দুই টাকায় পেটপুরে খাওয়া, কয়েক তরুণের অবিশ্বাস্য উদ্যোগ
Published: 28th, August 2025 GMT
সাজানো চেয়ার-টেবিল। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। যত্ন নিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে খাবার। খাবার তালিকায় রয়েছে ভাত মাছ মাংস ডাল ইত্যাদি। প্রথম দেখায় যে কেউ ভাবতে পারেন- কোনো অনুষ্ঠানে মেহমানদারি করা হচ্ছে। কিন্তু তা নয়। আবার এটা ঠিক হোটেলও নয়; অন্তত খাবার মূল্য বিবেচনায়। খাবার খাচ্ছেন একদল অসহায়, দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষ। যাদের মধ্যে রয়েছে শিশু, রিকশাচালক, অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তারা প্রত্যেকেই দুই টাকার বিনিময়ে পাচ্ছেন এই খাবার। আর এই আয়োজনের নেপথ্যে রয়েছেন রাজবাড়ীর একদল যুবক, যারা অধিকাংশই শিক্ষার্থী।
সপ্তাহে যে কোনো দুইদিন এই হোটেলে নামমাত্র দুই টাকা দিয়ে অসহায় ও শ্রমজীবী মানুষ পেটপুরে খেতে পারেন। বাড়িতে রান্না করা সাদা ভাত, সাথে গরু ও মুরগির মাংস, ডাল বা মুড়িঘন্ট, কখনও রুটি, আবার কোনো দিন ইলিশ খিচুরি- এই আয়োজন করা হয় ৬০ থেকে ৭০ জন মানুষের জন্য। আয়োজকরা তাদের বলেন ‘অতিথি’। এই অতিথিদের জন্য রয়েছে নিমন্ত্রণপত্র। অর্থাৎ তারা অসহায় মানুষ দেখে নিমন্ত্রণপত্র দেন এবং দুই টাকার হোটেলে নিমন্ত্রণ জানান।
রাজবাড়ী শহরের রেলস্টেশনের পাশে ফুলতলা ও রাজবাড়ী পৌর ইংলিশ মার্কেটের সামনেই এই হোটেলের অবস্থান। তবে সেটি স্থায়ী কোনো আবাসন নয়। অস্থায়ীভাবে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে সেখানেই খাবারের আয়োজন করা হয়।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সকালে গিয়ে দেখা যায়, সকালে খাবার ছিল- খাশির পায়ের নেহারি, পরোটা, ড্রাগন ফল, মাল্টা, কলা আর পেয়ারা। কিছু অসহায় ও শ্রমজীবী মানুষ খাবার খাচ্ছেন। তাদের পরিবেশন করছেন কয়েকজন যুবক।
খেতে আসা দিনমজুর মোবারক বলেন, ‘‘দুই টাকা দিয়ে আমরা চেয়ার-টেবিলে বসে খাচ্ছি। ফল, পরোটা, খাসির পায়া খাচ্ছি, যা আমরা কখনো কিনে খেতে পারি না। মনে হচ্ছে আমরা কোনো বড় হোটেলে বসে খাচ্ছি।’’
আলী হোসেন নামে আরেক দিনমজুর বলেন, ‘‘আমি রাজশাহী থেকে রাজবাড়ী এসেছি ভ্রাম্যমাণ কাজের উদ্দেশ্যে। সারাদিন কাজ না পেয়ে স্টেশনেই থাকি। তখন দুই টাকার হোটেলের খবর পাই। এখানে এসে দেখি দুই টাকায় কত রকমের দামি খাবার! পেট ভরে খেতে পেরেছি।’’
উদ্যোক্তাদের একজন শিক্ষার্থী মাহিন শিকদার জানান, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেক মানুষ আছে যারা ভালো-মন্দ খাওয়া দূরের কথা, অনেক সময় না খেয়ে তাদের দিন কাটে। ওসব মানুষের কথা চিন্তা করে, তাদের ভালোবেসে আমাদের এই উদ্যোগ।
খাবার রান্নার বিষয়ে মাহিন বলেন, ‘‘সাগর ভাইয়ের মা আমাদের কাজে খুশি হয়ে সবার জন্য রান্না করে দেন। আন্টির হাতে রান্না করা খাবার সবাইকে খাওয়ানো হয়।’’
আরেক উদ্যোক্তা মনিরুল হক সাগর বলেন, ‘‘আমাদের হোটেলে নিম্নমানের কোনো খাবার দেই না। সম্পূর্ণ বাসায় রান্না করা এবং আমরা যা খাই সেটা এখানে দেওয়া হয়। সপ্তাহে দুদিন আমরা হোটলের কার্যক্রম চালাই এবং আমরা নিজেরাই মেহমানদারিত্ব করি। যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অসহায় ও দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের জন্য একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা।’’
ঢাকা/রবিউল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য অসহ য়
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ব্যানার, তদন্তের দাবিতে প্রক্টর অফিসে একদল শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলাভবনের ‘শ্যাডোতে’ নিষিদ্ধঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটি ব্যানারের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেন। তবে শেষ পর্যন্ত মিছিল কর্মসূচি স্থগিত করে ৯-১০ জন শিক্ষার্থীর একটি দল সহকারী প্রক্টরদের সঙ্গে আলোচনা করে।
আলোচনা শেষে রাত ৯টার দিকে প্রক্টর অফিসের সামনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ব্যানার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক। তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) আজিজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের আনাগোনা আমাদের বারবার ব্যথিত করছে। প্রশাসনের কাছে যখনই জানতে চাই, তারা বলে, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে আমরা আজও জানতে পারিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী শেখ হাসিনার পক্ষে মিছিল করেছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। (২০২৪ সালের) ১৫ জুলাই হামলায় জড়িত ছাত্রলীগের বিচার এখনো পর্যন্ত আমরা দেখতে পাইনি।’
আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা দেখতে পাই আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা রাতের বেলা কলাভবনে বসে বাদাম খান। তাঁদের কাজ কি বাদাম খাওয়া? নাকি পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা? সেই প্রশ্ন আজকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে রেখেছি।’
এই ছাত্রনেতা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে এবং পরবর্তী সময়ে সেই প্রতিবেদন তাঁদের কাছে পেশ করা হবে।