জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ‘সম্পৃতীর ঐক্য’ প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের এক দিন আগে জাকসু নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রাতভর অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থিত সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশন ও উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখে এই ঘটনার সমাধানের দাবি জানান।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রিট করেন অমর্ত্য। এরপর আদালতে শুনানি শেষে অমর্ত্য রায় প্রার্থিতা ফিরিয়ে পান। পরবর্তীতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আপিল করা হয় চেম্বার আদালতে। সর্বশেষ তথ্য মতে, অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা চূড়ান্তভাবে বাতিল করেছে চেম্বার জজ আদালত।

নির্বাচনের দুই দিন‌ আগে কেন অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিল করা হলো এবং ব্যালট পেপার ছাপানো‌ হয়েছে কি না, না হলে তার প্রার্থিতা পুনর্বহাল দাবি নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের সামনে জমায়েত হয় ‘সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকেরা। এক পর্যায়ে তারা উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকে সিনেট হলের ভেতরে আলোচনায় বসতে বাধ্য করে।

আলোচনায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আদালতের রায়ের ব্যপারে নিজেদের অপারগতা জানায়। এক পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে উপাচার্য কক্ষ থেকে বের হতে গেলে ওই শিক্ষার্থীরা কক্ষের দরজা বন্ধ করেন। 

সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা দাবি করেন, অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিলের আদেশ অবৈধ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছাকৃত এটি করেছে। তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তারা নিজেরাও সেখান থেকে যাবেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকেও‌ সেখান থেকে যেতে দেবেন না।

আদালতের রায়ের ঘটনায় উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকে অবরুদ্ধ করার কারণ জানতে চাইলে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের এজিএস (নারী) পদপ্রার্থী ফারিয়া জামান নিকি রাইজিংবিডিকে বলেন, “জাবি প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিল করেছে। আদালতের কাছে ‘ব্যালট ছাপা হয়ে গেছে’ এমন মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিল করানো হয়েছে। যদি ব্যালট ছাপানো হয়েই থাকে, তাহলে আজ ডোপ টেস্টে যাদের ফলাফল পজিটিভ এসেছে, তাদের নাম ব্যালট পেপার থেকে বাদ দেওয়া হবে কীভাবে? যদি ব্যালট পেপার ছাপানো না হয়ে থাকে তাহলে আদালতের মাধ্যমে অমর্ত্যের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা প্রশাসনের কাছে সুস্পষ্ট সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত সিনেট ভবন ত্যাগ করবো না।”

এসময় তথ্য সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরা কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে তারা বাঁধা দেন। জানান ভেতরে আলোচনা চলছে। তবে নির্বাচন কমিশন জানায় তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

ফেসবুক লাইভে অবরুদ্ধের খবর পেয়ে রাত ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থী এবং প্রার্থীরা সিনেট ভবনে আসেন। সেখানে তারা প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচনের মাত্র এক দিন আগে এভাবে রাতভর নির্বাচন কমিশনকে অবরুদ্ধ করে রাখা নির্বাচন বানচালের কৌশল কি না। এছাড়া, তারা প্রশ্ন তোলেন, আদালতের রায়কে অমান্য করে আদালতকে‌ অবমাননা করছেন কি না তারা।

তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদাধিকার বলে জাকসুর সভাপতি। তিনি এই পদে থেকে নির্বাচন কমিশনের কোনো মিটিং উপস্থিত থাকতে পারেন না।

এসময় জাকসু নির্বাচনে ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেল থেকে জিএস পদপ্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম উপস্থিত হন। অন্যান্যদের মতো তিনিও নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি অমর্ত্যের প্রার্থীতা বাতিলের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান বলেন, “এই ঘটনাকে নির্বাচনকে বানচালের ষড়যন্ত্র মনে করে আমরা এখানে ছুটে এসেছি। নির্বাচনের মাত্র এক দিন আগে রাতভর উপাচার্য এবং নির্বাচন কমিশনকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। জাকসু বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্রকে শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করবে।”

পরবর্তীতে ভোর ৫টার দিকে ‘সম্পৃতীর ঐক্য’ প্যানেল থেকে জিএস পদপ্রার্থী শরণ এহসান বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে আরো দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি। আমরা চাই, বেলা ১১টার মধ্যে আমাদেরকে একটা সিদ্ধান্ত জানানো হোক।”

এরপর ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ সবাই সিনেট ভবন ত্যাগ করেন এবং যার যার হলে ফিরে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “এটা আদালতের রায়। চাইলেই তো আমরা পরিবর্তন করে ফেলতে পারি না। তবে আমি চাই সমস্যার সমাধান হোক। কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ চাই।”

প্রার্থিতা বাতিলের কারণ 
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আট দিন পর গত শনিবার নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র অমর্ত্য জাকসু গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা অনুযায়ী ভোটার ও প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য। এজন্য তার নাম তালিকা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

গত রবিবার অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও জাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। ব্যারিস্টার সারা হোসাইন তার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ই-মেইলের মাধ্যমে এ নোটিশ পাঠান।

নোটিশে বলা হয়, জাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা অনুযায়ী প্রার্থিতা বাতিল বেআইনি ও স্বেচ্ছাচারী। এটি ন্যায়বিচারের নীতি এবং সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। নোটিশে আরও বলা হয়, ‘১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রার্থিতা বহাল করতে হবে। অন্যথায়, এটি ধরে নেওয়া হবে যে ন্যায়বিচার প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে এবং সে ক্ষেত্রে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে।’

নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের বক্তব্য

নির্বাচন কমিশনের সূত্র জানায়, ১৭ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর ২৫ আগস্ট খসড়া প্রার্থী তালিকা এবং ২৯ আগস্ট চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত তালিকায় অমর্ত্য রায়ের নাম থাকলেও সাত দিন পর তা বাতিল করা হয়।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একে এম রাশিদুল আলম বলেন, “সিন্ডিকেট থেকে জানানো হয়েছে অমর্ত্য নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। জাকসু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হতে পারেন না। তাই তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।”

রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, “সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে অমর্ত্য রায় অনিয়মিত শিক্ষার্থী। তাই তার প্রার্থিতা পুনর্বহালের সুযোগ নেই।”

ঢাকা/আহসান হাবীব/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অমর ত য র য় র প র র থ ত অমর ত য র প র র থ ত র উপ চ র য পদপ র র থ স ন ট ভবন ব ত ল কর প রক শ ন বল ন আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় বিএনপি নেতার অফিসে বোমা-গুলি, শিক্ষক নিহত

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) আইটি গেট সংলগ্ন বিএনপি নেতার দলীয় কার্যালয়ে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ইমদাদুল নামে এক শিক্ষক নিহত হয়েছেন। যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মামুন শেখ (৪৫) ও মিজানুর রহমান নামে দুই ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

রবিবার (২ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করে আড়ংঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ খায়রুল বাশার।

আরো পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের হামলা: গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু

নবীনগরে গুলিবিদ্ধ ৩

তিনি বলেন, ‍“ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। তার ভেতর ভুসি রাখা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এর ভেতরেই বোমা নিয়ে আসা হয়েছিল।” পেশাদার কিলারের সম্পৃক্তা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন ওসি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৯টার দিকে বিএনপি নেতা মামুন শেখ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে অফিসে বসেছিলেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা অফিস লক্ষ্য করে পরপর দুইটি বোমা ও চার রাউন্ড গুলি ছুড়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। পরে নেতাকর্মী ও স্বজনরা গুরুতর আহত মামুনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

খানজাহান আলী থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, “যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন শেখকে সন্ত্রাসীরা গুলি করেছে। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মীর শওকত হোসেন হিট্টু বলেন, “ঘটনার সময় আমি ফুলবাড়িগেটে ছিলাম। শুনেছি, আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনকে সন্ত্রাসীরা গুলি করেছে। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ