই ভয়ে পালাইছে। ওই জন্যে ওয়ও বাড়িত নাই।’
এ ছাড়া ভিডিওতে স্থানীয় বাসিন্দা এবাদত হোসেন, আশরাফুল ইসলাম, মেহেদী হাসানকে মারধরে অংশ নিতে দেখা যায়।
৯ আগস্ট রাত নয়টার দিকে তারাগঞ্জের সায়ার ইউনিয়নের বটতলা বুড়িরহাট এলাকায় পিটুনিতে নিহত হন উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামের রূপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া গ্রামের প্রদীপ লাল (৩৫)। সম্পর্কে তাঁরা আত্মীয়। রূপলাল স্থানীয় বাজারে জুতা সেলাই করতেন আর প্রদীপ লাল ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
রংপুরের তারাগঞ্জে গণপিটুনির আগে হাত জোড় করে এভাবে বাঁচার আকুতি জানান প্রদীপ লাল (বাঁয়ে)। নিজের পরিচয় বলছিলেন রূপলাল (ডানে).উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পল ল দ স ল ইসল ম র জন য ম রধর করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু
৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) শাখা ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা ও ময়মনসিংহের পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এ বিশেষ যাতায়াত সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে শাখা ছাত্রদলের কর্মী নাফিস ইকবাল পিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেসবুক গ্রুপে এ তথ্য জানিয়ে পোস্ট দেন। একইসঙ্গে শাখা সভাপতি সাগর নাইম ও সাধারণ সম্পাদক সাজিদ ইসলাম দীপুও তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে পরীক্ষার্থীদের এ সুবিধা গ্রহণের আহ্বান জানান।
আরো পড়ুন:
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন
বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান অর্জন ও বিতরণের জায়গা: ইউজিসি চেয়ারম্যান
ছাত্রদল জানিয়েছে, ক্যাম্পাস থেকে দুটি বাস ছাড়বে। একটি ঢাকা রুটে এবং অপরটি ময়মনসিংহ রুটে যাবে। প্রতিটি বাসে ৫০ জন করে মোট ১০০ জন শিক্ষার্থী এই ফ্রি সার্ভিসের আওতায় যাতায়াত করতে পারবেন। এজন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই আগাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গুগল ফর্মের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ এই সার্ভিসের সুবিধা নিতে পারবেন না।
শিক্ষার্থীদের জন্য এ উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী পোস্ট দিয়ে ছাত্রদলের এ পদক্ষেপকে ‘শিক্ষার্থীবান্ধব ও সময়োপযোগী উদ্যোগ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
শাখা সভাপতি সাগর নাইম তার পোস্টে বলেন, “প্রতি বছর বিসিএসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাফল্যের আলো ছড়িয়ে দেন। আমরা চাই এ সুনাম আরো দূরে ছড়িয়ে পড়ুক, আরো উজ্জ্বল হোক। এ ধারাবাহিক সাফল্যের পথে আপনাদের পাশে থাকতে, ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে মাভাবিপ্রবি ছাত্রদল ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বিশেষ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে।”
এ বিষয়ে শাখা সাধারণ সম্পাদক সাজিদ ইসলাম দীপু বলেন, “জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময়ই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে থাকে। গত বিসিএসে আমাদের বড় ভাই বিসিএস প্রশাসনে প্রথম হয়েছেন। এটি শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, সারা দেশের জন্যই গর্বের বিষয়। সেই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আমরা এবার পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করেছি।”
তিনি বলেন, “বিশেষ করে অনেক নারী শিক্ষার্থী আছেন, যারা ক্যাম্পাস থেকে পরীক্ষাকেন্দ্র অনেক দূরে হওয়ায় অংশ নিতে পারেন না। আবার অনেকে যানবাহন না পেয়ে দেরিতে কেন্দ্রে পৌঁছান। আমরা চাইনি কেউ যেন যাতায়াত সমস্যার কারণে বিসিএস পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়েন। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ভাইয়ের সহায়তায় আমরা এ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছি।”
ঢাকা/আবিদ/মেহেদী