বলাকইড় বিলে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে রাশি রাশি পদ্মের আভা
Published: 13th, September 2025 GMT
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বলাকইড় বিলের এখন সৌন্দর্যের আভা ছড়াচ্ছে ফুটে থাকা রাশি রাশি পদ্ম। এসব ফুল কেবল বিলই নয়, সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে আশপাশের প্রকৃতিরও। পদ্মের এই সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিনই সেখানে ভিড় করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী।
ইট পাথর আর যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছুটা সময়ের জন্য প্রকৃতির স্বাদ নিতে সৃষ্টি হয় এক মিলন মেলার। সূর্যের আভা ছাড়ানোর শুরু থেকে সন্ধ্যা অবধি পরিবার পরিজন, বন্ধু-বান্ধব আর প্রেমিক-প্রেমিকা ছোট বড় নৌকা নিয়ে ভেসে বেড়ান অপরূপ সৃষ্টি পদ্ম বিলে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বিলবেষ্টিত গ্রাম বলাকইড়। জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ বিল এরইমধ্যে ‘পদ্মবিল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯৮৮ সালে বন্যার পর থেকে বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে থাকে।
এসময় পুরো বিল গোলাপী আর সাদা রঙের পদ্মে ভরে ওঠে। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে প্রতিবছর দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বলাকইড় পদ্ম বিলে গিয়ে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি গোপালগঞ্জের বলাকইড় পদ্মবিল। জলজ ফুলের রানী পদ্মে এখন ঢাকা চারিদিক। সূর্য উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলজ ফুলের রানী একেকটা পদ্মের কলি ভেদ করে পাপড়ি মেলে নিজের সৌন্দর্যের জানান দেয়। প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্য সবটুকু ঢেলে দিয়েছে বাতাসের তালে তালে দোল খাওয়া পদ্ম ফুলের পাতায় পাতায়। যতদূর চোখ যায় গোলাপী আর সাদা রঙের পদ্ম ফুল ৬৪টি পাপড়ি মেলে যেন স্বাগত জানায় প্রকৃতি প্রেমীদের।
পদ্মা পাতার উপর জলকণার খেলার সাথে দেখা মিলবে সোনালী বর্ণের ব্যাঙয়ের লাফালাফি, ঘাস ফড়িংয়ের ওড়াউড়ি আর জল ঢোঁড়ার এঁকেবেঁকে চলাচল।
পদ্ম ফুলের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার-পরিজন আর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকায় ঘুরে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন দর্শনার্থীরা। কিছুটা সময়ের জন্য এ যেন অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়া। কেউবা নৌকায় ঘুরে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, আবার কেউ ক্যামেরায় বন্দি করছেন স্মৃতি।
তবে ব্যাপকহারে পদ্ম ফুল ছিঁড়ে নেওয়ায় প্রতি বছরই কমছে পদ্মের সংখ্যা। ফলে প্রতিনিয়ত সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিলটি। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা এ বিলে থেকে পদ্ম ফুল না ছেঁড়ার আহ্বান জানিয়েছে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণসহ এখানে মৌসুমী পর্যটনকেন্দ্রে গড়ে তোলার দাবি জানান তারা।
জুলাই-আগস্টে শুরু হয় পদ্মফুল ফোটা, থাকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত। বছরের ছয় মাস এ বিলে অন্যান্য ফসল ফলালেও বর্ষা মৌসুমে দর্শনার্থীদের বিলে ঘুরিয়ে আয় রোজগার করছেন স্থানীয়রা। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার দর্শনার্থীদের চাপ তুলনামূলক বেশি হওয়ায় হিমশিম খেতে হয় নৌকার মালিক ও মাঝিদের।
দর্শনার্থী দৃষ্টি বিশ্বাস বলেন, “পরিবার নিয়ে পদ্মবিলে ঘুরতে এসেছি। নৌকায় করে পুরো বিলটা ঘুরলাম। রাশি রাশি পদ্মফুল বিলটাকে পুরো ছেয়ে ফেলেছে। অসাধারণ, অপরূপ দৃশ্য। এমন সৌন্দর্য দেখার জন্য সবাইকে এ বিলে আসা উচিত।”
শিক্ষার্থী অনামিকা পাল বলেন, ‘আমি বান্ধবীদের সাথে পদ্ম বিলে ঘুরতে এসেছি। পদ্ম ফুল দেখে খুব ভাল লেগেছে। এখানে না এলে বোঝাই যেতো না আমাদের প্রকৃতি এত সুন্দর! তবে ভোর বেলা না এসে বিকালে এলে পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য একটু বেশিই উপভোগ করা যায়।”
দর্শনার্থী লাবনী রায় ও ফয়সাল আলম বলেন, “এখানে এলে পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। কিন্তু অনেকেই একানে ঘুরতে এসে পদ্ম ফুল ছিঁড়ে নিচ্ছেন। এতে পদ্মের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আমরা চাই এখানে যারা আসেন তারা যেন পদ্মফুল ছিঁড়তে না পারেন সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”
পদ্মবিল পাড়ের বাসিন্দা ও নৌকার মালিক সাইফুল বেগ বলেন, “বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার এখানে প্রচুর দর্শনার্থী পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন। ছুটির দিনগুলো নৌকার সংকট তৈরি হয়। তারপরও আমরা সবাইকে চেষ্টা করি ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য। দর্শনার্থীদের ঘুরিয়ে যে অর্থ উপার্জন করছি, তা দিয়িই আমাদের সংসার চলছে।”
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, “পদ্মবিল এলাকা ঘিরে একটি মৌসুমী পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা রাখা হবে। যাতে পর্যটকেরা এখানে এলে সহজেই পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।”
ঢাকা/বাদল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র স ন দর য পদ ম ফ ল র স ন দর য র গ প লগঞ জ প রক ত র পদ ম র পর ব র র জন য করছ ন অপর প
এছাড়াও পড়ুন:
ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।
ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।
আরো পড়ুন:
আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য
আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।
যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।
লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।
বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।
ঢাকা/আমিনুল