সাদা শাপলার বিল ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা
Published: 1st, September 2025 GMT
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খিয়ারমামুদপুর গ্রাম এখন প্রকৃতিপ্রেমীদের আগ্রহের এক ঠিকানা। বর্ষার মৌসুমে এখানে প্রায় ৬০০ বিঘা আয়তনের বিশাল বিলের বুকজুড়ে ফুঁটেছে হাজারো সাদা শাপলা। বিলের বুক চিরে এগিয়ে চলা নৌকায় বসে দর্শনার্থীরা শান্ত জলে মাথা উঁচু করে শোভা ছড়ানো শাপলার ছবি তোলার পাশাপাশি ধারণ করেন ভিডিও।
বিশাল এই বিলের মাঝখানে রয়েছে ছোট দ্বীপসদৃশ ভূমি। সেখানে স্থানীয় জেলেরা টং ঘর বানিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি মাছ সংরক্ষণ করেন। বেড়াতে আসা মানুষরা সেখানে বসে আড্ডা দেন, গান করেন, প্রকৃতির মোহে হারিয়ে যান।
আরো পড়ুন:
বিজয় দিবস ঘিরে গোলাপ গ্রামে ব্যস্ততা
লোহাগড়ায় কিছুটা কমেছে সবজির দাম
শুধু শাপলাই নয়, এ বিলে জন্মে শালুকও। বিলটিতে পাওয়া যায় দেশি প্রজাতির কই, মাগুর, টাকি, পুঁটিসহ নানা ধরনের মাছ। প্রতিদিন ভোরে স্থানীয় জেলেরা বিল থেকে মাছ ধরে পাড়ে বসেই বিক্রি করেন। ফলে শাপলা দেখতে আসা মানুষজন সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি তাজা মাছও কিনে বাড়ি ফেরেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বিলের দুইটি অংশ রয়েছে, পশ্চিমাংশের নাম আমরুল বিল আর পূর্বাংশের নাম কাললা বিল। বর্ষা শেষে পানি সরে গেলে কৃষকেরা বিলের জমিতে আমন চাষ করেন। আমন কাটা শেষ হলে পশ্চিম পাশের জমিতে জন্ম নেয় ‘আমরুল’ নামক আগাছা। পূর্ব পাশে জন্মায় ‘কাললা’ বা ‘হলদে মুথা’। এ কারণেই বিলের অংশ দুইটির এমন নামকরণ করা হয়েছে। এই বিলে পর্যটকদের ঘোরানোর জন্য স্থানীয়রা নৌকা চালান। এতে অনেক পরিবারের অতিরিক্ত আয়ের পথও খুলে গেছে।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আতিকুর রহমান বলেন, “প্রতিদিন ভোর থেকে স্কুলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এবং বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে সে নৌকা চালায়। ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে প্রতিটি ট্রিপে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া পায়। এতে পড়ালেখার ক্ষতি না করে পরিবারকে বাড়তি অর্থ আয় করতে সাহায্য করছে আতিকুর।
জয়পুরহাট থেকে আসা দর্শনার্থী জনি শেখ বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, ছোটখাটো একটি বিল হবে। এখানে এসে মনে হলো, অন্য এক জগতে প্রবেশ করেছি। বিলের শান্ত জলে সাদা শাপলার রাজত্ব দেখে মুগ্ধ হয়েছি। বিলের মাঝখানে ছোটা একটি দ্বীপসদৃশ রয়েছে। এমন দৃশ্য জীবনে প্রথম দেখলাম।”
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের অনেকেই পর্যটনের জন্য সিলেট, কক্সবাজার বা টাঙ্গুয়ার হাওরে যায়। অথচ আমাদের গ্রামেই এমন অপার সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। আমি চাই, সরকার এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলুক। ফলে স্থানীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।”
স্থানীয় আব্দুল খালেক বলেন, “বর্ষার মাঝামাঝি থেকে শাপলার মৌসুম পর্যন্ত প্রতিদিনই লোকজনের ভিড় জমে এ বিলে। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুদের নিয়ে, আবার কেউ একা প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসেন। নৌকা ভ্রমণ, ছবি তোলা, মাছ কেনা আর আড্ডা সব মিলিয়ে শাপলার বিল এখন বিরামপুরের অন্যতম প্রাণবন্ত দর্শনীয় স্থান।”
বিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, “খিয়ারমামুদপুরের শাপলার বিল সত্যিই সম্ভাবনাময়। বিল দেখতে আসা পর্যটকরা যাতে প্রকৃতির ক্ষতি না করেন সে বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। প্রয়োজনে আমরা জনসচেতনতা কার্যক্রম চালাব।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ পল ফ ল পর যটক শ পল র প রক ত
এছাড়াও পড়ুন:
এদের কোনো দিন শিক্ষা হবে না
আগের পর্বআরও পড়ুন‘বাংলাদেশের কি সুপারফোরে ওঠার চান্স আছে?’১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫