জাকসু নির্বাচন: ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ভিসি
Published: 10th, September 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ‘সম্পৃতীর ঐক্য’ প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের এক দিন আগে জাকসু নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রাতভর অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থিত সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশন ও উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখে এই ঘটনার সমাধানের দাবি জানান।
শিক্ষার্থীরা জানান, প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রিট করেন অমর্ত্য। এরপর আদালতে শুনানি শেষে অমর্ত্য রায় প্রার্থিতা ফিরিয়ে পান। পরবর্তীতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আপিল করা হয় চেম্বার আদালতে। সর্বশেষ তথ্য মতে, অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা চূড়ান্তভাবে বাতিল করেছে চেম্বার জজ আদালত।
নির্বাচনের দুই দিন আগে কেন অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিল করা হলো এবং ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে কি না, না হলে তার প্রার্থিতা পুনর্বহাল দাবি নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের সামনে জমায়েত হয় ‘সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকেরা। এক পর্যায়ে তারা উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকে সিনেট হলের ভেতরে আলোচনায় বসতে বাধ্য করে।
আলোচনায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আদালতের রায়ের ব্যপারে নিজেদের অপারগতা জানায়। এক পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে উপাচার্য কক্ষ থেকে বের হতে গেলে ওই শিক্ষার্থীরা কক্ষের দরজা বন্ধ করেন।
সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা দাবি করেন, অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিলের আদেশ অবৈধ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছাকৃত এটি করেছে। তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তারা নিজেরাও সেখান থেকে যাবেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকেও সেখান থেকে যেতে দেবেন না।
আদালতের রায়ের ঘটনায় উপাচার্য ও নির্বাচন কমিশনকে অবরুদ্ধ করার কারণ জানতে চাইলে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের এজিএস (নারী) পদপ্রার্থী ফারিয়া জামান নিকি রাইজিংবিডিকে বলেন, “জাবি প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিল করেছে। আদালতের কাছে ‘ব্যালট ছাপা হয়ে গেছে’ এমন মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে অমর্ত্যের প্রার্থিতা বাতিল করানো হয়েছে। যদি ব্যালট ছাপানো হয়েই থাকে, তাহলে আজ ডোপ টেস্টে যাদের ফলাফল পজিটিভ এসেছে, তাদের নাম ব্যালট পেপার থেকে বাদ দেওয়া হবে কীভাবে? যদি ব্যালট পেপার ছাপানো না হয়ে থাকে তাহলে আদালতের মাধ্যমে অমর্ত্যের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা প্রশাসনের কাছে সুস্পষ্ট সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত সিনেট ভবন ত্যাগ করবো না।”
এসময় তথ্য সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরা কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে তারা বাঁধা দেন। জানান ভেতরে আলোচনা চলছে। তবে নির্বাচন কমিশন জানায় তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
ফেসবুক লাইভে অবরুদ্ধের খবর পেয়ে রাত ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থী এবং প্রার্থীরা সিনেট ভবনে আসেন। সেখানে তারা প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচনের মাত্র এক দিন আগে এভাবে রাতভর নির্বাচন কমিশনকে অবরুদ্ধ করে রাখা নির্বাচন বানচালের কৌশল কি না। এছাড়া, তারা প্রশ্ন তোলেন, আদালতের রায়কে অমান্য করে আদালতকে অবমাননা করছেন কি না তারা।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদাধিকার বলে জাকসুর সভাপতি। তিনি এই পদে থেকে নির্বাচন কমিশনের কোনো মিটিং উপস্থিত থাকতে পারেন না।
এসময় জাকসু নির্বাচনে ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেল থেকে জিএস পদপ্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম উপস্থিত হন। অন্যান্যদের মতো তিনিও নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি অমর্ত্যের প্রার্থীতা বাতিলের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান বলেন, “এই ঘটনাকে নির্বাচনকে বানচালের ষড়যন্ত্র মনে করে আমরা এখানে ছুটে এসেছি। নির্বাচনের মাত্র এক দিন আগে রাতভর উপাচার্য এবং নির্বাচন কমিশনকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। জাকসু বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্রকে শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করবে।”
পরবর্তীতে ভোর ৫টার দিকে ‘সম্পৃতীর ঐক্য’ প্যানেল থেকে জিএস পদপ্রার্থী শরণ এহসান বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে আরো দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি। আমরা চাই, বেলা ১১টার মধ্যে আমাদেরকে একটা সিদ্ধান্ত জানানো হোক।”
এরপর ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ সবাই সিনেট ভবন ত্যাগ করেন এবং যার যার হলে ফিরে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “এটা আদালতের রায়। চাইলেই তো আমরা পরিবর্তন করে ফেলতে পারি না। তবে আমি চাই সমস্যার সমাধান হোক। কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ চাই।”
প্রার্থিতা বাতিলের কারণ
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আট দিন পর গত শনিবার নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র অমর্ত্য জাকসু গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা অনুযায়ী ভোটার ও প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য। এজন্য তার নাম তালিকা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গত রবিবার অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও জাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। ব্যারিস্টার সারা হোসাইন তার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ই-মেইলের মাধ্যমে এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়, জাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা অনুযায়ী প্রার্থিতা বাতিল বেআইনি ও স্বেচ্ছাচারী। এটি ন্যায়বিচারের নীতি এবং সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। নোটিশে আরও বলা হয়, ‘১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রার্থিতা বহাল করতে হবে। অন্যথায়, এটি ধরে নেওয়া হবে যে ন্যায়বিচার প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে এবং সে ক্ষেত্রে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে।’
নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের বক্তব্য
নির্বাচন কমিশনের সূত্র জানায়, ১৭ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর ২৫ আগস্ট খসড়া প্রার্থী তালিকা এবং ২৯ আগস্ট চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত তালিকায় অমর্ত্য রায়ের নাম থাকলেও সাত দিন পর তা বাতিল করা হয়।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একে এম রাশিদুল আলম বলেন, “সিন্ডিকেট থেকে জানানো হয়েছে অমর্ত্য নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। জাকসু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হতে পারেন না। তাই তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।”
রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, “সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে অমর্ত্য রায় অনিয়মিত শিক্ষার্থী। তাই তার প্রার্থিতা পুনর্বহালের সুযোগ নেই।”
ঢাকা/আহসান হাবীব/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অমর ত য র য় র প র র থ ত অমর ত য র প র র থ ত র উপ চ র য পদপ র র থ স ন ট ভবন ব ত ল কর প রক শ ন বল ন আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ
চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।
এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”
তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”
এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।
অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।
ঢাকা/অমরেশ/এস