দে‌শের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন হলে দেশের সংকট আরো বাড়বে মন্তব‌্য ক‌রে এ অবস্থায় সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব কি না তা নি‌য়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে হাওলাদার টাওয়ারে জাতীয় পার্টির যৌথ সভায় সভাপতির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী স‌রকার‌কে উদ্দেশ‌্য ক‌রে তিনি এই প্রশ্ন রা‌খেন।

আরো পড়ুন:

সরকারপ্রধান পালানোর পথ পাবে না: কাজী মামুন

দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্র চল‌ছে: আনিসুল 

আনিস ব‌লেন, “দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, লোডশেডিং, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মামলা বাণিজ্য, মব সন্ত্রাস চলছে। এর মধ্যে  অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব কি না। তা নি‌য়ে এখনই সরকারকে ভাবতে হবে, না হ‌লে প‌রিণ‌তি ভয়াবহ হ‌তে পা‌রে।”

তি‌নি ব‌লেন, “সরকার বলছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। জাতীয় পার্টিও নির্বাচন চায়, কিন্তু তার আগে দেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমান দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজমান তার মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হলে দেশের সংকট আরো বাড়বে।”

দেশে এখনো মামলা বাণিজ্য চলছে অভি‌যোগ ক‌রে দল‌টির চেয়ারম‌্যান ব‌লেন, “এখনো নতুন করে বাণিজ্যের জন্য  মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এই মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য সরকার নতুন আইন করেছে। সরকার বলেছে, দ্রুত তদন্ত করে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দিয়ে নিরাপরাধ ব্যক্তিদের মিথ্যা মামলা থেকে রেহায় দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো সেই নতুন আইনের কার্যকারিতা দেখছি না।”

“যারা নির্বাচন করবে তাদের নামে যদি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়, তারা কিভাবে এলাকায় গিয়ে প্রচারণা চালাবে। সরকার এটা নিয়ে কথা বলছে না।”

জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিজেদের পক্ষে থাকবে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “যথাযথ নিয়ম ও আইনি প্রক্রিয়া মেনে আমরা কাউন্সিল সম্পন্ন করেছি। ফলে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল আমাদের কাছে থাকবে।”

‘ডাকসু থে‌কে শিক্ষা নি‌তে হ‌বে’
ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্যানেলে বিজয় হওয়ায় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “এই নির্বাচন থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বড় দলের অনেক কর্মী থাকতে পারে, কিন্তু জনসমর্থন না থাকলে নির্বাচনে কি ফল হয় সেটা ডাকসুতে আমরা প্রমাণ পেয়েছি।”

তি‌নি ব‌লেন, “ডাকসুতে মানুষের ভালোবাসার বিজয় হয়েছে। সঠিক রণকৌশল, কঠোর  পরিশ্রম, পরিবর্তন ও বিবর্তনের পক্ষে ছাত্ররা রায় দিয়েছে। আমরা এ রায়কে সম্মান করি। ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল এবং গত বছর ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বা জুলাই বিপ্লব থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সন্ত্রাস চাঁদাবা‌জি আর অহংকার দম্ভ করলে কিভাবে পতন হয়, তার ফলাফল ডাকসু নির্বাচন এবং জুলাই বিপ্লব আমাদেরকে শিখিয়ে গেছে। এ থে‌কে শিক্ষা নি‌তে হ‌বে।”

৩৫ বছর জাপা রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে উল্লেখ ক‌রে হাওলাদার বলেন, “কেউ আমাদের বন্ধু ছিল না। জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতন আমরা সহ্য করেছি। হয়তো রাজনৈতিক কৌশলের কারণে বিভিন্ন সময় কোন না কোন দলের সাথে আমাদের থাক‌তে হ‌য়ে‌ছে। আগামী দিনেও হতে পারে। কিন্তু তাই ব‌লে আমরা আদর্শ বি‌লিন ক‌রি‌নি।”

হাওলাদার বলেন, “লাঙ্গল যেকোনো একজন ব্যক্তির কাছে নিরাপদ নয়। জি এম কাদের পল্লীবন্ধুর ভাই সূত্রে দলের চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু তিনি একদিনের জন্যও কারাগারে যাননি।  একটা বড় মিছিল, সমাবেশ করতে পারেনি। আমরা সকল নিয়ম কানুন মেনে সম্মেলন করেছি এবং সার্বিক বিচার বিবেচনায় জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গল আমাদের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে আমাদের পার্টির কাছে থাকবে।”

জাতীয় পা‌র্টি কেন্দ্রীয় ক‌মি‌টি, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দ‌ক্ষি‌ণের এই যৌথ সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, সিনিয়র কো—চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদ, সাহিদুর রহমান টেপা, নাসরিন জাহান রতনা, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, নাজমা আকতার, জসিম উদ্দিন ভূইয়া, আরিফুর রহমান খান, মোবারক হোসেন আজাদ, ফখরুল আহসান শাহজাদা, বেলাল হোসেন, অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, সরদার শাহজাহান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইলিয়াস উদ্দিন, ইয়াহ ইয়া চৌধুরী, শরফুদ্দিন আহমেদ শিপু, জামাল রানা, সেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী, আলমগীর হোসেন, আমান উল্লাহ আমান।

উপ‌স্থিত ছি‌লেন থানা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে মাসুম, শরিফ, মো.

রাজু, আসাদ খান, আব্দুস সাত্তার, হারুন আর রশিদ, শেখ আলমগীর হোসেন, নিগার সুলতানা রানী, নাসির উদ্দিন সরকার, মিজানুর রহমান দুলাল, আনোয়ার হোসেন তোতা, আনোয়ার হাওলাদার, মাসুক রহমান, এস এম আল জুবায়ের, রেজাউল করিম, গোলাম মোস্তফা, এস এম আমিনুল হক সেলিম, তাসলিমা আকবর রুনা, শাহনাজ পারভীন, নাজমুল খান, মোখলেছুর রহমান বস্তু, কাজী জামাল, এস এম হাসেম, আমিনুল হক সাঈদুল, সাইফুল ইসলাম শোভন, মো. ওয়াহিদুর রহমান, সালমান, হানিফ নেগাবান, মাহবুবুর রহমান কামাল প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত ল ইসল ম র রহম ন আম দ র ল ঙ গল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।

আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগে

এ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।

সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।

আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ