ছাত্রীদের ‘যৌনকর্মী’ বলা ছাত্রদল নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার
Published: 4th, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জুলাই ৩৬ হলের শিক্ষার্থীদের যৌনকর্মী বলে মন্তব্য করা ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান মিলনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে শাখা ছাত্রদল।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাফিউল ইসলাম জীবনের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় অষ্টম শ্রেণির ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবে
ছাত্রদলের ভোট চাওয়া ঢাকা কলেজের ছাত্র বললেন তিনি ‘রোকেয়া হলের’
এ ঘটনায় সাংগঠনিক পদ স্থগিত করে সত্যতা যাচাই করার জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শাখা ছাত্রদল। তদন্ত কমিটির সদস্য হলেন, শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই ৩৬ হল-এর প্রভোস্ট থেকে ৯১ জন শিক্ষার্থীকে অযাচিতভাবে তলব করার প্রতিবাদে ছাত্রদলের সহসভাপতি ও শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈমা তুহিনার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাসে শাহ মখ্দুম হলের সহসভাপতি এ আর মিলন খান কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দের পক্ষ থেকে এ আর মিলন খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সন্তোষজনক কোনো জবাব না দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে উক্ত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য তিনিই ইচ্ছাকৃতভাবে করেছেন। ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এ আর মিলন খানকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ হল সহসভাপতির পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার ঘোষণা করছে। একইসঙ্গে সংগঠনের সব নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হলো, তার সাথে কোনোপ্রকার সাংগঠনিক কোনো যোগাযোগ না রাখার জন্য।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন ও শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
বহিষ্কারের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “আমরা সবসময় নারীদের অধিকার আদায়ে ও তাদের সম্মানে বদ্ধপরিকর। নারীদের বুলিংয়ের বিষয়ে ছাত্রদল জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার কারণে আমরা প্রথমে মিলনের পদ সাময়িক স্থগিত করি এবং দলের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি।”
তিনি আরো বলেন, “তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি অজুহাত দেখান এবং ফোন কেটে দেয়। এতে প্রমাণিত হয় সে দোষী। প্রসাশনের কাছে আমরা আবেদন করেছি, যাতে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ফেসবুকে বট বাহিনী যেভাবে নারীদের বুলিং করে, তারা যেন এ শাস্তির মাধ্যমে কড়া বার্তা পায়।”
এর আগে, জুলাই ৩৬ আবাসিক হলে রাত ১১টার পর প্রবেশ করায় ৯১ ছাত্রীকে হল প্রাধ্যক্ষের অফিসে ডেকে পাঠিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় হল প্রশাসন। এ ঘটনায় তৈরীকৃত ফটোকার্ডের নিচে ‘এগুলো ছাত্রী নয়, এগুলো বিনা পারিশ্রমিক যৌনকর্মী’ বলে মন্তব্য করেন আনিসুর রহমান মিলন।
গত সোমবার রাত ১১টার পরে হলে ফেরায় জুলাই ৩৬ হলের ৯১ ছাত্রীকে প্রাধ্যক্ষের অফিসে তলব করে নোটিশ দেয় হল কর্তৃপক্ষ। ওই বিজ্ঞপ্তির একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরদিন মঙ্গলবার সমালোচনার মুখে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে নোটিশটি প্রত্যাহার করে নেয় হল প্রশাসন।
ঢাকা/ফাহিম/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ছ ত রদল র জ ল ই ৩৬ র জন য গঠন ক সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার
স্বাধীনতার পর যারাই দেশ চালিয়েছে, তারা সবাই হিন্দুদের ব্যবহার করে শুধু নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার।
আজ শুক্রবার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাধীনতা চত্বরে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু কমিটির উদ্যোগে হিন্দু সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়ন ও ডুমুরিয়া-ফুলতলাসহ দেশের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে এখন প্রয়োজন ইসলামি সরকার। যাঁরা দাঁড়িপাল্লার জোয়ার দেখে ভয়-হুমকি দিচ্ছে, তাদের হুমকিতে হিন্দুরা আর ভয় পাবে না। হিন্দুদের বাধা দিলে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫৪ বছর যারা দেশ চালিয়েছে তারা সন্ত্রাস, দখলদারি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে হিন্দুদের শোষণ করেছে। জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের নির্মূল করা হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তন আনতে চাই। লাঙলের শাসন দেখেছি, ধানের শীষের শাসন দেখেছি, নৌকার শাসনও দেখেছি। একটি দলই বাকি—জামায়াতে ইসলামী, তার প্রতীক দাঁড়িপাল্লা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়ের বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছে, আগামীতেও সেই বার্তা জনগণ দেবে।’
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে দেড় হাজার শহীদ ও ৪০ হাজার আহতের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।
উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি দেব প্রসাদ মন্ডলের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি আবুল খায়ের, শোভনা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন, শরাফপুর সর্বজনীন পূজা মন্দিরের গোঁসাই সাধু প্রমথ গাইন, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সহসভাপতি হরিদাস মন্ডল, কানাই লাল কর্মকার ও প্রশান্ত কুমার মন্ডল, কোষাধ্যক্ষ গৌতম কুমার মন্ডল, পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার, মাগুরখালী ইউনিয়ন সহসভাপতি সুজিৎ কুমার সরকার, ধামালিয়া ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুন্ডু, রুদাঘয়া ইউনিয়ন সভাপতি বিপ্লব সরকার, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন সভাপতি কার্তিক চন্দ্র সরকার, খর্ণিয়া ইউনিয়ন সভাপতি নারায়ণ রাহা, মাগুরঘোনা ইউনিয়ন সভাপতি বিশ্বনাথ দাস, সাহস ইউনিয়ন সভাপতি তন্ময় মন্ডল, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন সভাপতি নিরঞ্জন রায়, রংপুর ইউনিয়ন সভাপতি তরুন কুমার মন্ডল, শোভনা ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির মহিলা সম্পাদক প্রিয়ংকা মন্ডল, মাগুরখালী ইউনিয়ন সভাপতি প্রদীপ কুমার সরকার, আটলিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অনিমেষ মন্ডল, গুটুদিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মনোরঞ্জন মন্ডল, শরাফপুর ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস, শোভনা ইউনিয়ন সভাপতি স্বদেশ হালদার, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অরুন কুমার আচার্য প্রমুখ।
হিন্দু সম্মেলন ঘিরে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে বর্ণিল মিছিল এসে জমায়েত হয়। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল ডুমুরিয়া সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
হিন্দু সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রথম ভোট দাঁড়িপাল্লার পক্ষে হোক। আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করতে সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
মতুয়া সংঘের সভাপতি সুদীপ্ত কুমার সুন্দর মন্ডল বলেন, ‘আমরা আর সংখ্যালঘু বলে পরিচয় শুনতে চাই না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। স্বাধীনতার পর কোনো সরকার হিন্দুদের দাবিতে কাজ করেনি। এবার প্রমাণ হবে, হিন্দু মানেই একটি নির্দিষ্ট দল নয়।’