ডাকসু: ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক উপ-সম্পাদক থেকে বামজোটে হেমা
Published: 1st, September 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ থেকে সদস্য পদে লড়ছেন হেমা চাকমা। এর আগে তিনি ছিলেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের সাংস্কৃতিক উপ-সম্পাদক।
সম্প্রতি তিনি ডাকসুতে ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেন। যদিও সমালোচনার মুখে পড়ে তিনি পোস্টটি পরে সরিয়ে নেন।
আরো পড়ুন:
নির্ধারিত সময়েই ডাকসু নির্বাচন হতে হবে: আবিদ
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যা বলল ঢাবি কর্তৃপক্ষ
এদিকে, তার প্রোফাইল ঘুরে আরেকটি পোস্টে দেখা যায়, তিনি এক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বলছেন, “আমাকে ভোট না দিলে আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হেরে যাবে। এই কারণে যে, আমি সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম।”
কিন্তু তার ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে পাওয়া যায় পুরো ভিন্ন চিত্র। গত বছর ১৫ জুলাই যখন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা মিলে সন্ত্রাসী কায়দায় ঢাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে, সেই রাতে তিনি তার ফেসবুক প্রোফাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরাঘুরির অবস্থার একটি ছবি আপলোড করেন। সেই ছবিতে তাকে তার দুই বান্ধবীর সঙ্গে খুবই হাসিখুশি ভঙ্গিতে দেখা গেছে।
গত বছর জুলাইয়ের ১৫ তারিখে হেমা চাকমার এমন পোস্ট ও ছাত্রলীগের উপ-সাংস্কৃতিক পদে থাকায় তাকে নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে নেট দুনিয়ায়।
হেমা চাকমাকে নিয়ে মোহাম্মদ শাহ নামে একজন লিখেছেন, “বাম মানেই ছাত্রলীগ পুনর্বাসন কেন্দ্র।” কাওসার আহমেদ সুজন নামে আরেকজন লিখেছেন, “ছাত্রলীগ হেমা চাকমাকে আইনের আওতায় আনা হোক।”
বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর হেমা চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি জানান, পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ডেকে প্রেস ব্রিফিং করে জানাবেন।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।
সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।