কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগকে কেন্দ্র করে মাইকে ঘোষণা দিয়ে চারটি মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। 

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে এ হামলা হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) মো.

নাজির আহমেদ খান এবং হোমনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ‘বেমজা মহসিন’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে বুধবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় লোকজন থানার সামনে জড়ো হয়ে মহসিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি শান্ত করেন।

সেদিন দুপুরে পুলিশ মহসিনকে গ্রেপ্তার করে। সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনার হোমনা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে মহসিনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে মহসিনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা মাইকে ঘোষণা দিয়ে আসাদপুর গ্রামে হামলা চালায়। মহসিনের দাদা কফিল উদ্দিন শাহর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি মাজারসহ চারটি মাজারে হামলা চালানো হয়। অন্য মাজারগুলো হলো—কালু শাহ, হাওয়ালী শাহ (বাবুল) ও আবদু শাহ মাজার। পরে চারটি মাজারেই আগুন ধরিয়ে দেন তারা। মহসিনের বাড়িতে ভাঙচুরের পর সেখানেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

হোমনার ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, বুধবারের ঘটনার কারণে জনতার মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে বিক্ষুব্ধরা মাজারে হামলা চালায়।

হোমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট দেওয়ায় মহসিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবু, উত্তেজিত জনতা মাজারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।

হোমনা উপজেলা ইসলামী ফ্রন্টের সেক্রেটারি সফিক রানা ও ইসলামী যুবসেনার নেতা শরীফুল ইসলাম বলেছেন, মহসিন দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্ট দিচ্ছিলেন। তার ফাঁসি দাবি করছি।

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এসপি নাজির আহমেদ খান সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, “ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার পর পুলিশ দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তারপরও যারা আইন হাতে তুলে নিয়ে মাজারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদেরকে শনাক্ত করা হয়েছে। আইনের আওতায় আনা হবে।’

তিনি জানান, ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ঢাকা/রুবেল/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মহস ন র ফ সব ক উপজ ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি